শিরোনাম :
মুজিববর্ষ হোক মাদকের বিরুদ্ধে
২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস
|| শাহাদাত আনসারী ||
২৬ জুন ছিলো আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। মাদক প্রতিরোধের জন্য আজ বিভিন্ন আলোচনা হবে, বক্তৃতায় মঞ্চ কেঁপে উঠবে। আবার মাদকের বিরৃুদ্ধে শ্লোগান ও আলোচনার পরে অনেকেই সেই মাদক দিয়েই হয়তো আড্ডা জমাবেন। যাহোক মাদক আমাদের জন্য ধ্বংস এবং চরিত্র নষ্টের অন্যতম হাতিয়ার। বর্তমানে বহুল আলোচিত মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ মাদকাসক্তদের জন্য ঝুঁকির কারণ।
একটা দেশের জনশক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে যুবসমাজ। যুবসমাজকে দেশের শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অনেকটা নির্ভর করে সে দেশের যুবসমাজের ওপর। তরুণ যুবকরা যদি তাদের দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করে তবে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে থাকবে। আর যদি না পারে তবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার করেছে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা আজ যুবক ও তরণদের নিয়ে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিবর্ষ পালন করা হচ্ছে। উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাদকমুক্ত যুবসমাজ এ উন্নয়নকে আরো গতিশীল করতে পারে। মুজিববর্ষে আমাদের তারুণ্য মাদকের বিরুদ্ধে অগ্রসর হবে।
আমাদের মোট জনসংখ্যায় তরুণ সমাজের রয়েছে অনেকটা বিস্তার। তরুণ বা যুবকরা একটি দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে কঠিন অসাধ্যকে সাধ্যের মধ্যে আনতে পারে। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজ এখন ঘুনে ধরেছে। যুবকরা এখন নিজেদেরকে আধুনিককালের বংশধর বলে পরিচয় দিয়ে মাদকে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার ও পরিবারে অনেক পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে। আজ সংবাদপত্রের পাতা উল্টালেই কিছু পরিচিত বিষয়ের কথা পাওয়া যায়। মাদকাসক্ত যুবকের হাতে পিতা খুন, স্ত্রীর গয়না নিয়ে মাদকাসক্ত স্বামী উধাও, মাদকের টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে যুবকের গলায় ফাঁসি ইত্যাদি খবর আজ পত্রিকার পাতার শিরোনামে পরিণত হয়েছে। মাদক একটি ভয়াবহ নেশা। এ নেশা মানুষকে অনেক নিচে নিয়ে যেতে পারে। মাদকের ভয়াবহ নেশা একটি সম্ভাবনাময় যুবসমাজকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। যারা একবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে তাদের পক্ষে ফিরে আসা অনেকটা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে ইচ্ছে করলেও ফিরে আসতে পারে না। ফলে কিছুদিন পরেই মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের কেউ তাকে বিশ্বাস করে না। অনেক সময় তার সাথে আত্মীয়স্বজনরা ভালোভাবে কথাও বলে না। মাদক ক্ষণিকের জন্য আনন্দ দিলেও তা আসলে মানুষের শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। কিছুদিন যেতে না যেতেই মাদকাসক্ত ব্যক্তি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে মাদকাসক্তরা অর্থ জোগাড় করতে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজির মতো জঘন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির কারণে পরিবারে আর্থিক অভাবের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে পরিবারে শান্তির পরিবেশ হারিয়ে ভাঙ্গনের পথে আগাতে থাকে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে।
মাদকের নেশাই আকৃষ্ট হয়ে অনেক মেধাবী ছাত্র বখাটে যুবকে পরিণত হয়েছে। মাদকের আসক্তির কারণে অনেক প্রাণ অকালে ঝরে যায়। বেশির ভাগ যুবক বন্ধুবান্ধবদের সহচর্যে মাদক সেবন করে। প্রথমে বন্ধুর খরচে মাদক গ্রহণ করলেও পরে নেশা করতে নিজেই টাকা ব্যয় করা শুরু করে। বস্তিতে বসবাসরত অনেকেই আজ অভাবের তাড়না ঘোচানোর জন্য ক্ষণিকের আনন্দ পেতে মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। আশপাশের শিশুশ্রমিক, যারা সমাজে টোকাই নামে পরিচিত তারাও আজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের খরচ জোগাড় করতে গিয়ে তরুণরা প্রাইভেট-টিউশনি না পড়েও পরিবার থেকে টাকা নিয়েই যাচ্ছে। আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে বিভিন্ন কৌশলে টাকা নিয়ে তরুণরা এখন মাদকের দোকানে ভীড় জমাচ্ছে। অনেক উচ্চশিক্ষিত সচ্ছল পরিবারের মেধাবী সন্তানরাও মাদকাসক্তির কারণে বিপথগামী হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। নামকরা ব্যক্তিরাও কৌতুহলবশত মাদক সেবন করে এ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। মাদকাসক্তির কারণে অনেককে অকালে মরতে দেখা যাচ্ছে। মাদকাসক্তের ফলে লিভার ক্যান্সার, শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা লোপ এবং প্রজনন ক্ষমতাও লোপ পায়। আমাদের রাস্তাগুলোতে বাস-ট্রাক ড্রাইভারদের অনেকেই মাদকাসক্ত বলে সহজেই সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। মাদকাসক্তরা মাদক গ্রহণের সময় একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করে বলে এদের মধ্যে এইডসের ঝুঁকিও থাকে অনেক।
