ঢাকা ,
বার : শনিবার
তারিখ : ০৪ মে ২০২৪
বাংলা : ২১ বৈশাখ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

“চুপ কর চুপ কর”

0
749

|| এ্যাগনেস আনন্দ ম্যাকফিল্ড ||

তখন সে উচ্চস্বরে কহিল, হে যীশু, দায়ুদ-সন্ত্নান, আমার প্রতি দয়া করুন।

যাহারা আগে আগে যাইতেছিল, তাহারা চুপ চুপ বলিয়া তাহাকে ধমক দিল।

লুক ১৮:৩৮-৪৩পদ।

আলোচ্য বিষয়ের লেখক ডা. সাধু লুক।  এই দৃশ্যে একজন অন্ধ লোকের দৃষ্টিদানের কথা উল্লেখ রয়েছে।  প্রথমেই দেখতে পাই যে, একজন অন্ধ লোককে যীশু কিভাবে  দৃষ্টি দান করেনএখানেএকটা জায়গার কথা বলা হয়েছে। সেই জায়গাটির সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া যাক্ । জায়গাটি যেরিখো শহরের খুব কাছেই।  যেরিখো হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীণতম অন্যতম একটি শহর।  এটা  দেখতে অদ্ভুত  একটি শহর।  ঈশ্বরের এক অপূর্ব  সৃষ্টি। পাহড়ের খোপ খোপ ভাজ।  পাথর আর পাহাড়ের দেশ। গরমের দিনে  প্রচন্ড গরম। কোন গাছপালা নেই, তপ্ত মরুভূমি ।  এখানেই রয়েছে সেই ঐতিহাসিক পর্বত, যা আমি নিজে দেখেও অবাক হয়েছি। যার নাম “প্রলোভণের পাহাড়” (Temptation Mount)।  যেখানে যীশু শয়তান দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছিলেন।

ভিক্ষুকদের অবস্থা-  ভিক্ষুকদের গায়ে নিশ্চয়ই কোন দামী কোন জামা-কাপড়  থাকে না। যতদূর সম্ভব  সব মানুষ এড়িয়ে যায় তাদের।  প্রেক্ষপটটি এখানে  এভাবেই চিত্রায়িত হয়েছে, অনেক লোক সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল।  সব কিছু থেকে আমি যেটা হাইলাইট করতে চাচ্ছি সেটা হল যীশুর প্রতি অন্ধ লোকটির আকুল মিনতী কি ছিল।   ঐ পথটি ধরে বহু  লোকই যাচ্ছিল।  অনেক মানুষের চলাচলের একটা পায়ের শব্দ বুঝা যায়।  আর সেই অন্ধ লোকটিও  পায়ের শব্দ বুঝতে পেরে ব্যাপারটা কি তা জানতে চাইল কি হচ্ছে বা কে যাচ্ছেন?। লোকেরা তাকে বলল যে, নাজারেথের যীশু সেই পথ দিয়ে যাচ্ছেন।  অন্ধ লোকটির বিশ্বাস ছিল যে, যীশু নামের ঐ ব্যক্তিই তাকে সুস্থ করতে পারবেন। গাছ-পালা, পশু-পাখী,  পৃথিবী এবং মানুষ দেখতে কেমন তা দেখার  খুব ইচ্ছা ছিল সেই অন্ধ লোকটির। সম্ভবত: যীশুকেও সেই অন্ধ লোকটি দেখতে চেয়েছিল।  তাইতো যীশু যাচ্ছেন ভেবে  লোকটি  জোরে চিৎকার করে তাঁকে ডাকতে থাকল। বলল-“দাউদ-সন্তান, আমাকে দয়া করুন!” কিন্তু যারা আগে আগে চলছিল, তারা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল। অন্ধ লোকটি আরো জোরে চিৎকার করতে লাগল;“দাউদ-সন্তান, আমাকে দয়া করুন”। তখন যীশু সেখানে দাঁড়িয়ে পড়লেন, আর অন্ধ লোকটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে বললেন।

এখানে বেশ কয়েকটা দৃশ্য আমাদের নজরে পড়ে-

 প্রথমত: অন্ধ লোকটির চিৎকার- টিভিতে বা চারিদিকে প্রায়ই আমরা দেখতে পাই ঘরে বা ফ্যাক্টরীতে আগুন লাগার দৃশ্য। মানুষ চিৎকার করে জানান দেয় আগুন… আগুন…। আস্তে আস্তে বা মিন্ মিন্ করে কেউ বলে না।  শক্তি দিয়েই চিৎকার করতে থাকে। যেন মানুষের কানে যায়।  তবে এখানেও আমরা দেখতে পাই যে, অন্ধ লোকটি চিৎকার করে যীশুকে ডাকছিল। যেন যীশু শুনতে পান। লোকটির এই চিৎকার ছিল হৃদয় থেকে। আর যীশু সেই চিৎকার শুনলেন।

