‘সমবায় একটি গণতান্ত্রিক ও মানুষে মানুষে মিলনের সংগঠন,’ গোল্লায় অনুষ্ঠিত ঢাকা ক্রেডিটের আঞ্চলিক শিক্ষা সেমিনারে বক্তারা

ডিসিনিউজবিডি।। গোল্লা, নবাবগঞ্জ

ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জ উপজেলার গোল্লা এলাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গির্জা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ক্রেডিটের গোল্লা আঞ্চলিক শিক্ষা সেমিনার।

১১ জুলাই, সকালে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজের সঞ্চালনায় এই শিক্ষা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সদস্যদের জন্য বিশেষ কুইজ অংশটি পরিচালনা করেন বোর্ড ডিরেক্টর শিপন রোজারিও।

শিক্ষা সেমিনারের শুরুতেই পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ ও প্রার্থনা পরিচালনা করেন ফাদার রিগ্যান পিউস কস্তা। পরে উদ্বোধনী নৃত্যের মাধ্যমে শিক্ষা সেমিনার শুরু হয়।

ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ঢাকা ক্রেডিটের সকল কর্মকর্তাকে উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেন।

এদিন নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, গোল্লা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত গাব্রিয়েল কোড়াইয়া ও সহকারী পাল-পুরোহিত রিগ্যান পিউস কস্তা, ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন ম্যানেজার নিপুন সাংমা, গোল্লা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর চেয়ারম্যান ডানিয়েল সচী রোজারিও, আঠারোগ্রাম খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর চেয়ারম্যান আগষ্টিন বিজয় গমেজ, ছোট গোল্লা কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর চেয়ারম্যান শ্যামল ফ্রান্সিস রোজারিও, সিষ্টার মার্গারেট গমেজ আরএনডিএম, ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা টমাস রোজারিও, আঠারোগ্রাম খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর ভাইস-চেয়ারম্যান রোলেন্ড গমেজ, বিভিন্ন সমবায় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

ঢাকা ক্রেডিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব ডিরেক্টর মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ, প্রত্যেশ রাংসা, মনিকা গমেজ, শিপন রোজারিও, ও সুমন জেমস ডি’ কস্তা, সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য মারিয়া ডি’কুনা ও মলয় নাথ, ক্রেডিট কমিটির সেক্রেটারি মোশী মন্ডল, ঢাকা ক্রেডিটের সিইও জোনাস গমেজ ও চীফ অফিসার বিপুল টি গমেজ।

সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ শুরুতেই প্রেসিডেন্টের পক্ষে স্বাগত বক্তব্যে বলেন, “আজকের শিক্ষা সেমিনার যা ঢাকা ক্রেডিটের চলমান প্রক্রিয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিগত দিনে এই এলাকাবাসী ন্যায় সত্য সুন্দর দলকে সমর্থন দিয়েছেন। যার ফলে আজকে এই বিশাল সম্পদ পরিসম্পদের প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”

তিনি বলেন, আমরা পরিচালনা পরিষদ আপনাদের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছি। আপনারা ভবিষ্যতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিবেন। এই নবাবগঞ্জ-দোহার এলাকায় আমাদের অনেক বড় কর্মযজ্ঞ রয়েছে।

“আমরা আমাদের মূল শ্লোগান ‘কর্মসংস্থান আমাদের লক্ষ্য-আত্মনির্ভরশীল সমাজ আমাদের স্বপ্ন’ যা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল ও নার্সিং ইনষ্টিটিউট। আমরা ডিভাইস মার্সি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চলমান রেখেছি এবং সেখান থেকে আমাদের ছেলে মেয়েরা সামনের দিনে ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে আসবে।” বলেন সেক্রেটারি গমেজ

সেক্রেটারি বলেন, ঢাকা ক্রেডিট স্বল্প খরচে বা প্রয়োজনে ঋণ সুবিধা দিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ডাক্তার হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। আগামী ঢাকা ক্রেডিটের সুযোগ সুবিধা দিন দিন আরো আরো বৃদ্ধি পাবে।

সিষ্টার মার্গারেট গমেজ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমরা ঢাকা ক্রেডিট সম্পর্কে যা জানলাম তা জেনে আমি গর্বিত কারণ, প্রতিষ্ঠানটি আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের কথা চিন্তা করে অনেক ধরণের প্রকল্প ও সুবিধা হাতে নিয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েরা যদি শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তাহলে ঢাকা ক্রেডিট আমাদের পাশে আছে, ঢাকা ক্রেডিট হলো উন্নয়নের চাবিকাঠি।” সিস্টার ঢাকা ক্রেডিটের সাথে যুক্ত প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা ক্রেডিটের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে গোল্লা ধর্মপল্লীর আওতাধীন সকলকে এবং মঞ্চে ও মঞ্চের সামনে উপস্থিতিদের স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া ঢাকা ক্রেডিটের ৪৭-হাজার সদস্যের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “আজ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি বাংলাদেশের ক্রেডিট ইউনিয়নের অগ্রদূত ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি’কে। যার দ্বারা সৃষ্টি প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রায় ১১’শ কর্মী কাজ করছে। আমরা ইতিমধ্যে ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল শুরু করেছি, যেখানে স্বল্প খরচে মানুষ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের অসংখ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু ও যুবাদের বিষয়ে নজর দিতে হবে। যুবাদের বিষয় চিন্তা করে ইতিমধ্যে আমরা নার্সিং ইনস্টিটিউট শুরু করেছি, খুব শিঘ্রই মেডিকেল কলেজ শুরু করতে পারবো। আমাদের ছেলে-মেয়ে এখন স্বল্প খরছে নার্স ও ডাক্তার হওয়ার সুযোগ লাভ করবে। পাশাপাশি অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকা ক্রেডিটের সহযোগিতায় উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে পারছে।’