বিভিন্ন মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে সহজেই ভারত থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য আসছে বাংলাদেশে। একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট অংশ হলো তরুণ। এই তরুণদের মাঝে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে মাদকাসক্তি। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার জন্য সুকৌশলে তরুণদেরকে ভেড়ানো হচ্ছে মাদকের মিছিলে। ক্ষণিকের আনন্দে গা ভাসিয়ে আমাদের যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে হাঁটছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে স্রোতের মতো ঢুকছে মাদকদ্রব্য। হাত বাড়ালেই এখন ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ-গাঁজা সহজেই পাওয়া যায়। হঠাৎ করেই দেশে মাদকদ্রব্য বিশেষ করে ফেনসিডিলের হাট বসেছে বললে ভুল হবে না। এখন আর আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন আস্তানায় যেতে হচ্ছে না নেশাখোরদের, ফোন করলেই চলে আসছে নির্দিষ্ট স্থানে। এসব মাদকদ্রব্যের সবটাই পাচার হয়ে আসছে ভারত থেকে। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ভারতীয় অনেক গ্রামে এখন চালু রয়েছে বিভিন্ন ফেনসিডিল ফ্যাক্টরি। মূলকারখানা ছাড়াও সীমান্ত এলাকায় তিনশ’রও বেশি শাখা ফ্যাক্টরিতে বাংলাদেশে চালান করার জন্য তৈরী হচ্ছে ভয়ঙ্কর মাদক। দেশে এ মুহূর্তে কত মানুষ মাদকের ছোবলে নিঃশেষ হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। যারা মাদকে ঝুঁকে পড়েছে তাদের জন্যও পর্যাপ্ত নিরাময় কেন্দ্র নেই। যেগুলি আছে তাও আবার বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। শয্যা, চিকিৎসক, ওষুধ, সেবিকা ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞের বড়ই অভাব এসব কেন্দ্রে ।
বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ পুরুষ, ১৩ শতাংশ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে আসক্তদের শতকরা ৯১ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ। সম্প্রতি ইয়াবা আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে গ্রাস করেছে। প্রতিদিন যেমন ইয়াবা ধরা হচ্ছে, তেমনি প্রতিদিন হাজার হাজার পিস ইয়াবা তরুণরা গ্রহণ করছে। এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে দেশে মাদকাসক্তির কারণে যুবসমাজের নিজেদের জীবন শুধু বিপন্ন হয় না, এতে গোটা পরিবার বা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একজন মাদকাসক্ত তার নেশার পেছনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব জরিপে যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ, তা হচ্ছে দেশে মাদকাসক্তদের ৯১ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে। আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যেও মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটি উদ্বেগের কারণ। নারী আসক্তদের ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে বন্যার পানির মতো যৌন উত্তেজক ইয়াবা আসছে। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে এই ইয়াবা রাজধানীসহ দেশের বিবিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। রাজশাহী, রংপুরের সীমান্তে অনেক স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা মাদকের মিছিলে ভিড় জমাচ্ছে। ফলে মাদকের মিছিল দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আর এতে করে অবিভাবকরা তাদের ছেলেদের নিয়ে চিন্তায় ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছেন না। তবে সম্প্রতি প্রশাসনের নজরদারি প্রশংসার দাবি রাখে। বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যার পর বাড়ির বাহিরে অবস্থানকে পুলিশ কড়া নজরে রাখছে। ফলে কিছুটা হলেও যুবকদের অসৎ সঙ্গ ত্যাগের সুযোগ হচ্ছে। ফলে মাদকের ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে তারা পড়ার টেবিলে সময় অতিবাহিত করছে। এমন উদ্যোগকে অভিভাকরা স্বাগত জানিয়েছে।
রাজধানীর অলি-গলিতে, মুড়ি-মুড়কির দোকানে সর্বত্রই মাদকে ছেয়ে গেছে। পান-সিগারেটের দোকানে সহজেই ইয়াবার মতো মাদক সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে বলে নামি-দামি ব্যক্তিরাও এতে জড়িয়ে পড়ছেন। মাদক আমদানির জন্য শুধু স্থলপথ নয়, নৌপথ ও আকাশপথও ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। চোরাইভাবে সীমান্ত পথে যে পরিমাণ মাদক সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তার সামান্যও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সীমান্ত পার হয়ে হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ কোটি কোটি টাকার মাদক সামগ্রী প্রতিদিন রাজধানীর পথে যাত্রা করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা এ সকল মাদকদ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার করছে নারী ও শিশুদের। এদিকে দেশের অনেক স্থানেই মাদকসেবীদের চিকিৎসা দেয়ার নামে খোলা হয়েছে মাদকাসক্ত পুনর্বাসনকেন্দ্র। কিন্তু এসব পুনর্বাসনকেন্দ্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি নিজেরাই মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
মাদকের অপব্যবহার রোধে পরিবারের রয়েছে একটা বড় ভূমিকা। সামান্য বিষয় নিয়ে সন্তান যখন পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি করে তখন কারো কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে সহজেই মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। পিতা-মাতার কড়া মেজাজ সন্তানকে ক্রমাগত মানসিক অশান্তির দিকে ঠেলে দেয়। বর্তমানে অধিকাংশ পরিবারে পিতা-মাতা দুজনই নিজ কাজে এমনভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, নিজের সন্তানের খোঁজ ঠিক মতো নিতে পারেন না। সন্তান কার সাথে মিশছে বা কোথায় যাচ্ছে তা অনেক অবিভাবকই ঠিক মতো জানেন না। কিশোর বয়সে সন্তানের চরিত্র কেমন হবে তা অনেকটা নির্ভর করে সঠিক সহপাঠী নির্বাচনের উপর। কারণ সহপাঠীদের মাধ্যমে ধূমপান কিংবা মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা থাকে। আবার ভালো বন্ধুর সাথে ঠিক মতো যাতায়াত করলে একজন যুবক চরিত্রবান হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় তথা বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকগণ এখন মাদক গ্রহণকে নিজেদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক, মেডিকেল কলেজ ছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠগুলোর ছাত্রাবাসে আজ চলছে মাদকের আড্ডা। বরং বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলো ছাত্রদের মাদক গ্রহণ ও সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যেখানে মাদক বিরোধী মিছিল আসার কথা সেখানে তার বিপরীত ঘটছে। মাদকের কুফল নিয়ে আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত সেমিনার ও ক্যাম্পেইন হওয়া দরকার। