ঢাকা ,
বার : বুধবার
তারিখ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১০ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ টেকসই ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্য সুশাসন: ক্রেডিট ইউনিয়ন ফোরাম

টেকসই ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্য সুশাসন: ক্রেডিট ইউনিয়ন ফোরাম

0
725

জেমস্ আঞ্জুস, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে:

কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ক্রেডিট ইউনিয়ন ফোরাম-২০১৯।

১৩-১৪ সেপ্টেম্বর, সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সী প্যালেস হোটেলে ‘টেকসই ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্য সুশাসন’ মূলসুরে এই ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়।

১২ সেপ্টেম্বর সারা বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারীরা কক্সবাজারে আসেন এবং বিকালে রেজিস্ট্রেশন করেন। পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাল্ব সভাপতি জোনাস ঢাকির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সংসদ সদস্য আশেক  উল্লাহ রফিক, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম।

ফোরামে প্রধান অতিথি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমবায় ভিত্তিক গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমরা সেই লক্ষে এগিয়ে যাচ্ছি। সমবায় প্রতিষ্ঠানের ওপর যে ১৫% করের হার ধার্য করা হয়েছে, তা কমানোর জন্য আমি কাজ করবো।’

এ সময় তিনি সমবায়ে উপবিধিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের ২১ ধারা বাতিলের জন্য তিনি কাজ করবেন বলে অঙ্গিকার করেন।

সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মাত্র তিন মাস ধরে দায়িত্ব পেয়েছি। যেকোনো প্রয়োজনে আমি সমবায়ীদের সঙ্গে রয়েছি এবং থাকবো।’

ফোরামে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ড. এম. এম. আকাশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায়ের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি আলোচনায় বলেন, সারা পৃথিবীতে আর্থিক মন্দায় যখন পুরো অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, তখনও ক্রেডিট ইউনিয়ন ব্যবস্থা সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়েছে। কারণ সমবায়ী প্রতিষ্ঠানে যাঁরা সেবা গ্রহণ করেছেন, তাঁরাই আবার প্রতিষ্ঠানের মালিক।

তিনি সর্তক করে দিয়ে বলেন, সমবায় প্রতিষ্ঠান যদি অতিবৃহৎ ও আমলাতান্ত্রিক হয়ে যায় অথবা তার ভেতরে নেতৃত্বের কোন্দল সৃষ্টি হয় অথবা সরকারি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তার যে স্বাভাবিক যৌথ ক্রিয়াকান্ড তাতে কৃত্রিমভাবে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে সমবায়ের ক্ষতি হতে পারে।

এদিন আকু’র চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এলিনেটা ভি. সানরকে ‘ক্রেডিট ইউনিয়নসমূহের জন্য সুশাসন কাঠামো এবং ক্রেডিট ইউনিয়ন নেতৃত্বের উদ্দেশ্য’ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

তিনি সুশাসন কাঠামোর বিষয়ে বলেন, সমবায় সুশাসনের বাহ্যিক কাঠামোতে আছে সমবায় সমিতি আইন, সমবায় সমিতি বিধিমালা, সুস্থ ব্যবসায়িক চর্চা এবং আভ্যন্তরীণ কাঠামোয় থাকবে ক্রেডিট ইউনিয়নের নিজস্ব উপ-আইন, অনুমোদিত নীতিমালাসমূহ।

‘ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোতে বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার, সম্পদের অপব্যবহার, প্রডাক্ট ও সেবার অপব্যবহার, নীতিমালার অপব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় অপব্যবহার দেখা যায়। এই সকল অপব্যবহারের ফলে ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রতি সদস্যদের আস্থা কমে যায়, ঋণখেলাপী বেড়ে যায়, ফলে সমবায়ে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে নিজেকে সৎ হতে হবে, কারণ যার উপর সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব থাকবে, তিনি যদি অসৎ হন, তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব’ বলেন ভি. সানরকে।

