শিরোনাম :
হাসনাবাদ এলাকায় অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের শিক্ষা সেমিনার
ডিসিনিউজ ।। হাসনাবাদ
বান্দুরা এলাকার হাসনাবাদ ধর্মপল্লীর টি. এ গাঙ্গুলী হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ক্রেডিটের শিক্ষা সেমিনার।
৩০ মে, সকাল ১১টায় ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজের নেতৃত্বে এই শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন গণ্যমান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, হাসনাবাদ ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত কল্লোল লরেন্স রোজারিও, তুইতাল সমিতির চেয়ারম্যান খ্রিষ্টফার গমেজ, নয়নশ্রী সাধু রকের খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান যোসেফ শ্যামল গমেজ, হাসনাবাদ সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান রক্সি গমেজ, সেক্রেটারি প্রীতি আঞ্জেলা গমেজ, তুইতাল সতিমির সেক্রেটারি অঞ্জলী দেছা, ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা সেলেস্টিন রোজারিও, যোসেফ নির্মল গমেজ, এন গমেজ, নিকোলাস সত্য গমেজ, শ্যামল এন্থনী গমেজ ও সুশান্ত এন্থনী গমেজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলন গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান নির্বাহী অফিসার জোনাস গমেজসহ ঢাকা ক্রেডিটের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ।

এ দিন বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ, নিরাপদ হালদার, মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ, ডন এ. অধিকারী, শিপন রোজারিও, ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান উমা ম্যাগডেলিন গমেজ, সদস্য যতীন মারান্ডী, সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি সুহৃদ গমেজ, সদস্য মারিয়া ডি’কুনা ও মলয় নাথ শিক্ষা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘এই দিনে আপনাদের ঢাকা ক্রেডিটের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আজ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের অগ্রদূত ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’কে। পাশাপাশি স্মরণ করি আঠারোগ্রামের কৃতি সন্তানদের, যারা বিভিন্ন সময়ে ঢাকা ক্রেডিটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বর্তমানে শুধু ঋণ ও সঞ্চয় দিয়ে সমিতি পরিচালনা করা এবং কর্ম-সংস্থান সৃষ্টি করা যায় না, তাই আমাদের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে প্রায় ১২শ কর্মী ঢাকা ক্রেডিটের কাজ করছে। সময় পরিবর্তন হচ্ছে, তাই সময়ের সাথে সাথে সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিবর্তিত হয়ে আপডেট করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে হবে আমাদের। আমরা ইতিমধ্যে ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল শুরু করেছি, যেখানে স্বল্প খরচে মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু ও যুবাদের বিষয়ে নজর দিতে হবে। আমাদের বি-সেভার্স ও স্মার্ট-সেভার্স রয়েছে যেখানে ঢাকা ক্রেডিট ছোটবেলা থেকেই শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তীতে যুব বয়সে তারা সরাসরি ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হয়ে যাবে। যুবাদের বিষয় চিন্তা করে ইতিমধ্যে আমরা নার্সিং ইনস্টিটিউট শুরু করেছি, খুব শিঘ্রই মেডিকেল কলেজ শুরু করতে পারবো। আমাদের ছেলে-মেয়ে এখন স্বল্প খরছে নার্স ও ডাক্তার হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। পাশাপাশি অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকা ক্রেডিটের সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে পারছে।’

‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ঢাকা ক্রেডিট সদস্যদের জন্য কাজ করে। একজন শিশু জন্ম নেওয়ার পরই ঢাকা ক্রেডিট নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে শিশুটিকে ঢাকা ক্রেডিটের বি-সেভার্সের সদস্য করে নেয় এবং একজন সদস্য মারা যাওয়ার পর অর্থ দিয়ে সৎকারে সহযোগিতা করে মৃত্যুকালীন সময়েও ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে’ বলেন প্রেসিডেন্ট কোড়াইয়া।
স্বাগত বক্তব্যের পর সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ঢাকা ক্রেডিটের উপর মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন প্রডাক্ট, প্রকল্প, অর্জন এবং সার্বিক চিত্র উপস্থাপনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সদস্যদের কথা ভাবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সদস্যবান্ধব প্রকল্প ও প্রডাক্ট নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতাল বর্তমানে পুরোদ্যমে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিয়মিত বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মসংস্থান।’

