শিরোনাম :
ফাদার পিশোতোকে ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘ ৬০ বছর সেবা দেওয়া প্রয়াত ফাদার যোসেফ এস পিশোতো, সিএসসির মর দেহের প্রতি ঢাকা ক্রেডিটের নেতৃবৃন্দ গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সন্ধ্যা ৬টায় রমনা ক্যাথিড্রালে ফাদার পিশোতোর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়াসহ বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তাগণ।
৪ ফেব্রুয়ারি রামপুরার মরো হাউসে বার্ধক্যজনিত রোগে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান আমেরিকার নাগরিক ফাদার পিশোতো। তিনি নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
এর আগে বিকাল ৩টায় নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হয় তাঁর প্রাক্তন শিক্ষার্থী, কারিতাস বাংলাদেশ, বিপুল সংখ্যক ফাদার, সিস্টার, সেমিনারীয়ান ও সাধারণ খ্রিষ্টভক্ত।
ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ফাদার পিশোতো সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি ছিলেন অত্যন্ত সময়ানুবর্তী শিক্ষক। তিনি সকল ছাত্রকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। সব সময় খোঁজ খবর রাখতেন। তিনি ক্ষমাতাধর আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্ম নিয়েও মানব সেবার তরে তাঁর সারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রার্থিব আনন্দ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে ছাত্র গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর মধ্য দিয়ে এ দেশের বহু ছাত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি হিসেবে ফাদার পিশোতো সৃষ্টিকর্তার উপহার হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন এ দেশ ও খ্রিষ্টমণ্ডলীর জন্য আশীর্বাদ। আমরা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়েছি।
বাংলাদেশের পবিত্র ক্রুশ যাজক সংঘের প্রভিন্সিয়াল ফাদার জেমস সি. ক্রুশ সিএসসি ফাদার পিশোতোর বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন ডিসিনিউজের কাছে। তিনি বলেন, ফাদার পিশোতো যাজক হওয়ার পরই বাংলাদেশে মিশনারি হিসেবে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তিনি ১৯৬২ সনে এদেশে আসেন। ৬০ বছর মিশনারি কাজ করার পর তিনি আর দেশে যেতে চাননি। অসুস্থ হলে পর তিনি এদেশেই চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এ দেশকে তিনি খুব ভালোবেসেছেন। এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালোবেসেছেন। মিশনারি হিসেবে তাঁর অনেক বড়ো একটা অবদান হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণ সকলকে শিক্ষা দেওয়া। এই নটর ডেম কলেজকে কেন্দ্র করে তিনি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নয়নের পথ দেখিয়েছেন। এই শিক্ষাকে তিনি সেবা হিসেবে নিয়েছেন।
ফাদার জেমস আরো বলেন, ‘এই শিক্ষা সেবার পাশাপাশি তিনি সমাজ কল্যাণের অনেক কাজ করেছেন। তিনি আর্ত মানুষের সেবা করেছেন। যেখানেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, সেখানেই তিনি সেবা করেছেন।
ফাদার পিশোতোর সাথে স্মরণীয় ঘটনার কথা উল্লেখ করে ফাদার জেমস বলেন, ‘আমার সাথে তাঁর অভিজ্ঞতা হয়েছে ১৯৮৮ সনে, আমি নটর ডেম কলেজ থেকে প্রতিদিন ১৬ শত বন্যার্ত মানুষকে খাবার দিয়েছি। এ ছাড়া তিনি মানিকগঞ্জে একটি গ্রামে বেড়ার ঘরে আমার সাথে এক মাস থেকে বন্যার্তদের সেবা দিয়েছেন। তিনি মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছেন।’
ফাদার জেমস উল্লেখ করেন যে মণ্ডলীতে আরেকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন আমেরিকা থেকে ছুটে আসা নিবেদিত প্রাণ এই মিশনারি। ফাদার পিশোতো সেমিনারীয়ানদের শিক্ষায় ও গঠনে সাহায্য করেছেন। অনেক সেমিনারীয়ান যারা খরচ দিতে পারেননি, তিনি তাদেরকে শিক্ষায় ও গঠনে সাহায্য করতেন। এই ব্যাপারে তাঁর পিতামাতা তাকে সাহায্য করেছেন। এই কাজটি বাংলাদেশ মণ্ডলীর জন্য একান্ত প্রয়োজন ছিল এবং এখনো আছে বলেন মনে করেন ফাদার জেমস।
ফাদার জেমস বলেন, ‘তিনি তাঁর সারা জীবন এই দেশের জন্য ব্যয় করেছেন, আমরা তাঁর জীবনাহ্বানের জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি একজন আদর্শ মিশনারি ছিলেন। তিনি যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন। যেকোনো দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হতো না কেন, তিনি বাধ্যতা ও নম্রতার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ তাঁর বিদায়লগ্নে তাঁর পিতা-মাতা ও তাঁর স্বজনদের কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁরা তাঁকে মণ্ডলীর জন্য কাজ করতে দিয়েছিলেন।’
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘আমি ফাদার পিশোতোকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি এ দেশে ৬০ বছর শিক্ষার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁর জীবনের জন্য ঈশ^রকেও ধন্যবাদ জানাই। কলেজে পড়ার সময় আমার গঠনের জন্য ফাদার পিশোতো অনেক উপকার করেছেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ গঠনেও তিনি অবদান রেখেছেন। যখনই এদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে নটর ডেম কলেজকে তিনি উচ্চ মার্গে নিয়ে গেছেন।’