ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট উৎসবমুখর পরিবেশে সকল সদস্যের অংশগ্রহণে ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ অনুষ্ঠিত

উৎসবমুখর পরিবেশে সকল সদস্যের অংশগ্রহণে ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ অনুষ্ঠিত

0
620

ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
সকল সদস্যের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর ৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় ফার্মগেট বটমলী হোম বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে।
৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এই বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক জনাব মো: আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় সমবায় যুগ্মনিবন্ধক এসএম তারিকুজ্জামান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস্ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নির্বাহী সদস্য রেমন্ড আরেং, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন।
বার্ষিক সাধারণ সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয়, সমবায়ী ও সমিতির পতাকা উত্তোলন করে বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়।


ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা ক্রেডিট দারিদ্র ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণ করতে কাজ করে যাচ্ছে। এই সমিতি ১৬টি সঞ্চয়ী প্রডাক্ট, ৩৩টি সেবাপ্রকল্পসহ মোট ৮২টি প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই মহাকর্মযজ্ঞের মাধ্যমে হাজার হাজার সদস্যের জীবনমানের দৃশ্যমান পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নের এই সুফল শুধুমাত্র সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবির ধারাবাহিকতায় ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ২১-এর (১) বিধি সংশোধনপূর্বক প্রতিস্থাপিত করে প্রতিনিধির পরিবর্তে নির্বাচন ও সাধারণ সভায় সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। এরই মাধ্যমে ঢাকা ক্রেডিটসহ সকল সমবায় সমিতি ও সমবায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূর্ণতা লাভ করেছে। সাধারণ সদস্যদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
তিনি ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সমানে এগিয়ে নিতে যারা সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানান।
সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক জনাব মো: আমিনুল ইসলাম ঢাকা ক্রেডিটের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট একটি মডেল। আমি যেখানেই যাই সেখানেই ঢাকা ক্রেডিটের কথা বলি। এই সমিতি আমার অহংকার।’


তিনি আরো বলেন যে ঢাকা ক্রেডিট গুণগতমানের অনেক উন্নয়ন করছে। নারী ক্ষমতায়ন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে ঢাকা ক্রেডিট।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সমবায়ে যাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে, তাঁদের নেতৃত্বে আনতে হবে। কিছু মানুষ না বুঝে সমালোচনা করে, তাদের বুঝাতে হবে।’
ময়মনসিংহ-১ আসনের সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং এমপি উল্লেখ করেন যে, ঢাকা ক্রেডিট খ্রিষ্টান সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক কাজ করে যাচ্ছে। শুধু সামাজিকভাবে নয়, ঢাকা ক্রেডিট যেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে সকলের পাশে থাকতে পারে তিনি এই আশাব্যক্ত করেন।


তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত সুব্রত বি গমেজ বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট আমাদের ধর্মপল্লীতে অবস্থিত এবং এই ধর্মপল্লীর মানুষ ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছেন, আমাদের ধর্মপল্লীও উপকৃত হচ্ছে। আমি ঢাকা ক্রেডিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ওয়াইএমসিএস্ অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ করোনা মহামারির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘সারা বিশ^ এক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে আমরা অনেককে হারিয়েছি। এক-দেড়শ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে গেছে। হাজার হাজার কর্মী ছাটাই করতে হয়েছে। তাদের অনেক আউটলেট বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসা বন্ধ করতে হয়েছে। তার মধ্যেও ঢাকা ক্রেডিট এরকম একটা পরিস্থিতিতে যেভাবে লকডাউনের সময় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরও যে সদস্যদের লভ্যাংশ দিতে পেরেছে, সরকারের সাথে মহামারী মোকাবেলা করতে পেরেছে, আমি এজন্য ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমান বোর্ডকে অভিনন্দন জানাই।’


দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন যাঁরা বিগত দিনে ঢাকা ক্রেডিটে অবদান রেখেছেন, তাঁদের প্রতি বিনম্র শদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট একটি পুরাতন সমবায় সমিতি। এই দীর্ঘ সময় পথ চলায় সমবায়ীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ঢাকা ক্রেডিট ঋণ আদান প্রদানের বাইরেও যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করছে, তার মধ্য দিয়ে আমাদের কল্যাণ সাধন হবে। বিশেষ করে ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর সমাজকে সেবা দিতে পারবে।’
৬০তম বার্ষিক সাধারণ সভায় ১৪ হাজার সদস্যসহ আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, ট্রেজারার পিটার রতন কোড়াইয়া, ঢাকা ক্রেডিটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন টমাস রোজারিও, বহুমুখী খ্রিষ্টীয়ান সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার, নাগরী ক্রেডিটের চেয়ারম্যান সুমন লরেন্স রোজরিও, মাউসাউদ ক্রেডিটের চেয়ারম্যান ডেভিড প্রবীণ রোজারিও, ধরেন্ডা ক্রেডিটের চেয়ারম্যান মাইকেল গমেজ, হাসনাবাদ ক্রেডিটের চেয়ারম্যান নিকোলাস রাজু কোড়াইয়া, গোল্লা ক্রেডিটের চেয়ারম্যান টমাস রোজারিও, তুমিলিয়া ক্রেডিটের ভাইস-চেয়ারম্যান ভিনসেন্ট প্রদীপ রিবেরু, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির ভাইস-চেয়ারম্যান ডেভিড রোজারিও, ঢাকাস্থ রাঙ্গামাটিয়া বহুমুখী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান পলাশ জোনাস কস্তা, রাঙ্গামাটিয়া ক্রেডিটের চেয়ারম্যান প্রবীন ডমিনিক কস্তা, হারবাইদ ক্রেডিটের চেয়ারম্যান পবিত্র ফ্রান্সিস কস্তাসহ আরো অনেকে।
অতিথিদের বক্তব্য পর্বের পরে ছিলো সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যক্রম। এ সময় সমিতির সাধারণ সদস্যরা ঢাকা ক্রেডিটের নির্মিয়মাণ ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের উদ্যোগকে আন্তরিক সমর্থন করেন।
তাঁরা বলেন, এই ধরনের হাসপাতালের প্রয়োজন রয়েছে যা সমিতির আরো বেশি সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে। তাঁরা আশা করেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং নির্দিষ্ট সময়েরে মধ্যেই জনগণ সেখান থেকে সেবা পেতে পারবেন।


শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস। তিনি বার্ষিক সাধারণ সভা সফল করার জন্য যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানান।

সর্বশেষে ছিলো কোরাম পূর্তি, সাধারণ লটারী এবং ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের বন্ডের লটারী ড্র।
ঢাকা ক্রেডিট দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি স্বনামধন্য সমবায় প্রতিষ্ঠান। এই সমিতি প্রান্তিক সদস্যদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। সদস্যরা এই সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে উৎপাদনমুখী কার্যক্রম করছে। ১৯৫৫ সালে যাত্রা করা ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার সদস্যের সাড়ে ৭ শ কোটি টাকা মূলধন রয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ কর্ম এলাকা হলেও দেশের আপমর জনগণ ঢাকা ক্রেডিটের সেবা নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমানে মেগাপ্রকল্প গাজীপুর মঠবাড়ীতে ৩শ বেডের ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে এবং ২০২২ সালের মধ্যেই এই হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হবে।
এ ছাড়াও ঢাকা ক্রেডিটের সর্বসাধারণের জন্য রয়েছে স্কুল, আন্তর্জাতিকমানের চাইল্ড কেয়ার এন্ড এডুকেশন সেন্টার, বিউটি পার্লার ও ট্রেনিং সেন্টার, জিম, সমবায় বাজার আউটলেট, কালচারাল একাডেমিসহ আরো অনেক অসংখ্য প্রকল্প।
ঢাকা ক্রেডিটই সর্বপ্রথম এবং একমাত্র সমবায় প্রতিষ্ঠান যেখানে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটালইজেশনের উদ্যোগের সাথে সংহতি জানিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের এটিএম সার্ভিস, ঢাকা ক্রেডিট অ্যাপ, সমবায় বাজার অ্যাপসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করছে। ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে এ প্রায় সাড়ে ৬শ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।


উল্লেখ্য, ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা ক্রেডিট সব সময়ই সদস্যদের সরাসরি অংগ্রহণে বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন করে আসছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের নির্বাচনকে ঘিরে একটি মহল নিজেদের স্বার্থ আদায়ে মামলা করে। বিরোধী দলখ্যাত কুচক্রি মহলের সুজন ডেনিস কোড়াইয়া নামে জৈনিক এক ব্যক্তি ২১-এর (১) বিধি অনুসারে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য মামলাটি করেন। এতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে পরবর্তী নির্বাচন ও বার্ষিক সাধারণ সভাগুলো প্রতিনিধির মাধ্যমে করতে হয়েছে। ফলে সদস্যদের গণতান্ত্রিক অধিকারও হরণ হয়। কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট ও বিভিন্ন ব্যক্তির সহযোগিতায় ১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ উক্ত ধারাটি আইনিভাবে সংশোধন করা হয় এবং সদস্যরা তাদের অধিকার ফিরে পেয়ে আজকের বার্ষিক সাধারণ সভায় আনন্দ মনে অংশগ্রহণ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।