 দ্বিতীয়ত: যীশু দাঁড়িয়ে পড়লেন- যীশুর হৃদয় করুণায় ভরা। তিনিই যিহোবা যিরি (যোগান দাতা), পরিত্রণাকারী, আর তিনিই আমাদের জীবন দাতা। কাফারনাউমে যাইরাসের  মৃত কন্যাকে জীবন দান। বেথানীতে লাজারকে জীবন দান, অন্ধকে দেখার ক্ষমতা, খঞ্জকে চলার ক্ষমতা- এগুলো হলো প্রভুর দয়ার কাজ। এটার অর্থ হলো- আমার, আপনার প্রার্থনা যদি সত্যিকারের হৃদয় থেকে হয় তবেই তিনি শুনেন অর্থ্যাৎ তিনি দাঁড়িয়ে যান। এখানে যদি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলি আমি আপনি কি সত্যিকারের হৃদয় থেকে ঈশ্বরকে ডাকি? আর যদি ডাকি সেখানেই যীশু দাঁড়িয়ে যান। এখন তাঁকে আমাদের দাঁড় করাতে হবে। তিনি যদি দাঁড়িয়ে না যান তবে আমাদের  জীবনে কোন পরিত্রাণ নাই।

তৃতীয়ত: যারা আগে আগে চলছিল।  তাদের মধ্যে একদল হলো ফরীসি ও বিধানাচার্য।   তারা তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল- আমাদের সমাজে দুই ধরনের লোকই দেখা যায়। এক দলের লোক  মানুষকে সাহায্য করে  থাকে- যেভাবে এখানে এক দল বলছিল নাজারেথের যীশু যাচ্ছেন। আরেক দলের লোক হলো ঐ যে যারা বলেছিল, “চুপ কর চুপ কর।” তারা এই প্রকার লোক- যারা মানুষকে শুধু দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করে। যারা একটু বেশি বুদ্ধিমান কম বুদ্ধিমানদের হেয় প্রতিপন্ন এবং যারা বেশি গুণী অন্যদের গুণগুলোকে মূল্যহীন মনে করে।  সাথে সাথে উপরে ওঠার সুযোগটাও বন্ধ করে সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত রাখে। 

আগে আগে বলতে যা বুঝায়-  ফরীসিরা এবং আমাদের সমাজে যারা নিজেদেরকে পন্ডিত মনে করেন। তারা সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল যীশুকে ভালোবাসতে নয় বা তাঁর কোন বাণী শুনতে নয় বরং  তাঁর দোষ ধরতে।  কারণ হলো এরা যিশুকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখত। এরা হলো যীশুর জাতির  অর্থ্যাৎ ইহুদী জাতির ধর্মনেতা। তাদের অন্তরে রয়েছে অধার্মিকতা, অহংকারী, ভন্ডামী। অনুতাপ বলতে এদের কাছে কিছু নেই। যারা নিজেদেরকে সমাজে জ্ঞানী, অনেক টাকার মালিক, সমাজের উচ্চ পর্যায়ের লোক মনে করে থাকে সাধারণত:এরাই অন্যদেরকে ঈশ্বরের কাছে আসতে বাধা দেয়।

চতুর্থ: যারা বলেছিল নাজারেথের যীশু যাচ্ছেন। এই দল হলো তারাই-যারা নিজেদের জন্য নয়। অন্যের উপকারে আসে। অহংকার নেই, কোন ভয় নেই, অধার্মিক নয়, যীশুর প্রতি তাদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস। যেমন বলতে পারি- মাদার তেরেসা। আরেক দিকে  দেখা যায়- একজন পক্ষাগ্রস্ত রোগীকে যারা বহন করে যীশুর কাছে নিয়ে এসেছিল। ঐ  রোগীর সুস্থতা পাওয়া ছিল এই দলের মূল উদ্দেশ্য।

পৃথিবীতে আমরা এখন এই দুই দলের লোকদের মাঝখানে দিব্বি বসবাস করছি। আমাদেরই ভালমত বুঝে-শুনে সিধ্যান্ত নিতে হবে কোন দলের পক্ষ আমি নেব। তাই সবশেষে উল্লেখ করতে চাই। আমাদের বিশ্বাসকে খুব শক্ত করে আকঁড়ে ধরে রাখতে হবে। ঈশ্বরের পথ থেকে যেন কেউ কখনো বিচ্যুত করতে না পারে।  কারণ  বিশ্বাস ঈশ্বরের একটা  অতি মহামূল্যবান  দান।