ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫
বাংলা : ১৩ কার্তিক ১৪৩২
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট ‘আমরা সবাই ক্রেডিট ইউনিয়নকে সহযোগিতা করবো, ক্রেডিট আমাদের সহযোগিতা করবে’ দড়িপাড়ায় অনুষ্ঠিত...

‘আমরা সবাই ক্রেডিট ইউনিয়নকে সহযোগিতা করবো, ক্রেডিট আমাদের সহযোগিতা করবে’ দড়িপাড়ায় অনুষ্ঠিত ঢাকা ক্রেডিটের শিক্ষা সেমিনারে বক্তরা একথা বলেন

0
754

ডিসিনিউজ ।। দড়িপাড়া, কালীগঞ্জ

ঢাকার অদূরে কাজীগঞ্জ উপজেলার দড়িপাড়া সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ক্রেডিটের দড়িপাড়া আঞ্চলিক শিক্ষা সেমিনার।

২০ জুন, বিকালে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজের সঞ্চালনায় এই শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা সেমিনারের শুরুতেই পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ ও প্রার্থনা পরিচালনা করেন সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য মারিয়া ডি’কুনা।

ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ঢাকা ক্রেডিটের সকল কর্মকর্তাকে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেন।

এদিন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, দড়িপাড়া ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত স্টেনিসলাউস গমেজ, ডিকন অমিত গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ম্যানেজার নিপুন সাংমা, দড়িপাড়া প্যারিস কাউন্সিলের ভাইন চেয়ারম্যান স্বপন এস রোজারিও, সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার প্রাইমারী স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রীতি পিউরীফিকেশন, ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা আনন্দ ফিলিপ পালমা,

দড়িপাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড এর কমিশনারসহ অন্যাণ্য অতিথি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাপড়ী দেবি আরেং, বোর্ড অব ডিরেক্টর নিরাপদ হালদার, মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ, শিপন রোজারিও, ডন এ. অধিকারী ও সুমন জেমস কস্তা, সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি সুহৃদ গমেজ, সদস্য মারিয়া ডি’কুনা, পঙ্কজ লরেন্স কস্তা ও মলয় নাথ, ঢাকা ক্রেডিটের সিইও জোনাস গমেজ, চীফ অফিসার স্বাপন রোজারিও ও বিপুল টি গমেজ।

ঢাকা ক্রেডিটের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে মঞ্চে ও মঞ্চের সামনের উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, “আপনারা সদস্য হিসেবে আপনাদের যে দায়িত্ব সেটা সম্পর্কে আপনারা জানবেন। আজ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের অগ্রদূত ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’কে। ৭০ বছর আগে উনি সঞ্চয়ের উপরে জোরা দিতেন এবং প্রয়োজনে উন্নয়ন খাতে ঋণ। কিন্তু বর্তমানে শুধু ঋণ ও সঞ্চয় দিয়ে সমিতি পরিচালনা করা এবং কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি করা যায় না, তাই আমাদের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে প্রায় ১১’শ কর্মী ঢাকা ক্রেডিটের কাজ করছে। সময় পরিবর্তন হচ্ছে, তাই সময়ের সাথে সাথে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিবর্তিত হয়ে আপডেট করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের। আমরা ইতিমধ্যে ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল শুরু করেছি, যেখানে স্বল্প খরচে মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু ও যুবাদের বিষয়ে নজর দিতে হবে। আমাদের বি-সেভার্স ও স্মার্ট-সেভার্স রয়েছে যেখানে ঢাকা ক্রেডিট ছোটবেলা থেকেই শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তীতে যুব বয়সে তারা সরাসরি ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হয়ে যাবে। যুবাদের বিষয় চিন্তা করে ইতিমধ্যে আমরা নার্সিং ইনস্টিটিউট শুরু করেছি, খুব শিঘ্রই মেডিকেল কলেজ শুরু করতে পারবো। আমাদের ছেলে-মেয়ে এখন স্বল্প খরছে নার্স ও ডাক্তার হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। পাশাপাশি অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকা ক্রেডিটের সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে পারছে।’

উপস্থিত বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আপনাদের সন্তানদের দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বেশি বিনিয়োগ করুন। “আমাদের মিশনারী স্কুলেরপড়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অনীহা বরাবরই। কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট এই লক্ষে আমাদের আমাদের সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে ঋণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।

‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঢাকা ক্রেডিট সদস্যদের জন্য কাজ করে। একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পরই ঢাকা ক্রেডিট নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে শিশুটিকে ঢাকা ক্রেডিটের বি-সেভার্সের সদস্য করে নেয় এবং একজন সদস্য মারা যাওয়ার পর অর্থ দিয়ে সৎকারে সহযোগিতা করে মৃত্যুকালীন সময়েও ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে’ বলেন প্রেসিডেন্ট কোড়াইয়া।

ফাদার স্টেনিসলাউস গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা আজকে ক্রেডিটের কার্যক্রমগুলো দেখেছি এবং যেখানে আমাদের সন্তানেরা সুযোগ নিতে পারে। পেশাগত দক্ষতা অর্জনে ঢাকা ক্রেডিট অবদান রেখে যাচ্ছে।”

ফাদার গমেজ বলেন, “আমি মনে করি আমাদের সামর্থ্য আছে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কিন্তু কোথাও না কোথাও সমস্যা রয়ে গেছে। আমাদের পরিবারগুলোকে আরো সচেতন হতে হবে। আমরা উৎসবের জন্য অর্থ বেশি খরচ করি কিন্তু আমাদের প্রডাক্টিভ খাতে অর্থ ব্যয় করতে হবে।”

