ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ ভক্তি শ্রদ্ধায় ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন

ভক্তি শ্রদ্ধায় ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী পালন

0
499

সুমন কোড়াইয়া॥ ঢাকা

ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করা হলো ঈশ্বরের সেবক থিওটোনিয়াস অমল (টি. এ.) গাঙ্গুলীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী ।

২ সেপ্টম্বর রমনার সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রালে এই উপলক্ষে পবিত্র খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় নিসেফোরস ডি’ক্রুজ ওএমআই। খ্রিষ্টযাগের শুরুতে ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর ছবিতে মাল্য প্রদান করা হয় ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

উপদেশবাণীতে ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় খ্রিষ্টভক্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর সাধু শ্রেণীভুক্তকরণের জন্য আরও প্রার্থনা দরকার। আপনারা প্রার্থনা ও প্রচার করতে থাকেন। যার যার বিশ্বাস ভরা অন্তর নিয়ে প্রার্থনা করলে ঈশ্বর প্রার্থনা শুনবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলী যদি সাধু ঘোষিত হন, তাহলে এখানে আমাদের আদর্শ সৃষ্টি হবে। তিনি পবিত্র মানুষ হিসেবে আমাদের সামনে থাকবেন। তাঁকে অনুসরণ করে আমরাও গভীর খ্রিষ্টীয় জীবনে প্রবেশ করবো এবং পবিত্রতায় জীবন যাপন করবো।’

তিনি খ্রিষ্টভক্তদের ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর বিষয়ে গভীরভাবে জানার ও তাঁর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানান।

খ্রিষ্টযাগে, ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীকে ধন্য শ্রেণীভুক্তকরণের ও তাঁর মাধ্যমে অনুগ্রহলাভের প্রার্থনা করা হয়।

পবিত্র খ্রিষ্টযাগের পর রমনা কাথিড্রাল প্রাঙ্গণে অবস্থিত ঈশ্বরের সেবক টি. এ. গাঙ্গুলীর কবরে ঢাকা ক্রেডিটসহ বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ধর্মসংঘ ও ব্যক্তি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় নিসেফোরস ডি’ক্রুজ ওএমআই ও অন্যান্য পুরোহিতগণ। এছাড়া পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ও  ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া।

শ্রদ্ধা নিবেদন করে কারিতাস বাংলাদেশ, আর্চবিশপ টি. এ. গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা, ভ্রাতৃ সংঘ পুরোহিত সম্প্রদায়, পবিত্র আত্মা সেমিনারী, সেন্ট জন ভিয়ানী হাসপাতাল, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান ছাত্রাবাস, মরো হাউজ, গাঙ্গুলী পরিবারসহ আরও অনেকে।

১৯৭৭ সনের ২ সেপ্টেম্বর আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৬ সনে ভাটিকান থেকে পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট তাঁকে ‘ঈশ্বরের সেবক’ উপাধি প্রদান করেন। সাধু শ্রেণীভুক্তকরণের প্রথম ধাপ হলো ‘ঈশ্বরের সেবক’ পদ। এই পদে তাঁরাই সম্মানিত হন যারা সেবা, ভালবাসা, ক্ষমা, সততা ও পবিত্র জীবন যাপন করে থাকেন।

ক্যাথলিক মন্ডলীতে কোনো ব্যক্তিকে সাধু শ্রেণীভুক্ত করার চারটি পক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো হলে: ঈশ্বরের সেবক, পূজনীয়, ধন্য এবং সাধু। ২০০৬ সনে দেশের প্রথম বঙালি সাধু শ্রেণিভুক্তকরণের প্রথম ধাপ ‘ঈশ্বরের সেবক’ পদে ভূষিত হয়েছেন আর্চবিশপ থিওটোনিয়াস অমল গাঙ্গুলী। এখন তার পরবর্তী ধাপ হলো ‘পূজনীয়’।

অনিরাময়যোগ্য ব্যধি যেমন ক্যান্সার, কিডনী ফেইলোর হলে, আর্চবিশপ টি. এ. গাঙ্গুলীর মধ্য দিয়ে প্রার্থনা করলে কেউ সুস্থ হলে তা স্থানীয় ফাদারের মধ্য দিয়ে আর্চবিশপ টি এ. গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বা ধন্য শ্রেণীভুক্তকরণ কমিটিতে তা লিখিতভাবে জানাতে হবে। তা পরে ভাটিকানে প্রমাণ হিসাবে সেই নথি প্রেরণ করা হবে। এভাবে তাঁকে সাধু ধন্য শ্রেণীভুক্তকরণ পক্রিয়া দ্রুত হবে।

এই বিষয়ে ভিডিওতে দেখুন বিস্তারিত

আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলীর জন্ম নবাবগঞ্জের হাসনাবাদ গ্রামে ১৯২০ সনের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তাঁর পিতা কমল গমেজ এবং মাতা কমলা গমেজ। ছোট বেলায় তাঁকে ডাকা হতো ‘থেটন’ নামে।

১৯৩০ সনে তাঁর পিতা কমল গমেজ যখন কোলকাতায় চাকরি করতেন তখন তাঁর গাঙ্গুলী পদবীটা পছন্দ হয়। তখন তিনি তাঁর পরিবারের সকলের পদবী গমেজ থেকে পরিবর্তন করে গাঙ্গুলী রাখেন।

১৯৪৬ সনের ৬ জুন মাত্র ২৬ বছর বয়সে তিনি ভারতের রাঁচীতে সেন্ট মেরীস ক্যাথিড্রালে পুরোহিত হন। তিনি ছিলেন সুনাম ধন্য নটর ডেম কলেজের প্রথম বাঙালি অধ্যক্ষ। ১৯৬০ সনের ৭ অক্টোবর তিনি ঢাকার সহকারী বিশপ হিসেবে অভিষিক্ত হন। ভাটিকান তাঁকে ১৯৬৫ সনের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী আর্চবিশপ হিসেবে নিয়োগ দেয়।

১৯৭২ সনের ২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন আর্চবিশপ টি এ গাঙ্গুলী। এই সময় তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের ত্রাণ কার্যের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের হাতে দুই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। একই সাথে এদেশের ওপর ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রতীকস্বরূপে একটি স্বর্ণের ক্রুশ ও তাঁর অভিষেকের সোনার চেইন বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন।