শিরোনাম :
পালিত হলো বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এর মৃত্যুবার্ষিকী
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করলো ঢাকা ক্রেডিট পরিবার ও ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন।
১৪ নভেম্বর, তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চের কবরাস্থানে ফাদার ইয়াং-এর সমাধীতে পুষ্পস্তবক অর্পন এবং প্রার্থনার মাধ্যমে ফাদার ইয়াংকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর ঢাকা ক্রেডিটের বিকে গুড কনফারেন্স হলে খ্রিষ্টাযাগ এবং এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিষ্টাযাগ উৎসর্গ করেন জন ভিয়ানী হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ফাদার লিন্টু সি. কস্তা।

এরপর ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট মাইকেল জন গমেজের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মঞ্জু মারীয়া পালমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ওয়াইএমসিএ’র প্রেসিডেন্ট মার্সিয়া মিলি গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর, ক্রেডিট ও সুপারভাইজরি কমিটির সদস্যবৃন্দ, ঢাকা ক্রেডিটের কর্মী এবং সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

এ দিন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট মাইকেল জন গমেজ বলেন, ‘আজকে আমরা বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছি। সুদূর আমেরিকা থেকে এসে তিনি বাংলাদেশের মানুষের কথা ভেবেছেন। ৭০ বছর আগে তিনি মাত্র ৫০ জন মানুষকে একত্র করে মাত্র ২৫ টাকার মূলধন দিয়ে ঢাকা ক্রেডিট শুরু করেছিলেন। আজ প্রায় ৪৭ হাজার সদস্য এবং ১৫শ কোটি টাকারও বেশি মূলধন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।’
‘আমরা যদি ফাদার ইয়াং-এর কাজ এবং আদর্শ ধারণ এবং বহন করি, তাহলে আমরা অনেক দূর যেতে পারবো। আজ আমরা ফাদার ইয়াং-এর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি, সেই সাথে বিশ্বাস করি তিনি পরলোকে ঈশ্বরের কাছে চিরশান্তিতে রয়েছেন।’

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘আমরা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং-এর উপর কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ জন্মের শুরুতে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন কাবুলীয়ালা ও মহাজনরা চড়া সুদে দরিদ্র মানুষদের টাকা দিত। এতে তারা ঋণের জালে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি তখন তৎকালীন আর্চবিশপ লরেন্স এল. গ্রেণার অনুধাবন করে ফাদার ইয়াংকে ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে পড়াশোনার জন্য কানাডায় প্রেরণ করেন। ফাদার ইয়াং কানাডায় পড়াশোনা করে দেশে এসে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন। তার সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে আজ অসংখ্য ক্রেডিট ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে, আর খ্রিষ্টান সমাজসহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ অসংখ্য মানুষ নিজেদের উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্রেডিট ইউনিয়ন মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে, আমরা যেন ঋণ নিয়ে নিজেদের উন্নয় করি, যেন ঋণখেলাপী না হই। আমাদের আর্থিক সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সমাজে যারা নেতৃত্ব দেন, তারাও যেন সততার সাথে নেতৃত্ব দেন। আর যারা পেশাজীবী আছেন, তারা যেন ভালো করে ক্রেডিট নিয়ন নিয়ে জানতে পারেন, তাহলেই ভাল সেবা দিতে পারবে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের ফাদার ইয়াং একজন মিশনারী হয়ে বাণী প্রচার করতে এই দেশে এসেছিলেন। শুধু খ্রিষ্টযাগ দিয়েই বাণী প্রচার হয় না, দুঃখক্লিষ্ট মানুষের সেবা দিয়েও খ্রিষ্টের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায়। ফাদার ইয়াং এই দেশের দুঃখক্লিষ্ট মানুষদের অভাব ও দারিদ্রতা থেকে মুক্ত করতে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি খ্রিষ্টীয় সেবার উদাহরণ সৃষ্টি করে এই দেশের মানুষদের জন্য ক্রেডিট ইউনিয়নের যাত্রা শুরু করে উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছেন। খ্রিষ্টের বাণী তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার কাছেই প্রচার করেছেন, এই দেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই দেশে যারাই ক্রেডিট ইউনিয়ন করতে যায়, সবাই প্রথমেই ফাদার চার্লস জে. ইয়াংকে স্মরণ করেন।’

‘ফাদার ইয়াংকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা ক্রেডিট ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। যে লক্ষ্য নিয়ে ফাউন্ডেশন শুরু হয়েছে, আমরা যেন সেই লক্ষেই এগিয়ে যাই। ফাদার ইয়াংকে সকলের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের তার উপর গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং ফাউন্ডেশন যেন সেই দিকে গুরুত্ব দেয়। ফাদার ইয়াং সারাদেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তিনি তো রাষ্ট্র স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব হওয়া উচিত। ফাউন্ডেশন যেন সেই উদ্যোগ নেয়। আজ এই দিনে আমরা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সাথে তাকে স্মরণ করছি’ বলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গমেজ।

এ ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের সিইও জোনাস গমেজ। এদিন ঢাকা ক্রেডিট এমপ্লয়ীজ ওয়েলফেয়ার ফাদার ইয়াং-এর সমাধীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শেষে সমাপনী প্রার্থনা করেন ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান উমা ম্যাগডেলিন গমেজ।
ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে, আমেরিকাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে (বর্তমানে তেজগাঁও) দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা বা ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র ৫০ জন সদস্য ও ২৫ টাকা মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠানটি আজ ৪৭ হাজার সদস্যের প্রায় ১৫শ কোটি টাকার মূলধনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই মহান ব্যক্তি ১৪ নভেম্বর, ১৯৮৮ সালে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন।































