পরে দেশের এই বৃহত্তম কো-অপারেটিভের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ঢাকা ক্রেডিটের উপর মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন প্রডাক্ট, প্রকল্প, অর্জন এবং সার্বিক চিত্র উপস্থাপনা করেন।

এ সময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সদস্যদের কথা ভাবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সদস্যবান্ধব প্রকল্প ও প্রডাক্ট নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল বর্তমানে পুরোদ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মসংস্থান।’

এই সময়ে সেক্রেটারি উল্লেখ করেন ঢাকা ক্রেডিটের ১২ টি সেবা কেন্দ্র ও ২৬ টি কালেকশন বুথ রয়েছে এবং ঢাকা ক্রেডিটের রয়েছে ৮৬ টি প্রডাক্ট। এছাড়াও তিনি বৃত্তম প্রকল্প ডিভাইন মার্র্সি হাসপাতাল, ডিভাইন মার্সি নার্সিং ইনস্টিটিউট, রিসোর্ট, হোস্টেলসহ বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরেন।

এ সময় তিনি ঢাকা ক্রেডিটে বিভিন্ন প্রকল্পসেবা ও প্রডাক্ট গ্রহণ করে নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য উৎসাহ প্রদান করেন।

তিনি, বিভিন্ন লোন এবং ঢাকা ক্রেডিটের সফলতা সম্পর্কে উপস্থিত সদস্যদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, কালব এবং কাককো দুটি সেন্ট্রাল সমিতি ঢাকা ক্রেডিটের পৃষ্টপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত। একই সাথে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠান হিসেবে ও প্রেসিডেন্টগণ জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায়ী হিসেবে ঘোষিত হন।

সেক্রেটারী ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি সকলের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করেন এবং ঢাকা ক্রেডিটের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করেন।

বিগত বিশ বছর সদস্যরা আমাদের সাথে আছে উল্লেখ করে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের এই যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা ঘটেছে শুধু মাত্র ধারাবাহিক নেতৃত্বে কারণে। আর এই ধারাবাহিক নেতৃত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে আপনাদের সহযোগিতায়। আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুব সমাজ। এই যুব সমাজ হলো আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। আমাদের যুবাদের নেতৃত্ব গুনাবলীসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের বিকাশ ঘটাতে হবে, আর যুবাদের যতœ নিয়ে গড়ে তুলতে হবে।’

একটি মেডিকেল কলেজ হবে সেই উদ্দেশ্য থেকেই আমাদের ডিভাইন মার্সি হাসপতাল তৈরি আমরা করেছি। এই কলেজ ও হাসপতালের মধ্যে দিয়ে আমরা খ্রীষ্টান সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করবো, বলেন রোজারিও

তিনি উপস্থিত সকলকেই সঞ্চয়ের উপর গুরুত্বারোপ করতে অনুরোধ করে বলেন, “আমাদের উচিত যারা নির্বাচিত হয় তাদের সহায়তা করা এবং একই সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা ও কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা।”

‘সমবায়ের মাধ্যমে জীবনমান পরিবর্তন করে উন্নত জীবন গড়ে তোলাই হলো লক্ষ্য। এই পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক, তাহলে সঠিক উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের কেউ করে দিবে না, তাই আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করে নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ধারাবাহিক নেতৃত্ব বজায় রাখতে হবে’ বলেন প্রাক্তন এই প্রেসিডেন্ট

বক্তাগণ বলেন, ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সাহসী ভ‚মিকা নিয়ে কাজ করে। ঢাকা ক্রেডিট যে সফট্ওয়্যার ও অ্যাপ নিয়ে এসেছে, তা বর্তমান সময়ের একটি অনন্য ব্যবস্থাপনা। ঢাকা ক্রেডিট ৫০ হাজার টাকা ঋণ অ্যাপের মাধ্যমেই দেয়, এই ঋণের জন্য কোনো আবেদনের প্রয়োজন নেই। আমাদের এই ডিজিটাল সেবা সকলেরই ব্যবহার করা উচিত। ঢাকা ক্রেডিট হাসপাতাল করেছে, এত উন্নতমানের হাসপাতাল করা সমবায়ের জন্য অনেক সাহসের ব্যাপার, কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট সেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছে।

শুরুতে অনেকেরই শঙ্কা ছিল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কিনা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকা ক্রেডিট হাসপতাল তৈরি করে সেই শঙ্কা দূর করেছে। আমাদের সদস্যদের আরো একটি সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে, আমরা যারা স্বাস্থ্যনিরাপত্তা প্রকল্পের সদস্য সকলেই হাসপাতালে অনেক বড় অংকের চিকিৎসা সহযোগিতা পাবো প্রিমিয়াম অনুসারে।

শিক্ষা সেমিনারে ঢাকা ক্রেডিট ও ডিভাইন মার্সি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়।

ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পংকজ লরেন্স কস্তা’র ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি এই শিক্ষা সেমিনার আয়োজনের সাথে যুক্ত বেশিষ করে উপদেষ্টাগণ, যুবরা সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি মানুষের আস্থার বহির্প্রকাশই আজকের এই শিক্ষা সেমিনার।

সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাপড়ি দেবী আরেং।
তিনি বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ এখানে উপস্থিত হয়ে আপনাদের সমবায়ে যুক্ত হতে, সমবায়ের উন্নয়নের অংশীদার হতে উদ্বুদ্ধ করছেন।

প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডিরেক্টর নিরাপদ হালদার শেষ প্রার্থনার মাধ্যমে দড়িপাড়া আঞ্চলিক শিক্ষা সেমিনারটি সমাপ্ত হয়।