উপস্থিত বাবা-মায়েদের প্রতি অনুরোধ করে বলেন, আপনাদের সন্তানদের দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে বেশি বিনিয়োগ করুন। “আমাদের মিশনারী স্কুলেরপড়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের অনীহা বরাবরই। কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট এই লক্ষে আমাদের আমাদের সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে ঋণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, এই এলাকায় এটা প্রাথমিক চিকিৎসা কন্দ্রের কথা চিন্তা করেছে এবং এখান থেকে পরে ডিভাইন মার্সি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।

উপস্থিত সদস্যসহ অন্যান্য সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, শিক্ষা সেমিনারে সমিতির মালিক হিসেবে আপনারা সমিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন এবং নতুন যারা তারা সদস্য হবেন।

তিনি বলেন, খ্রীষ্টান সমাজকে দারিদ্রতা থেকে তুলে আনতে ফাদার চার্লস জে. ইয়াং এই প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন এবং আজকের এই ৭০-বছরের ঢাকা ক্রেডিট তার হাতেই সৃষ্টি।

বিগত দিনে সদস্যরা অর্থাৎ আপনারা আমাদের সাথে ছিলেন এবং আপনারা আগামী দিনেও আমাদের সাথে থাকবেন, বলেন রোজারিও “এই ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণেই ঢাকা ক্রেডিট উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি লাভ করেছে। আমাদের ক্রেডিট ইউনিয়ন যদি সামনে এগিয়ে যায় তাহলে আমাদের সমাজও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।”

ফাদার গাব্রিয়েল কোড়াইয়া বলেন, “ঢাকা ক্রেডিটের অবদান এবং এর গুরুত্ব আমরা সবাই জানি। তাই ঢাকা ক্রেডিটের সাথে যুক্ত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”

বক্তাগণ ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমানের দক্ষ পরিষদের নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ঢাকা ক্রেডিট সব সময় সাহসী ভ‚মিকা নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের নামকে আলোকিত করেছে, বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখে যাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিট যে সফট্ওয়্যার ও অ্যাপ নিয়ে এসেছে, তা বর্তমান সময়ের একটি অনন্য ব্যবস্থাপনা। ঢাকা ক্রেডিট ৫০ হাজার টাকা ঋণ অ্যাপের মাধ্যমেই দেয়, এই ঋণের জন্য কোনো আবেদনের প্রয়োজন নেই। আমাদের এই ডিজিটাল সেবা সকলেরই ব্যবহার করা উচিত। ঢাকা ক্রেডিট হাসপাতাল করেছে, এত উন্নতমানের হাসপাতাল করা সমবায়ের জন্য অনেক সাহসের ব্যাপার, কিন্তু ঢাকা ক্রেডিট সেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছে। বাইরের অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় ডিভাইন মার্সি হাসপাতালের খরচ অর্ধেকের চাইতে কম। একই সাথে যাদের স্বাস্থ্য প্রকল্পে বই আছে তাদের জন্য তো সেবা একেবারেই ফ্রি।

বক্তাগণ সদস্যদের ডিভাইন মার্সি হাসপাতালে সেবা নিতে এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্পের নিয়মিত সদস্য হতে জোর অনুরোধ করেন।

বক্তারা বলেন, আামাদের মধ্যে অনেক ক্রিয়েটিভ চিন্তা আছে, এগুলোকে সবার সাথে যুক্ত করে কাজে লাগাতে হবে।

গোল্লা খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, এর চেয়ারম্যান ডানিয়েল সচী রোজারিও বলেন, “সমবায় একটি গণতান্ত্রিক ও মানুষে মানুষে মিলনের সংগঠন। তাই আমাদের উচিত সবাইকে সমাজ সম্মান দেয়া। ঋণ নিয়ে নিয়মিত পরিশোধ করা।”

তিনি ঢাকা ক্রেডিটকে ধন্যবাদ জানান কারণ, বৃহৎ প্রকল্প ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল বাস্তবায়ন করেছে। তিনি, আঠারোগ্রাম এলাকায় এই হাসপাতালের একটি ব্রাঞ্চ প্রতিষ্ঠার আহŸান জানন।

শিক্ষা সেমিনারে ঢাকা ক্রেডিট ও ডিভাইন মার্সি হাসপাতালসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্মিত ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়।

ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড ডিরেক্টর মনোজ ক্লেমেন্ট গমেজ ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি এই শিক্ষা সেমিনার আয়োজনের সাথে যুক্ত বিশেষ করে উপদেষ্টাগণ, যুবক, স্টাফসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের প্রতি মানুষের আস্থার বহির্প্রকাশই আজকের এই শিক্ষা সেমিনার।

তিনি বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ এখানে উপস্থিত হয়ে আপনাদের সমবায়ে যুক্ত হতে, সমবায়ের উন্নয়নের অংশীদার হতে উদ্বুদ্ধ করছেন।

প্রতিষ্ঠানের বোর্ড ডিরেক্টর মনিকা গমেজে’র শেষ প্রার্থনার মাধ্যমে গোল্লা আঞ্চলিক শিক্ষা সেমিনারটি সমাপ্ত হয়।