শিরোনাম :
পরম শ্রদ্ধায় কবরে শায়িত হলেন ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা পিটার কোড়াইয়া
তেজগাঁও, ঢাকা : পরম মমতা, শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে কবরে শায়িত হলেন ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা তথা সমাজসেবক পিটার কোড়াইয়া। নিজ পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, নিজ অঞ্চলের পরিচিত ও অনাত্মীয়-স্বজন এবং বিভিন্ন সংঘ-সমিতির প্রতিনিধি মিলে প্রায় দুই শতাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্ট অভিনেতা কল্যাণ কোড়াইয়ার পিতা পিটার কোড়াইয়া ১০ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় মনিপুরীপাড়ায় নিজ ফ্ল্যাটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ডায়াবেটিকস রোগ ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে তার মৃত্যু হয়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
১১ মে শুক্রবার তেজগাঁওয়ের হলি রোজারি কাথলিক চার্চে তার কফিন আনা হলে চার্চের সহকারী পাল-পুরোহিত রঞ্জিত গমেজ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার খ্রিষ্টযাগ উৎস্বর্গ করেন। পিটার কোড়াইয়ার সম্বন্ধে খ্রিষ্টযাগে ফাদার গমেজ বলেন, ঈশ্বরের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি এই জগতে এসেছিলেন আবার ঈশ্বরের ডাকইে চলে গেলেন তিনি। জীবনকালে তার করণীয় কাজ তিনি সুন্দরভাবেই করে গেছেন।
খ্রিষ্টযাগ শেষে উপস্থিত সবার সামনে তার জীবনের স্মৃতিচারণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জোনাস গমেজ। তিনি বলেন, পিটার কোড়াইয়া অত্যন্ত সরল মনের ও হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। পরিবারের স্বামী ও পিতা হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব পূর্ণভাবেই করেছেন। ‘তিনি ছিলেন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব; পরিবারের স্বামী, পিতা ও সমাজের সেবক।’
পিটার কোড়াইয়ার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শনপূর্বক তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট)-এর সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা। তার সাথে ছিলেন সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ-এর সহধর্মিনী মিলি মার্সিয়া গমেজ, সমিতির ডিরেক্টর পিটার গোমেজ, পিটার রতন কোড়াইয়া, পাপিয়া রিবেরু, আনন্দ ফিলিপ পালমা, ক্রেডিট কমিটির সদস্য ডমিনিক রঞ্জন গমেজ, সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য ষ্টেলা হাজরা এবং কর্মীদের মধ্যে সুদান গাইন এবং সুইটি সি. পিউরীফিকেশন। ঢাকা হাউজিংয়ের পক্ষে ভাইস-চেয়ারম্যান অনিল লিও কস্তা তার কবরে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
বিভিন্ন ব্যক্তি, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যান্য সংঘ-সমিতির পক্ষ থেকেও তার কবরে পুষ্পস্তবক ও ফুলের তোরা অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি, মথুরাপুর খ্রীষ্টান বহুমুখী সমবায় সমিতি, নীড়-৩-এর মৈত্রী সমিতি, মনিপুরীপাড়া খ্রীষ্টান সমাজ ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন সহধর্মিনী শান্তি কোড়াইয়া, এক ছেলে (জাতীয় পর্যায়ের নাট্যব্যক্তিত্ব) কল্যাণ ও দুই মেয়ে কাকন ও কাকুলী, আত্মীয়-স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী।
তিনি ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের সক্রিয় সদস্য এবং উপদেষ্টা, মনিপুরীপাড়া খ্রীষ্টান সমাজ-এর বোর্ড সদস্য, মনিপুরীপাড়ার বৃহত্তর কল্যাণ সমিতির সাধারণ সদস্য, দি মেট্রোপািলটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির রিলিজিয়াস কমিটির সদস্য, ঢাকা ক্রেডিটের শিক্ষা কমিটির সদস্য ও ঢাকা ক্রেডিটের উপদেষ্টা হিসেবে নানা অবদান রেখে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, ১০ মে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হলে মৃত্যুর সংবাদের সঙ্গে সঙ্গেই দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়াসহ অন্যান্য খ্রিষ্টান নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে তার মনিপুরীপাড়া বাসায় যান ও সমবেদনা জানান।
২৫ মে ১৯৫৫ সালে তার অঞ্চলিক বাড়ি পাবনা জেলার চাটমোহর থানার মথুরাপুর কাথলিক মিশনের অধীন লাউতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ ধর্মপল্লীতে প্রাথমিক শিক্ষা পরে নটর ডেম কলেজে বিএ পাস করার পর দীর্ঘদিন বিদেশে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন ও নিজের সন্তানদের প্রতিষ্ঠা পেতে প্রানান্ত চেষ্টা করে সফল হন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন সৎ, নির্ভীক সমাজসেবক, আদর্শ স্বামী ও বাবা। মন্ডলীর নানা কাজেও তিনি সবসময় সহযোগিতা করেছেন।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছ ১১ মে শুক্রবার তার সন্ধ্যা ৭টায় মনিপুরীপাড়ায় তার নিজ বাসায় এক প্রার্থনাসভার আয়োজ করা হয়েছে। নিকটাত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীদের সেখানে উপস্থিত থেকে তার আত্মার মঙ্গল কামনা করার আহবান জানান।
আরপি/আরআর/১১ মে ২০১৮