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সকল গণমাধ্যমকে মাদকের অপব্যবহার, পাচার বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজে লাগাতে হবে।
মাদকের অপব্যবহার রোধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনকে শক্তিশালী করা দরকার। গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেশ কিছূ নামিদামি ব্যাক্তি, ব্যবসায়ী ও শোবিজ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ আলোড়ন ফেলেছিল। বর্তমান সরকারও অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী মাদক ও জুয়ার সাথে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেফতার কওে স্বস্তির পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ফলে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছুটা হলেও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আবারো একই পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। পুলিশকে মাদকের অপব্যবহার রোধে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো সক্রিয় করে তুলতে হবে। পাশ্ববর্তী দেশ মায়ানমার, যেখানে ইয়াবা তৈরি হয় সেখানেও কঠোর আইন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমন কোন কার্যকরী আইন নাই, যা আছে তারও আবার প্রয়োগ নাই। মাদকের হাত থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হলে প্রশাসনকে মাদকের অবৈধ আখড়াগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। এক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ এর পাশাপাশি অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের ভালো করে উপলব্ধি করতে হবে মাদকের ভয়ানক পরিস্থিতি সম্পর্কে। মাদকের ভয়ানক ছোবল যখন সর্বত্রই বিরাজ করছে তখনও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বোধদয় হচ্ছে না এটা সত্যিই ভয়ানক ও দুঃখজনক।
সীমান্ত অরক্ষিত রেখে দেশে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তেমন লাভ হবে না। মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদক ব্যাবসায়ীদের চিহ্নিত করে বড় ধরনের শাস্তি দিতে হবে। যুবসমাজের সাথে সাথে শিশুরাও যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে তা সত্যিই হতাশাজনক। পারিবারিক বন্ধন জোরদার এবং ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে অনেকটা এ সমস্যাসঙ্কুল পরিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আমাদেরকে একটি জিনিস মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে- অপসাংস্কৃতি, সামাজিক ও পারিবারিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, আর্থ সামাজিক সঙ্কট, বিশ্বায়ন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই বাংলাদেশে তরুণ ও যুব সমাজের মাঝে মাদকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আগামীর কান্ডারি তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে না পারলে দেশ অবনতির দিকে যাবে তা বুঝা দরকার। সীমান্ত খোলা রেখে কিংবা মাদকের আমদানি ঘটিয়ে তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কিংবা ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব নয়। এ জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদকের আমদানি রোধ করতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি প্রয়োজন। শুধু তাই নয় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদেরকে বড় ধরণের শাস্তি এবং মাদকাসক্তদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ।
অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। স্বাস্থ্য-চিকিৎসা-শিক্ষা সর্বত্রই আজ উন্নয়নের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এ উন্নয়নের চিত্র এখন গ্রাম-নগর পেরিয়ে পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। তাইতো জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রভাবশালী ও পরিচিত সংগঠনগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন ও বর্তমান চিত্রের প্রশংসা করছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে সরকারের স্থিতিশীলতা যেমন প্রয়োজন তেমনি তরুণ যুবকদের মাদক ও নেশা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তরুণদের নিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ও নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করবো। এবছর আমরা স্বাধীনতার ঘোষক ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকীও উদ্যাপন করবো। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে তরুণদের উন্নয়নের মহাসড়কের যাত্রী বানিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার।
লেখক: শাহাদাত আনসারী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক