ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১০ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ লক্ষ্য রাখুন, জঙ্গি ইস্যু প্রচারণার ফলে জঙ্গিরা যাতে হিরো না হয়: ডিএমপি...

লক্ষ্য রাখুন, জঙ্গি ইস্যু প্রচারণার ফলে জঙ্গিরা যাতে হিরো না হয়: ডিএমপি কমিশনার

0
445

জঙ্গিদের লক্ষ্যই হচ্ছে- ভীতির পরিবেশ তৈরি করা, জনমনে নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেয়া, নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা। সুতরাং এমন কোনো রিপোর্টিং করা উচিত হবে না, যে রিপোর্টে জঙ্গিবাদের পক্ষে প্রচার পায় বা সন্ত্রাস কিংবা জঙ্গিবাদকে হিরো হিসেবে উপস্থাপন করে বরং উচিত জঙ্গিরা যে দেশের শত্রু, মানবতার শত্রু তা প্রচার করা।

সোমবার (৬ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘রিপোর্টিং অন টেররিজম’ শীর্ষক এক কর্মশালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্রাব) যৌথ উদ্যোগে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকদের নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

উক্ত কর্মশালায় সিটিটিসি প্রধান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), ডিবিসি চ্যানেলের সম্পাদক জাহেদুল আহসান পিন্টু, ক্রাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ, ক্র্যাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সহ-সভাপতি মিজান মালিক, উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম, প্রলয় কুমার জোয়ার্দারসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনার আরো বলেন, হিরোইজমের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের প্রচার ও মোটিভেশন করে নতুনদের মধ্যে জঙ্গিবাদের প্রচার করা এবং নতুন জঙ্গি তৈরি করা এদের লক্ষ্য। জঙ্গিরা চায় মেইনস্ট্রিম প্রচারণা। সাংবাদিকদের জঙ্গি সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে আরো যত্নশীল হতে হবে।

জঙ্গিবাদের উত্থান সম্পর্কে কমিশনার বলেন, পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক টানাপোড়নের কারণেই আজকের এই জঙ্গিবাদের ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিল। সবশেষ নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি ঘটনা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য শুধু নয় বিশ্ববাসীর ও মানবতার জন্যও অশনি সংকেত্। এ সংক্রান্তে আমাদের বিশেষ দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হওয়া দরকার এবং আমাদের কর্মপদ্ধতি কি হবে সে ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যমতে আসা একান্ত প্রয়োজন।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে ক্ষেত্রে কমিশনার বলেন, উন্নত বিশ্ব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারেনি, আমরা পেরেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছি, আপামর জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, কারণ আমাদের গণমাধ্যম সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে হলি আর্টিজানের পরে এখন পর্যন্ত কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। কোনো কিছু ঘটার আগেই আমরা ইন্টিলিজেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছি। যার ফলে আমরা সফল হয়েছি।

অনেক বিষয় আছে যা আইন করে সমাধান করা সম্ভব হয় না। নিজের বিবেক ও সেন্সরশীপের প্রয়োজন রয়েছে। কি প্রকাশ করবো আর কি করবো না নিজের বিবেকের কাছেও প্রশ্ন থেকে যায়। সেজন্য সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সেল্প সেন্সরশীপের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দেশীয় নয়, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে ও শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলা দেখলো বিশ্ববাসী। শ্রীলঙ্কায় একাধিক হামলা হয়েছিল, কয়টা বীভৎস লাশের ছবি আমরা দেখেছি? কারণ শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকরা তাদের জাতীয় স্বার্থ বড় করে দেখেছে। তাদের স্যালুট। আমাদের দেশে এমন সব ইস্যুতে সময় এসেছে চিন্তা-ভাবনা করার, বিশেষ করে টেলিভিশন লাইভ টেলিকাস্টের ক্ষেত্রে। হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিরা ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। আমাদের অনেক মিডিয়া সেই বিভৎস ছবি প্রকাশ করেছে, গণমাধ্যমে দেখিয়েছে। জঙ্গিরা যে প্রচার চেয়েছিল তা মিডিয়ার মাধ্যমে সফল হয়েছে। অথচ শ্রীলঙ্কার মিডিয়া জঙ্গিদের ফাদে পা দেয়নি। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য সফল হতে দেয়নি।

কাউন্টার টেরোরিজম যখন অপারেশন করে তখন রিপোর্টার লাইভ প্রচার করতে চায়। এসব দেখে এক শ্রেণীর মানুষ আছে যারা এটাকে সাপোর্ট করে। নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়। বিশ্বে একটা অস্থিরতা তৈরি করে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কমিশনার বলেন, ৮০ শতাংশ গাড়ি উল্টো পথে চলত। কারো মাথায় হেলমেড ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে অরাজকতা চলে আসছিল। আমরা অভিযান চালাতে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাম। ক্রাইম রিপোর্টারদের অভয়ের কারণে আমরা বড় বড় কর্মকর্তাদের ধরেছি। কেউ কিছু করতে পারেনি। অনেক সাংবাদিক ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ৮০ শতাংশ লোক এখন উল্টো দিকে যায় না এবং ৯৫ শতাংশ লোক হেলমেড ব্যবহার করছে। সমাজের অন্যায় অবিচার অনেক কিছু আপনারা তুলে ধরতে পারেন।

আমরা দেখেছি বনানী এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার পর মানুষের সমাগম হয়েছিল। সাংবাদিকদের লাইভ প্রচারের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতে ফায়ার সার্ভিসির গাড়ি আসতে পারছিল না। একটা পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল। ‍চুড়িহাট্টা ও হলি আর্টিসানে আমরা একই অবস্থা দেখেছি। যেখানে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে সেখান থেকে দুরে থাকাই ভালো। আমরা বাধা দেই নিরাপত্তার জন্যই। যে খবরটা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে, যে খবরটা দেশবাসীকে ভীতি সন্ত্রস্ত করবে তা রুখতেই আমরা সাংবাদিকদের বাধা দেই।

জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে বিভৎসতা, সহিংসতার ছবি প্রকাশ করে জঙ্গিদের উদ্দেশ্যকে প্রচার না করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করছি। জঙ্গিরা কিভাবে মানুষকে খুন করে এই খবর প্রচার করতে হবে। জঙ্গিরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে ক্ষতি করছে সেটি নিয়ে রিপোর্ট করতে হবে।

ডিএমপি কমিশনার তার বক্তব্যের পর ‘রিপোর্টিং টু টেরোরিজম’ বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

এরপর সাংবাদিকদের সাথে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে মতবিনিময়কালে প্রশ্নের উত্তরে সিটিটিসি প্রধান বলেন, জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করতে চটকদারী সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জঙ্গিদের ভাষা যেমন- নাস্তিক, সমকামী, কাফের বা অন্য কোন স্পর্শকাতর কথা নিউজ থেকে এড়িয়ে চলা উচিত। শব্দ ব্যবহারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।

আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ বিদেশ থেকে এসেছে তা নয়, তবে আইডিয়োলজি বিদেশ থেকে এসেছে। সন্ত্রাসী হামলার ক্ষেত্রে আইডিয়া বিদেশ থেকে ধার করা হয়েছে। জঙ্গিদের জামিনের বিষয়ে আমরা ভবিষ্যতে আইনজীবিদের নিয়ে বসবো যাতে তারা জঙ্গিবাদের বিষয়টি ঘৃণার চোখে দেখে।

এরপর ডিবিসি চ্যানেলের সম্পাদক জাহেদুল আহসান পিন্টুর কাছে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে তাদের করণীয় সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করলে তিনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন।