ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা আন্তর্জাতিক পোপ ফ্রান্সিস থাইল্যান্ড এবং জাপন সফর করছেন

পোপ ফ্রান্সিস থাইল্যান্ড এবং জাপন সফর করছেন

0
702

|| ফাদার সুনিল দানিয়েল রোজারিও ||

কাথলিক খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং ভাটিকান সিটির প্রধান পোপ ফ্রান্সিস, থাইল্যান্ড এবং জাপান সফর শুরু করেছেন। এই সফর হলো ইটালির বাইরে তাঁর ৩২তম বিদেশ সফর এবং চারতম এশিয়া সফর। এর আগে পোপ ফ্রান্সিস ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫ সনে শ্রীলংকা এবং ২০১৭ সনে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেছেন। চলতি মাসে পোপ থাইল্যান্ড এবং জাপান সফরের শুরুতে ২০নভেম্বর প্রথমে থাইল্যান্ডে সফর করেন।
পোপ দ্বিতীয় জন পল ১৯৮৪ সনে থাইল্যান্ড সফরের পর এটা দ্বিতীয় কোনো পোপের থাইল্যান্ড সফর। ১৫৬৭ সনে তখনকার শিয়্যাম দেশ বা বর্তমান থাইল্যান্ডে, ডমিনিকান মিশনারিগণ প্রথমে বাণী প্রচারের কাজ শুরু করেছিলেন। দুই বছরের মাথায় তাদেরকে হত্যা করা হয়। তার পরে আসেন ফ্রান্সিকান মিশনারিরা এবং তারও পরে ১৬০৬ সনে জেজুইট মিশনারিরা থাইল্যান্ডে এসে স্কুল এবং গির্জা নির্মাণ করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ২০ নভেম্বর দুপুরে ব্যাংকক পৌঁছালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাটিকান দূতাবাসে। এই দূতাবাসেই পোপ তাঁর সফরের অবসর সময় কাটাবেন। বিকালে তিনি দেড়শত বছরের পুরানো মাহাশিমারাম মন্দির পরিদর্শনে যান এবং বৌদ্ধ ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার সাথে সাক্ষাৎ করেন। পোপের সফর সূচির মধ্যে রয়েছে ২১ তারিখ গর্ভনমেন্ট ভবনে সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক মিশনের লোকদের সাথে বৈঠক। পোপকে সরকারি প্রাসাদে অর্ভ্যথনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রাউটচান-ও-চা। তাঁর সফর সূচির মধ্যে আরো আছে- ১৮৯৮ সনে স্থাপিত সেন্ট লুইস শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন। বিকালে তিনি রাজপ্রাসাদে থাইল্যান্ডের রাজা মাহাভাজিরালংকর্ন রামার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। রাজপ্রাসাদ থেকে যাবেন জাতীয় স্টেডিয়ামে মহাখ্রিষ্টযাগ অর্পণ করার জন্য।