এ সময় তিনি ঢাকা ক্রেডিটে বিভিন্ন প্রকল্পসেবা ও প্রডাক্ট গ্রহণ করে নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য উৎসাহ প্রদান করেন।
পাল-পুরোহিত কল্লোল বলেন, ‘আমরা যেন সবকিছু নিয়ে চিন্তা করি এবং সুন্দর ভাবনা নিয়ে সবকিছু করার চেষ্টা করি। ঢাকা ক্রেডিট প্রায় ৭ দশকের ধারক ও বাহক। আমরা জানি ব্যয় করা খুবই সহজ, কিন্তু সঞ্চয় করা কঠিন। তাই আয় বুঝে ব্যয় করেই যেন আমরা সঞ্চয় করি, ঢাকা ক্রেডিট আমাদের সেই শিক্ষা দেয়। ফাদার চার্লস সুন্দর স্বপ্ন নিয়েই আমাদের এই প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন, আমরা যেন তা অনুধাবন করে পথ চলি।’
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের এই যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা ঘটেছে শুধু মাত্র ধারাবাহিক নেতৃত্বে কারণে। আর এই ধারাবাহিক নেতৃত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে আপনাদের সহযোগিতায়। আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যুব সমাজ। এই যুব সমাজ হলো আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। আমাদের যুবাদের নেতৃত্ব গুনাবলীসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুদের বিকাশ ঘটাতে হবে, আর যুবাদের যত্ন নিয়ে গড়ে তুলতে হবে।’
‘সমবায়ের মাধ্যমে জীবনমান পরিবর্তন করে উন্নত জীবন গড়ে তোলাই হলো লক্ষ্য। এই পরিবর্তন হতে হবে ইতিবাচক, তাহলে সঠিক উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের কেউ করে দিবে না, তাই আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে লড়াই করে নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তাই আমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ধারাবাহিক নেতৃত্ব বজায় রাখতে হবে’ বলেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রোজারিও।
এদিন অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সাহসী ভ‚মিকা নিয়ে কাজ করে। ঢাকা ক্রেডিট যে সফট্ওয়্যার ও অ্যাপ নিয়ে এসেছে, তা বর্তমান সময়ের একটি অনন্য ব্যবস্থাপনা। ঢাকা ক্রেডিট ৫০ হাজার টাকা ঋণ অ্যাপের মাধ্যমেই দেয়, এই ঋণের জন্য কোনো আবেদনের প্রয়োজন নেই। আমাদের এই ডিজিটাল সেবা সকলেরই ব্যবহার করা উচিত। ঢাকা ক্রেডিট হাসপাতাল করেছে, এত উন্নতমানের হাসপাতাল করা সমবায়ের জন্য অনেক সাহসের ব্যাপার, কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট সেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছে। শুরুতে অনেকেরই শঙ্কা ছিল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কিনা, কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট তা করে সবার শঙ্কা দূর করেছে। আমাদের সদস্যদের আরো একটি সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে, আমরা যারা স্বাস্থ্যনিরাপত্তা প্রকল্পের সদস্য সকলেই হাসপাতালে অনেক বড় অংকের চিকিৎসা সহযোগিতা পাবো প্রিমিয়াম অনুসারে। সুতরাং এই সুবিধাগুলো আমাদের গ্রহণ করা দরকার। আমরা সচেতন হলে ঢাকা ক্রেডিট নামক বিশাল নিরাপদ ছাতা আমরা ব্যবহার করতে পারবো।’

শিক্ষা সেমিনারে ঢাকা ক্রেডিট ও ডিভাইন মার্সি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়।
বোর্ড অব ডিরেক্টর মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ ও ক্রেডিট কমিটির চেয়ারম্যান উমা ম্যাগডেলিন গমেজসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শিক্ষা সেমিনারটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন প্রোগ্রাম ও প্রটোকল চীফ অফিসার স্বপন রোজারিও।
শেষে ডিরেক্টর মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষা সেমিনার সমাপ্ত হয়।
































































