শিরোনাম :
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে প্রার্থনা অনুষ্ঠান
সুমন কোড়াইয়া ॥ ঢাকা
বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ১৭ মে সকালে তেজগাঁও গির্জায় প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রার্থনায় পৌরহিত্য করেন তেজগাঁও ধর্মপল্লীর সহকারী পাল-পুরোহিত ঝলক এন্টনী দেশাই। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট্রের সচিব নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া, যুগ্ম মহাসচিব জেমস সুব্রত হাজরাসহ আরো অনেকে।
পবিত্র খ্রিষ্টযাগের উপদেশ বাণীতে ফাদার ঝলক এন্টনী দেশাই বলেন, ‘আজকের দিনে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালিন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টিতে দিল্লী থেকে ঢাকায় ফিরেন। কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে লক্ষ জনতা মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত আন্তরিকভাবে স্বগত জানান।’
তিনি আরও বলেন ‘তিনি দেশে ফিরে ১৫ বছর পর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারেন। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যায় তাঁর সরকার। আমরা যেহেতু দেশকে ভালোবাসি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা ও তাঁর সাথে উন্নয়নে কাজ করা।’

‘আজকের এই সুন্দর দিনে আমরা দেশের জন্য প্রার্থনা করি দেশকে ভালোবাসতে পারি। দেশ যেন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলে। তাই আসুন দেশের মঙ্গল কামনা করে, ঈশ্বরের মঙ্গল যাঞ্চা করে আজকে আমরা প্রার্থনা করি’ যোগ করে বলেন তিনি।
প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্বে আছে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত দেশের যে অবস্থা ছিল, সেই তুলনায় আজকে দেশের অবস্থা খুব ভালো। উন্নয়নের অনেকগুলো সূচকের মধ্যে একটা হলো বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন। আগে ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুৎ যেত। এখন সেগুলো গল্প ও ইতিহাসের মতো মনে হয়। এখন ঘন্টায় ঘন্টায় বিদ্যুৎ যাবে সেটা ভাবাই যায় না। বিদ্যুতের মতো দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের সমৃদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা আওয়ামী লীগের সাথে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এই প্রার্থনা সভার আয়োজন করে সংহতি প্রকাশ করছি।’
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আজ আমরা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কমনা করেছি। তাঁর নেতৃত্বে দেশের সকল ধর্মের মানুষ সমান সুযোগ লাভ করছে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারে যারা নিহত হয়েছেন তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।’
প্রার্থনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, দপ্তর সম্পাদক স্বপন রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের ঢাকাস্থ উত্তরবঙ্গ আদিবাসী শাখার সভাপতি যতিন মারান্ডি, ঢাকা ক্রেডিটের ডিরেক্টর মনিকা গমেজ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য বার্ণার্ড পংকজ রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের অতিরিক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ডমিনিক রঞ্জন পিউরীফিকেশন, চিফ অফিসার জোনাস গমেজসহ প্রায় দুই শতাধিক খ্রিষ্টভক্ত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তাঁরা দেশে ফিরতে পারেননি। বাবা, মা, ভাইসহ আপনজনদের হারানো বেদনাকে বুকে ধারণ করে পরবর্তীতে ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লীতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। ১৯৮১ সালে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নানা উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। বৈরি আবহাওয়া সত্ত্বেও ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঢাকা কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে লাখো মানুষের ঢল নামে।

সেদিন বাংলার জনগণের অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি সিক্ত হন। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’

































































