ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ আজ মির্জাপুর গণহত্যা দিবস

আজ মির্জাপুর গণহত্যা দিবস

0
469

মির্জাপুর গণহত্যা দিবস আজ ৭ মে (মঙ্গলবার)। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মির্জাপুরে গণহত্যা চালিয়ে কুমুদিনী হাসপাতাল ও ভারতেশ্বরী হোমসের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৬৯ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করে। দিবসটি উপলক্ষে কুমুদিনী কতৃপক্ষ এবং মির্জাপুর গ্রামবাসী শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- স্মরণসভা, প্রার্থনা, গীতাপাঠ, কীর্তন এবং প্রসাদ বিতরণ। এদিকে শহীদদের স্মরণে মির্জাপুর গ্রামবাসীর উদ্যোগে রোববার থেকে রণদা নাট মন্দিরে তিন দিনব্যাপী নামযজ্ঞ ও লীলা কীর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।

মির্জাপুর গ্রামবাসী জানান, ২৫ মার্চের কালোরাতের পর ৩ এপ্রিল রাজধানীর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের গোড়ান সাটিয়াচড়া নামক স্থানে। সেই যুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী টার্গেট করে মির্জাপুরকে। একাত্তরের ৭ মে স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার মৌলানা আব্দুল অদুদের পরিকল্পনায় ও সহযোগিতায় শতাধিক পাক সেনা দুইটি কনভয় যোগে কুমুদিনী হাসপাতাল গেটের সামনে নামে।

পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন আইয়ুবের নেতৃত্বে পাক সেনারা প্রথমে কুমুদিনী হাসপাতাল ও ভারতেশ্বরী হোমসে প্রবেশ করে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। পরে তারা লৌহজং নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো পার হয়ে মির্জাপুর গ্রামটি ঘিরে ফেলে। প্রথমেই ঘাতকরা ব্যবসায়ী কমল সাহাকে গুলি করে হত্যা করে। এরপরেই মির্জাপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কৃষ্ণ সাহার ভাই সুবাস সাহা ও পিতা মধুসুদন সাহাকে বসতঘরের ভেতর গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। এভাবেই একে একে গ্রামটি থেকে ৩১ জন নিরীহ বাঙালিকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। এরপর চলে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ। এদিন ছিল শুক্রবার মির্জাপুরের হাটের দিন। পাক বাহিনীর তাণ্ডবের খবর শুনে মির্জাপুর হাটটি জনশূন্য হয়ে পড়ে। পরদিন নিহতদের মরদেহ আন্ধরা নদীর পাড়ে গণকবর দেয় মির্জাপুর থানার পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে মির্জাপুরে না পেয়ে পাকসেনারা ওই দিনই তার নারায়ণগঞ্জের বাসায় হানা দেয়। সেখান থেকে রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবি এবং কর্মচারী গৌরগোপাল সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাক সেনারা মির্জাপুরসহ আশপাশের ৭টি গ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে ৬৯ জন বাঙালিকে হত্যা করে। এর মধ্যে মির্জাপুর গ্রামের ৩৫ জন, আন্ধরার ৩ জন, সরিষাদাইড়ের ৮ জন, দুর্গাপুরের ৪ জন, কান্ঠালিয়ার ৩ জন, পোস্টকামুরীর ৪ জন ও বাইমহাটি গ্রামের ২ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি ঘাতকরা।

বাড়িতে আওয়ামী লীগের অফিস থাকায় এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলায় মির্জাপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে মাজম আলী শিকদারকে জনসম্মুক্ষে গুলি করে হত্যা করে ঘাতক বাহিনী। এছাড়া আওয়ামী লীগ করায় ঘরের ভেতর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের বৃদ্ধ বাবা জয়নাল সরকারকে।

এদিকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় রাজাকার মৌলানা আব্দুল অদুদের ছেলে রাজাকার মাহাবুর কারাগারে রয়েছে এবং বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে। যেকোনো সময় তার বিচারের রায় হবে বলে জানা গেছে।

শহীদ কমল সাহার ভাতিজা সুজিৎ সাহা বলেন, আমার কাকাসহ মির্জাপুর গ্রামের ৩৫ জন মানুষ শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মরণে গ্রামটিতে অদ্যাবধি কোনো স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়নি।

শহীদ মাজম আলীর ছেলে মির্জাপুর পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আলী হোসেন শিকদার বলেন, বাসায় আওয়ামী লীগের অফিস থাকায় এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ না বলায় আমার বাবাকে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবা দেশের জন্য প্রাণ দিলেও তার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করা হয়নি।