ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণ

আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণ

0
1348

বিপুল আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ করলেন ঢাকা ক্রেডিটের নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিচালনা পর্ষদ। তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টায় তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী বিশপ থিয়োটনিয়াস গমেজ সিএসসি।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি এবং আরো অনেক বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা ক্রেডিট।

শপথ গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেস্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ট্রেজারার বিপুল গমেজসহ ডিরেক্টর বোর্ড, ক্রেডিট কমিটি, সুপারভাইজরি কমিটিসহ মোট ২২ জন প্রতিনিধি।

05প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান, ঢাকা জেলার সমবায় অফিসার মো. আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা খ্রীষ্টান হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশনসহ সমাজের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যগণ

শফথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ বলেন, ‘আমি প্রথমবার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন সম্পদ-পরিসম্পদ ছিলো ২৭৮ কোটি টাকা, আজ আনন্দচিত্তে বলতে পারি, আজকে আমরা ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, সেখানে ১৫শ মেম্বারের সার্ভের মাধ্যমে কয়েকটি ফোকাল গ্রুপের মধ্য দিয়ে তা গ্রহণ করেছি। আগামী ২০ সালে ৯শ কোটির টাকার সমিতি হিসেবে ঢাকা ক্রেডিট গর্ব করবে এবং ১ হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানের জায়গা হবে। আমরা আশা করছি আপনাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাব।

সমবায় প্রতিমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘৩ হাজার সদস্যের বেশি হলে সমবায় আইনে প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনের কথা বলা আছে তা যেন সংশোধনের মাধ্যমে সমবায় মন্ত্রণালয় বাতিল করেন। প্রতি বছর সদস্যরা ঐতিহ্যনুসারে নিজেরা ভোট দেন, কিন্তু এবার বিরোধী প্যানেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনের রায় দেন। ফলে বাধ্য হয়ে এভাবে নির্বাচন করতে হয়েছে।

04এই ধরনের আইন থাকলে আমাদের সদস্যদের অধিকার নষ্ট হয়। তাই সদস্যরা যেন সরাসরি এজিএম এবং নির্বাচনে অংশ নিতে পারে তার জন্য বিবেচনা করে প্রতিমন্ত্রীর নিকট এই আইনের ধারা বাতিল করার আহ্বান জানাই। আমরা আশা করি, আপনার মন্ত্রণালয় চাইলে প্রজ্ঞাপন জারি করে আবশ্যিক শব্দটি বাদ দিলে সদস্যরা তাদের নিজেদের অধিকার ফিরে পাবে।

আপনার মাধ্যমে সদস্যরা যদি তাদের অধিকার ফিরে পায়, তাহলে সমবায়ের খাতায় আপনার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি আরো বলেন, সমবায় অধিদপ্তর সমবায়ের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অনেক সহযোগিতা করেছে। আপনাকে ঢাকা ক্রেডিটের কার্যক্রম দেখাতে পারলে আপনি অবগত হতেন ক্রেডিট আন্দোলনে ঢাকা ক্রেডিট কতটা অবদান রেখেছে।

01প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের খ্রিস্টান সমাজ নিয়ে অনেক ভাল একটা ধারণা ছিলো, তা অনেকটা এই নির্বাচনের মাধ্যমে নষ্ট হয়েছে। বিরোধী কিছু মানুষ খ্রিস্টানদের সুনাম নষ্ট করেছে। বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনের মধ্যমণি ঢাকা ক্রেডিট। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছি। আপনাদের কাজের ধারণা সকলের কাছে পৌঁছে দিলে আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণ হবে। সমবায় আন্দোলনের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিধি সমবায় অধিদ্পত্র বাতিল করবে বলে আমরা আশা করছি।

প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আমি ঢাকা ক্রেডিটকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের দিনের জন্য। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও জানাচ্ছি অনেক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ। এবার নির্বাচন নিয়ে সমস্যা হয়েছে যা আমি জানি এবং হস্তক্ষেপও করতে হয়েছে। আমি ডিসিওকে বলেছি তিনি যেন নির্বাচন সম্পন্ন করেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখেছি, তারা কোনো না কোনো সমবায়ের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ সরকার সমবায়ের উপরও অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি সমবায়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।’

