শিরোনাম :
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আর নেই
|| ডিসি নিউজ ||
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছিল সাবেক মন্ত্রীস্বাস্থ্য মোহাম্মদ নাসিমের জীবন, সেই সঙ্কট আর কাটল না।
আজ (১৩ জুন) বেলা ১১টা ১০ মিনিটে মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চলে গেলেন তিনি। রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।

১৪ জুন রোববার সকাল সাড়ে দশটায় বনানী জামে মসজিদে মোহাম্মদ নাসিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
স্বাস্থ্য বিধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকটি বিবেচনায় নিয়ে নাসিমের মরদেহ জন্মভূমি সিরাজগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না বলে জানান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মোহাম্মদ নাসিমের বড় ছেলে তানভীর শাকিল জয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক সাংবাদিকদের জনান, আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০ টায় বনানী কবরস্থান মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় আগামীকালের জানাজায় দলীয়- নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে উপস্থিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা সবাই যে যার অবস্থান থেকে তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি যেহেতু দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেছে, তাই দেশের এই পরিস্থিতিতে তার মরদেহ কোথাও নেয়া হবে না। আগামীকাল সাড়ে ১০ টায় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
মোহাম্মদ নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলেসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. এস এ মালেক ও আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ,ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হকইনুসহ মন্ত্রী সভার সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন।
১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। পরে রাতে তার করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায় মোহাম্মদ নাসিম ৫ জুন ভোরে স্ট্রোক করেন। পরে জরুরিভাবে তার অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর চিকিৎসকরা তাকে প্রথমে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখেন। পরে পর্যবেক্ষণের সময় আরও ৭২ ঘন্টা বৃদ্ধি করা হয়। এরপরে অবশ্য তার করোনা টেস্ট দুইবারই নেগেটিভ আসে।
৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।
১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ নাসিম। তার পিতা পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। যিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম এম মনসুর আলী ৩ নভেম্বর জেলখানায়য় ঘাতকদের হাতে নিহত হন।
মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন, যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন।
পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ।

মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এর আগে ১৯৯৬ সালের সরকারে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দলীয় মহাজোটের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন।
দেশে দুইজন মন্ত্রী ও সাতজন সাংসদ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম আজ মারা গেছেন।

































































