ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করলেন স্পিকার

উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করলেন স্পিকার

0
663

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এর উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপী উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯ এর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় রাজধানীর কুড়িলে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ডিএমপির সিটিটিসি, ইউএস-এইড ও ইউএন এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ এমন একটি জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করায় উদ্যেক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্পিকার বলেন, উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হলে এই বার্তাটি সারা বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে।

এই সম্মেলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিদেশী কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

স্পিকার  বলেন, সহিংস উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কোন একটি দেশ এককভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে পারবে না। সহিংস উগ্রবাদ থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিজের দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্য দেশে অর্থাৎ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফোরামগুলোতে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সমগ্র বিশ্বে একটি কনসেপ্ট বা ঐক্যমত আছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে জড়িতরা দেশের শত্রু, সভ্যতার শত্রু, মানবতার শত্রু। আজকে সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ শান্তি ও নিরাপত্তার চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। টেরোরিজম, এক্সট্রিমিজম, ভায়োলেন্স কোনভাবেই সারা বিশ্বের কাছে আর গ্রহণযোগ্য নয় সেটা স্পষ্ট আজ। সেজন্য আমাদের ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্টিগতভাবে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন কনসেপ্ট ও কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

জাতিসংঘ কর্তৃক একটি গ্লোবাল স্ট্রাটেজি ২০০৬ সালে গ্রহণ করা হয়েছে। সারা বিশ্বের নেতৃবৃন্দরা ওই গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিতে সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটার প্রক্রিয়া আগে চিহ্নিত করার উপর গুরুত্বারোপ করে স্পিকার বলেন, সন্ত্রাসীরা কিভাবে কি কারণে সন্ত্রাসী হয়, জঙ্গি হয় ও উগ্রবাদী হয় সেটা খুঁজে বের করতে হবে। তাহলে কি কারণে তারা এই পথ বেছে নেয় সেটি আমাদের চিহ্নিত করতে হবে, এটা খুবই জরুরী। সেই দিকটি লক্ষ্য রেখেই গ্লোবাল স্ট্রেটেজিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘসূত্রতা সাথে যদি কোন বিরোধ চলমান থাকে সে কারণে এই ধরনের উগ্রবাদের জন্ম হতে পারে। সেগুলো খুঁজে বের করাও জরুরী। আমরা জানি কোন সন্ত্রাসী, জঙ্গির কোন দেশ নেই কোন ধর্ম নেই।

আজকে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতাকে মোকাবেলা করতে হলে আমাদের দারিদ্র ও সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। আমাদের তরুন প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সহিংসতার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণা তৈরি করতে হবে, যাতে করে তাদের মধ্যে কোন ধরনের হতাশা ও নৈতিকতার অবক্ষয় না ঘটে। আমাদের আর্থ-সামাজিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে ধরনের কার্যক্রমই গ্রহণ করেছেন।

কোন সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের জন্য আমাদের দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে স্পিকার বলেন, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদের জন্য অভ্যন্তরীণ কোন ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিবো না। এই জায়গাটাতে আমাদের সবাইকে অটল থাকতে হবে। কোন ধরনের উগ্রবাদ জঙ্গীবাদের কোন ক্যাম্প বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেন আমাদের দেশের কোনো ভূখন্ডে না গড়ে ওঠে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে আমাদের তথ্য আদান-প্রদান বাড়াতে হবে, আরো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে আগে অর্থায়ন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে এন্টি মানি লন্ডারিং আইন ২০০৯ সালে তৈরি করা হয়েছে এবং সেটা যুগোপযোগী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হচ্ছে আমাদের যে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট তারা তাদের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে যাচ্ছে। তারা সহিংসতার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান তৈরি করেছে। তার পাশাপাশি আমরা যারা স্টেকহোল্ডার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, কর্মজীবী, আইনজীবী, কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ আছি আমাদেরও দায় রয়েছে। আমরা সমাজে বসবাস করতে চাই। সেজন্য আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ হবে সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ গড়ার মূল্যবোধ। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে আমাদের সবারই উচিত সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করা। পারিবারিক অবস্থান থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট হতে হবে। সে চেষ্টা আমাদের সবাইকে করতে হবে।

স্পিকার আরও বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও কাউন্টার ন্যারেটিভ অর্থাৎ উগ্রবাদ বিরোধী যুক্তিগুলো সক্রিয়ভাবে তুলে ধরতে হবে, প্রচার করতে হবে। এটা খুবই জরুরী। আইনের শাসন পরমত শ্রদ্ধায় দৃষ্টি দিতে হবে। সমগ্র বিশ্বের সকল সফলতাকে নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। যাতে আমাদের সফলতা বিফলে না যায় সেজন্য সবাইকে সহিংসতা ও উগ্রবাদ রুখে দিতে হবে এজন্য জনসচেতনতা ছাড়া এটা সম্ভব না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সমন্বয়ের অভাবে উগ্রবাদ বিরোধী কাজ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয়নি। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তা শুরু হলো। আলোচনার মাধ্যমে উগ্রবাদ দমন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাই আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে পূনর্বাসন কার্যক্রম চালিয়ে বিপথগামীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গহর রিজভী বলেন, তিন বছর আগে উগ্রবাদ এ দেশে মাথাচাড়া দিয়েছিলো। পরবর্তীতে সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় সেই পরিস্থিতির উত্তরণ হয়েছে। তবে উগ্রবাদ বিরোধী এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া উগ্রবাদ দমন সম্ভব না বলেও জানান তিনি।

ইউএন রেসিডেন্ট কোডিনেটর মিয়া সেফো (Mia Seppo) বলেন, উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি। উগ্রবাদ নির্মূলে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। তাদের হাত ধরেই এই সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশীজনদের উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বিশেষ অতিথি ইউএস অ্যাম্বাসিডর আর আর মিলার বলেন, ইউএস সরকার উগ্রবাদ প্রতিরোধে ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করছে। উগ্রবাদ দমনে ইতিমধ্যেই ৩৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো সহায়তা করতে ইউএস সরকার প্রস্তুত রয়েছে।

সম্মেলনের প্রথম সেশনের পর কাউন্টারিং ভায়োলেন্ট এক্সট্রেমিজম ফ্রম বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশন শুরু হয়। এই সেশনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার কারণ, জড়িয়ে পড়ার লক্ষণ, সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে সিটিটিসি কর্তৃক গৃহীত সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

তৃতীয় সেশনে সহিংস উগ্রবাদ বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা অভিজ্ঞতা সম্মেলনে আগতদের সামনে তুলে ধরেন বক্তারা। আর এরই মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন ২০১৯ এর প্রথম দিন শেষ। আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) এবং ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম(বার)। (বিজ্ঞপ্তি)