তিনি আরো বলেন, আমরা সমবায়কে আরো গণমুখি করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সমবায় ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমবায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে অনেক কিছুই সম্ভব। এই সংগঠনের বিরোধিতা করলে, সংগঠনেরই ক্ষতি হবে। যারা বিরোধিতা করেছে তারা ভুল করেছে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাহেব তাদের ডেকে নিবেন। এতো দিন এখানে প্রতিনিধির নির্বাচন হয়নি, শুধু আইনের প্রতি সম্মান রাখতে আপনাদের নির্বাচন দিতে হয়েছে। আমি এই ধারা তুলে দিবো কথা দিলাম। চল্লিশ হাজার মানুষের মাধ্যমে নির্বাচন হলেই তা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবে।

02আজকে আমি আপনাদের সদস্য হলে আপনাদের সারিতে বসতে পারতাম। আমরা বাংলাদেশে একটি সময়োপযোগি সমবায় গড়তে চাই। যার একটি উদাহরণ ঢাকা ক্রেডিট সমবায় আন্দোলন। আমি ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য হই বা না হই এটা আমার সংগঠন। আমি এই সংহঠনের সকল প্রকার সহযোগিতা দিবো।

বিশপ থিয়োটনিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। কারণ এর পুরোধা আমরা। ক্রেডিটের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সবার আত্মিক উন্নয়নও যেন হয় সে দিকটিও দেখতে হবে। আজকে যে শপথ নেওয়া হল যেন প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়, হৃদয়ে অনুভব করে। সুন্দর ক্রেডিট আমাদের দ্বারাই গোড়াপত্তন হয়েছে, সুন্দর ক্রেডিট আমাদের দ্বারাই এগিয়ে যাবে। সমবায় মানেই এক। সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করি।’

খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, ‘৩৩ দফা নির্বাচনী ইস্তেহার বাস্তবায়ণ করতে হবে। সেই লক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ তিনি বর্তমান বোর্ডের সকল কর্মকান্ডের সাফল্য কমনা করেন।

হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, ‘সুযোগ্য প্রেসিডেন্টের হাত ধরে ঢাকা ক্রেডিট এগিয়ে যাবে। আজকের শপথ বাক্যের মধ্য দিয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে বাবু মার্কুজের নেতৃত্বে সেটি বেগবান হবে, লক্ষে পৌঁছাবে সেই কামনা করি।

দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং ঐতিহ্যে মোড়া একটি আর্থিক সমবায় প্রতিষ্ঠান। একজন মিশনারী ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ১৯৫৫ সালে ঢাকা ক্রেডিট-এর প্রতিষ্ঠা করেন।

গত ১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল ভোটে বাবু মার্কুজ গমেজের প্যানেল জয়লাভ করে। ১৬ জানুয়ারি বিদায়ী কার্যকরি পরিচালনা পর্ষদ নবনির্বাচিত বোর্ডের নিকট দায়িত্বভার তুলে দেন। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল, মোট তিন বছরের জন্য শপথগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের এই প্রতিষ্ঠানকে (ঢাকা ক্রেডিটকে) নেতৃত্ব দেবেন।

নবনির্বাচিত বাইশ জন কর্মকর্তার প্রোফাইল প্রদর্শনসহ এই প্রতিষ্ঠানের ৬২ বছরের ঐতিহ্য প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। সততা, বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার সাথে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে গত ৬২ বছরে এই প্রতিষ্ঠান বিন্দু থেকে সিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ১৯৫৫ সালে প্রারম্ভিক ২৫ টাকা মূলধন থেকে বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে এর সম্পদ-পরিসম্পদ। ঋণ দেওয়া-নেওয়ার পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানে গড়ে ওঠেছে নানা কল্যানমূলক ও আয়বর্ধক প্রকল্প।

আরবি/এসএস/আরপি/ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