শিরোনাম :
ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও’র স্মরণে শোক ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত
ডিসিনিউজ।।ঢাকা
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রাক্তন মহাসচিব ও দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা – এর প্রাক্তন ডিরেক্টর ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ‘র স্মরণার্থে এক শোক ও স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে।
এই মহতীপ্রাণ ব্যক্তিত্ব গত ১০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকার নিউ জার্সিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। ১৯ জুলাই নিউ জার্সি সিটিতে তাকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সমাহিত করা হয়।
৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা ক্রেডিটের বিকে গুড কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন ও দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা – এর যৌথ উদ্যোগে এই শোক ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শুরুতে ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও’র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
অনুষ্ঠিত শোক ও স্মরণসভায় ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ‘র বোন লুসী গমেজ এবং পরিবারবর্গ, বড় ভাই জর্জ ডি. রোজারিও এবং পরিবারবর্গ এবং ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ‘র ভাগিনা টনি মাইকেল গমেজ উপস্থিত ছিলেন।
সেই সাথে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস প্রেসিডেন্ট পাপড়ি দেবী আরেং, সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোনাস গমেজ, শ্রদ্ধেয় ফাদার লিন্টু কস্তা, ডক্টর ইসুদোর গমেজ, ইঞ্জিনিয়ার স্টিফেন ঘোষ, ঢাকা খ্রীষ্টান ছাত্র কল্যাণ সংঘের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্সিলিন আভা সহ ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালকমন্ডলী এবং ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও’র শুভাকাঙ্খীবৃন্দ ।

ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘ ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ছিলেন সমাজের একজন উজ্জল নক্ষত্র । ঢাকা ক্রেডিটের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি যখনই দেশে আসতেন আমাকে বলতেন, আমাদের দেশে খ্রীষ্টান সমাজে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ঢাকা ক্রেডিটের ইমপ্যাক্ট বের করতে হবে। তিনি যেভাবে নিরলসভাবে সমাজের প্রতি কাজ করে গেছেন, তার সম্মানে আমরা চেষ্টা করবো তার পরামর্শমত খ্রীষ্টান সমাজে ঢাকা ক্রেডিটের অবদান তুলে ধরার জন্য।’

ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘ ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, ছাত্র কল্যাণ সংঘ এবং অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে আমাদের সাথে ছিলো তার নীবিড় সম্পর্ক। তিনি সব সময় সমাজের জন্য ভাবতেন এবং কিভাবে এই সমাজকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে তা তিনি তার লেখনির মাধ্যমে প্রকাশের চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার মতো স্বার্থহীন মানুষ সমাজে ছিলো বলে এখনো সমাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘ তিনি অনেক মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন। ছাত্র কল্যাণের রজত জয়ন্তী থেকে তার সাথে আমার কাজ করার সুযোগ হয়। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমাদের। সমাজকে নিয়ে শেষ বয়সেও সে যে চিন্তা ভাবনা করতেন, তা সত্যিই বিরল। ঢাকা ক্রেডিট সহ খ্রিষ্টান সমাজের প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে তার পদচারনা ছিলো। বিশেষ করে ঢাকা ক্রেডিটে লোন প্রটেকশন স্কীম এর যাত্রা তার হাত দিয়েই শুরু। আজ ঢাকা ক্রেডিটের অনেক পরিকল্পনা তার চিন্তাপ্রসূত ছিলো। তিনি যে গ্রস্থসমূহ লিখে রেখে গেছেন, তা খ্রিষ্টিয় সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা তার আত্নার মঙ্গল কামনা করি।’

স্মরণসভায় ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ‘র পরিবারের পক্ষে তার ভাগিনা টনি মাইকেল গমেজ স্মৃতিচারণে বলেন, ‘ ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ছিলেন আমাদের পরিবারের মধ্যে সবথেকে বড় পরামর্শক। ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও‘র ভাগিনা হয়ে থাকা সহজ কিছু না। আমরা সহজে তাকে ইমপ্রেস করতে পারতাম না। কারণ তিনি এতটাই মেধাবী ছিলেন, তার কাছে অজানা কিছুই ছিলো না। তিনি অনেক মানুষের উপকার করেছেন। কিন্তু মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘনায় তিনি যেভাবে কষ্ট পেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন সেই শোক আমরা এখনো কাটিয়ে উটতে পারি নাই।’
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘ তিনি একাধারে লেখক, একাধারে ডক্টর, একাধারে কবি এত গুণে গুণান্নিত, এমন ক্ষনজন্মা ব্যক্তিত্ব আমাদের খ্রিষ্টিয় সমাজে বিরল। আমরা তার আত্নার কল্যানার্থে প্রার্থনা করি।’

হাউজিং সোসাইটি লি:’র চেয়ারম্যান আগষ্টিন প্রতাপ গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ডা: ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও ‘র ইতিহাস দেখেছি এবং জেনেছি। আমাদের উচিত তাদের মত সূর্য সন্তানদের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখা যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানতে পারে।’

উল্লেখ্য, ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন এবং বিদেশবিভুই হয়েও বাংলায় সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাস সম্বলিত ‘পূর্ববঙ্গে খ্রিষ্টধর্ম’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ছাত্রাবস্থায়ই তিনি মাসিক বাংলা মুখপত্র ‘আলোকচ্ছটা’ ও খ্রিষ্টান ছাত্র কল্যাণ সংঘের প্রকাশনা ‘অনল’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষে বিভিন্ন সময়বায় প্রতিষ্ঠানেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর বোর্ড অব ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও মহাখালী খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত নবম এশিয়ান গেমস্-এর টিম ডক্টর হিসেবে মনোনিত হন এবং অংশগ্রহণ করেন।
মেধাবী ছাত্র ডা. নেভেল ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ৪টি বিষয়ে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি’তে উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়াশোনায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে পেশাগত জীবনে যেমন ছিলেন বর্ণিল, সমাজ কল্যাণে তেমনি ছিলেন মহীয়ান।
এই দরদী মহৎপ্রাণ ব্যক্তি আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তিনি তার কথা, কাজ এবং অনুপ্রেরণা দিয়ে রেখে গেছেন জ্বাজ্জ্বল্যমান অনুরকরণীয় স্মৃতি।
ডা. নেভেল ডি’ রোজারিও’র স্মরণে শোক ও স্মরণ সভার সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর শিপন রোজারিও।



































