[wp1s id=”10479″]
নভেম্বর ২২ পোপ ফ্রান্সিস যাবেন সেন্ট পিটার’স চার্চে এবং এখানে তিনি ফাদার, সিস্টার এবং সেমিনারিয়ানদের সাথে মিলিত হবেন। পরে তিনি যাবেন সাধু নিকোলাস ধর্মালয়ে এবং এখানে থাইল্যান্ডের বিশপ এবং এশিয়ান বিশপ সম্মেলনীর কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। একই দিন বিকালে পোপ ফ্রান্সিস চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিবেন। তাঁর ভাষণে পোপ পরমানু অস্ত্রসহ সকল প্রকার বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও উৎপাদনের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভাষায় চার্চের অবস্থান তুলে ধরবেন বলে ভাটিকান সুত্রে বলা হয়েছে। ২৩ তারিখ সকালে পোপ ফ্রান্সিস জাপানের উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড ত্যাগ করবেন।
থাইল্যান্ডের মোট জন সংখ্যা ৬ কোটি ৯০ লাখ, যার মধ্যে ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সংখ্যা তিন লাখ ৮৯ হাজার। গোটা থাইল্যান্ডে কর্মরত রয়েছেন ৮৩৫ জন ধর্ম যাজক, ১,৪৬১ জন সন্যা সব্রতিনী এবং ১,৯০১ জন ক্যাটিখিস্ট বা বানী প্রচারক খ্রিস্টভক্ত।
২৩ নভেম্বর সকালে পোপ ফ্রান্সিস জাপানের উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড ছেড়ে যাবেন। টোকিয় বিমান বন্দরে সংক্ষীপ্ত অনুষ্ঠারে পর পোপকে নিয়ে যাওয়া হবে ভাটিকান রাষ্ট্রদূত ভবনে- যেখানে তিনি তার পুরো সফরের অবসর সময় কাটাবেন। জাপান সফরে পোপ যে মূলবিষয় বেছে নিয়েছেন তা হলো ‘সর্বজনের জীবন রক্ষা’।
সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ১৫৪৯ সনের ১৫ আগস্ট জাপানে খ্রিষ্টধর্মের গোড়া পত্তন করেন এবং দুই বছরের মধ্যে ৭০০ শত ব্যক্তি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হোন। জাপানে খ্রিষ্টানদের হত্যা ও নির্যাতনের পর প্রায় ২০০ শতবছর সেখানে কোনো ধর্মযাজক না থাকলেও খ্রিষ্টধর্ম  জীবিত ছিলো।
পোপ ফ্রান্সিস জাপানে জেজুইট যাজক সংঘের আর্জেন্টাইন মিশনারিদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ১৯৮৭ সনে প্রথম জাপান সফর করেছিলেন। আর পোপ হিসেবে এটা তাঁর প্রথম জাপান সফর।
২৪ নভেম্বর পোপ সফর করবেন নাগাসাকি এবং হিরোসিমা শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সনের আগস্ট মাসে মার্কিন পারমানবিক বোমার আঘাতে এই দুটিশহর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়ে ছিলো। পরমানবিক বোমা বিস্ফোরণে দুটি শহরে মোট তিন লক্ষ ৫৫ হাজার সাধারণ জনগণ নিহত হয়ে ছিলেন। উল্লেখ্য যে, এই নাগাসাকি এলাকায় সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার ১৫৪৯ সনের খ্রিষ্ট বাণী প্রচার শুরু করে ছিলেন। সেই পরমানু বোমা হামলার পরেও যারা এখনো জীবিত আছেন, পোপ তাদের সাথে এটোমিক হাই পোসেন্টার পার্কে মিলিত হবেন। এখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দিবেন। তাঁর বক্তৃতায় তিনি বিশ্বে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার এবং উৎপাদনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন। এই এটোমিক পার্কের অদূরে নিশিজাকা পর্বতে তৈরি করা হয়েছে  খ্রিষ্টধর্ম  শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ্য। জাপানে ২৬জন খ্রিষ্টনকে হত্যা করা হয়েছিলো, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রথম জাপানী জেজুইট ধর্মযাজক পলমিকি। পোপ এই স্মৃতিস্তম্ভ্য পরিদর্শনের পর শহরের বেজবল স্টেডিয়ামে ২৫ হাজার খ্রিষ্টানকে নিয়ে খ্রিষ্টযাগ  অর্পণ করবেন। নাগাসাকি থেকে পোপ যাবেন হিরোসিমা শহরে। এখানে পোপকে স্বাগত জানাবেন পারমানবিক বোমার আঘাতে বেঁচে যাওয়া দুই জন জাপানি।
২৫ নভেম্বর সকালে পোপ ফ্রান্সিস যাবেন বেল্লে সাল্লেহান্জোমন কংগ্রেস সেন্টারে। এখানে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ৯ মাত্রার ভুমিকম্পের কারণে সুনামী এবং ফুকোসিমা পারমানবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রে বিস্ফোরণে আহতদের উদ্দেশ্যে তিনি ভাষণ দিবেন। জাপানি বিশপ সম্মেলনী সে দেশে পারমানবিক শক্তির পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধের জন্য যে প্রচার চালিয়ে আসছিলেন, সে ব্যাপারে এখানে পোপ তাঁর বক্তৃতায় বিশপদের সমর্থন জানাবেন। একই দিনে পোপ রাজ ভবনে যাবেন সম্প্রাট নারুহিতো’র সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার গ্রহেণের জন্য। গত অক্টোবর মাসের ২২ তারিখে নারুহিতো জাপানের ১২৬ তম সম্প্রাট পদে মনোনীত হোন।
রাজপ্রাসাদ সফর শেষে পোপ ইম্মাকুলেত কনসেপশন ক্যাথিড্রাল চার্চে যুবকদের সাথে এক আলোচনা সভায় মিলিত হবেন। পরে বিকাল ৪ টায়, ৫৩ হাজার লোক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন টোকিয় ডোম স্টেডিয়ামে তাঁর সফরের প্রধান খ্রিষ্টযাগে পৌরহিত্য করবেন। খ্রিষ্টযাগের পরে পোপ জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজোআবে’র সাথে তাঁর বাস ভবনে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী আগে, ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ভাটিকানে পোপের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে পোপের ব্যক্তিগত সাক্ষাতের পর সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে প্রধান অতিথির ভাষণ দিবেন।
পোপের জাপান সফরের শেষ পর্বে ২৬ নভেম্বর রয়েছে জেজুইট যাজক সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত জাপানের সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সফর। এখানে তিনি প্রথমে বৃদ্ধ যাজকদের আশ্রম পরিদর্শন করবেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ১৩ হাজার ছাত্র এবং আগত জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোপ যাবেন হানেদা বিমান বন্দরে। এখানে পোপকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় জানানোর পর তিনি রোমের উদ্দেশ্যে টোকিও ত্যাগ করবেন।
জাপানে রয়েছে মোট ৬,৮৫২ টি দ্বীপ, যার মোট জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬০ লক্ষ এবং মোট ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের সংখ্যা পাঁচলক্ষ ৩৬ হাজার। তিনটি আর্চ ডাইয়োসিস এবং ১৩টি ডাইয়োসিসের অধীনে রয়েছে ৮৪৮ চার্চ সেন্টার বা ধর্মপল্লী এবং মোট কর্মরত যাজক সংখ্যা এক হাজার ৫৮৯ জন। জাপানে ৯০ শতাংশের বেশি লোক এখনো বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী।

সুত্র: বরেন্দ্র দূত