শিরোনাম :
রংপুরে আদিবাসী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর হত্যা
রংপুরের বদরগঞ্জে রুখিয়া রাউৎ (২৩) নামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর (আদিবাসী) এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর নির্দয়ভাবে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার ভোরে রংপুরের বদরগঞ্জ-দিনাজপুরের ফুলবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে শালবাগানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি উদ্ধার করা হয়। সে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মিশনপাড়ার ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠির দিনেশ রাউৎ এর মেয়ে।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুল হক, অটোচালক রাজ মিয়া ও আশিকুজ্জামানকে বুধবার (৭ অক্টোবর) ভোরে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়ার জন্য দিনাজপুর বিচারকের আদালতে নেয়া হয় তাদের। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার (৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া। বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরের দিন তার ফিরে আসার কথা ছিল।
শেষবার ফোনে মা সুমতিকে সে বলে যায় ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসবো।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন সে আর বাড়িতে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন। অবশেষে পরের দিন মঙ্গলবার ভোরের দিকে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘুনুরঘাট এলাকার পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়ার শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি লাশটি উদ্ধার করে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের সময় নিজের ওড়না দিয়ে তার হাত-পা গলায় সঙ্গে বাধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। মুখের দাঁতগুলো ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ছিল মুখ। দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে হত্যার পর অটোচালিত গাড়িতে করে সেখানে লাশটি ফেলে যায়। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এদিকে লাশের পরিচয় জানতে ওইদিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্ত দল মৃতের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেয়। এতে তারা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারার ছবি মিলে যাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হন। পরে জানতে পারেন সে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের মেয়ে। বাড়ি বদরগঞ্জে। রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউৎ বলেন, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে ত্যক্ত-বিরক্ত করতো। হোস্টেল থেকে বাড়িতে আসলে সে নানাভাবে বিরক্ত করতো আমার মেয়েকে। এক পর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ ৫/১০/২০২০ আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। এ কথা ও নিজে বলেছে যে ও আমাকে নিজের হাতে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ বাড়ি থেকে যাওয়ার কোন এক সময় রুখিয়া ডায়েরিতে এসব লিখে রাখে। পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। বদরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শ্যামল টুডু বলেন, ‘অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই। তা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’ পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্দয়ভাবে মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেভাজন আনিছুল নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এতে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তদন্ত চলছে। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পার্বতীপুর থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আলামত হিসেবে বেশকিছু জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। (মানবজমিন)