আরো পড়ুন: পবিত্র ক্রুশ সংঘে প্রতিপালিকার পর্ব উদযাপন

নেতৃত্ব বিষয়ে আলোচনায় তিনি প্রশ্ন রাখে, অনেকেই ২০ বা ৩০ বছরের উপর সমবায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন- কেন দিচ্ছেন? আপনারা তো বেতন পান না। এর জবাবে তিনিই প্রাসঙ্গিক বক্তব্য রেখে বলেন, নিশ্চয়ই আপনারা সমবায়কে ভালবাসেন। নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলো হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নতুন নতুন অ্যাপ ও ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা কার্যক্রম ইত্যাদি। অপরদিকে ভেতরের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- যাচাই-বাছাই বিহীন ঋণ কার্যক্রমের ফলে অনিয়ন্ত্রিত ঋণখেলাপী, মূলধন ঘাটতি, সমবায় সমিতিগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। আমাদের সব সময় নতুন কিছু করতে হবে।

তিনি ভিডিও চিত্রে আইসবার্গ মেটাফর, ই আই মডেল এবং জন ম্যাক্সওয়েলের পাঁচ স্তরের নেতৃত্ব বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন শুরুতে বক্তব্য রাখেন সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক (প্রশাসন) মুহাম্মদ গালিব খান।

‘ক্রেডিট ইউনিয়নে সুশাসন নিশ্চিতকরণে সমবায় অধিদপ্তরের ভূমিকা’ আলোচনায় তিনি বলেন, ‘কোনো কাজ করতে গিয়ে যদি সরকারের সমবায় কর্মকর্তা সহযোগিতা না করেন, অন্যায় প্রস্তাব দেন- তবে আমাকে জানাবেন। সরকারী পর্যায় হতে সমবায়ীদের যত রকমের সহযোগিতা প্রয়োজন, তা সমবায় অধিদপ্তর করবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় সুশাসন নিশ্চিত হয়। আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি সুশাসন না থাকে, তবে আইন দিয়ে কিছু হবে না।’

 তিনি আলোচনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে বেশ কিছু মানদন্ড নিয়ে আলোচনা করেন।

ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা ঢাকা ক্রেডিটের সাফল্যের ইতিহাস তুলে ধরেন। মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন, ইতিহাস, প্রতিষ্ঠানের দর্শন, লক্ষ্য, মূল্যবোধসহ সঞ্চয়ী, ঋণ ও প্রকল্পগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের মেগা প্রকল্প হাসপাতালের কনস্ট্রাকশন কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। ঢাকা ক্রেডিটের এই সাফল্যের পেছনে অলৌকিক কিছু নেই। আমারা কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে তিন বছরের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করি এবং সেইভাবে কাজ করে যাই। যে কারণে আমরা আজ এখানে এসে পৌঁছতে পেরেছি।

সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট দেশের অন্যান্য সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কাজ করতে পরামর্শ দেন। তাঁর বক্তব্যের পর ঢাকা ক্রেডিটের কর্মযজ্ঞের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

নেফস্কুন এর চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শিবাজী সাপকোটা নেপালের ক্রেডিট ইউনিয়নসমূহের সুশাসন পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মোট সম্পদ কি, ইনস্টিটিউশনাল ক্যাপিটাল কি, পরিচালনা খরচ, আর্থিক খরচ, ঋণখেলাপী এই সব বিষয়ে সমিতির পরিচালনা কমিটিকে জানতে হবে। তা না হলে প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে চলবে না। নেপালের ক্রেডিট ইউনিয়ন ইতিমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর আগে তারা এটিএম কার্যক্রম চালু করেছে। সুশাসন ছাড়া নেপালের এই অগ্রযাত্রা অসম্ভব ছিল।

ফোরামে কাল্ব চেয়ারম্যান ঢাকীর পরিচালনায় উন্মুক্তপ্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিবছর কাল্ব’র পরিচালনায় সমবায় ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা এই ফোরামে অংশ নিয়ে সমবায়ের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক পেক্ষাপটে উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

ডিসিনিউজ/আরবি/এসকে/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আরো পড়ুন:

ভারতে নেতিবাচক সংবাদের বিরুদ্ধে ফাদার-সিস্টারদের আন্দোলন

উড়িষ্যার প্রথম খ্রিষ্টান আদিবাসী নারী পাইলট

১৩ জন নতুন কার্ডিনালের নাম ঘোষণা করলেন পোপ ফ্রান্সিস

কাশ্মীরে সংলাপের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান পাকিস্তানি বিশপদের