ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ তিনি যার যার সঠিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা দিতেন: ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট...

তিনি যার যার সঠিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা দিতেন: ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পিটার গমেজের শোক ও স্মরণ সভা

0
472

প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব, সমাজ সেবক ও দক্ষ সমবায় সৈনিক পিটার গমেজের স্মরণে শোক ও স্মরণ সভার আয়োজন করে ঢাকা ক্রেডিট।

৬ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা ক্রেডিটের বিকে গুড কনফারেন্স হলে সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্বে এই শোক ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সমিতির সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তার সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত পিটার গমেজের নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, ঢাকা ক্রেডিটের পরিচালনা পর্ষদ ও সদস্যরা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বাবু মার্কুজ বলেন, ‘স্বর্গীয় পিটার গমেজ আমাদের সমাজের জন্য একটি ঈশ্বরের দান। তিনি সব সময় সমাজের জন্য ভাবতেন। তিনি ঢাকা ক্রেডিটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটে একজন সফল প্রেসিডেন্ট। আমরা ঢাকা ক্রেডিটে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে বিভিন্ন কার্যক্রম ও অনুষ্ঠানে আহ্বান জানালে তিনি উপস্থিত হতেন। সবচেয়ে বেশি আনন্দের ছিল, আমরা যখন প্রথম বোর্ড গঠন করি, সেখানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী (যারা জীবিত ছিলেন) সকলেই উপস্থিত ছিলেন।’

‘আঠারো গ্রামে ঢাকা ক্রেডিটের যে মাল্টিপারপাস ভবন হচ্ছে, সেখানে প্রয়াত প্রেসিডেন্টের নামে ফ্লোরগুলো উৎসর্গ করা হবে। আমরা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেখানে স্বর্গী পিটার গমেজের নামে একটি ফ্লোর উৎসর্গ করা হবে।’ বলেন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘পিটার গমেজ একজন আত্মপ্রত্যয়ী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। ঐকান্তিক আত্মত্যাগ করেছেন সমবায় আন্দোলনের জন্য। সমাজ কল্যাণের নানা শাখায় কাজ করতে করতে জীবনকে উজার করে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন সমাজের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর আদর্শ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’

‘পিটার গমেজ সকল কাজ স্বচ্ছতার সাথে করতেন। তাঁর মধ্যে ছিল শ্রদ্ধাজ্ঞান। তিনি যার যার সঠিক শ্রদ্ধা ও মর্যাদা দিতেন। কিভাবে সমাজের উন্নতি করা যায়, তাই ছিল তার চিন্তার বিষয়। বর্তমানে কাফরুলে খ্রিষ্টানদের যতটুকু উন্নয়ন দেখা যায়, তার জন্য পিটার গমেজের অবদান অন্যতম’ বলেন বক্তারা।

স্বর্গীয় পিটার গমেজ একজন যোগ্য নেতা এবং সমাজ সেবক ছিলেন বলে উল্লেখ করে বলেন, পিটার গমেজের মতো আদর্শবান ব্যক্তিত্বকে হারিয়ে সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

এ সময় সকলে তাঁর আত্মার কল্যাণ কামনা ও রেখে যাওয়া পরিবারে শান্তির জন্য প্রার্থনা করেন।

অন্যান্যর মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিউবার্ট গমেজ, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, উপদেষ্টা রুবেন গমেজ ও উপদেষ্টা সাইমন গমেজ, ইসিদোর গমেজ, জন পিরিচ, আলবিন দেছাসহ আরো অনেকে।

অবশেষে বার্ধক্য ও নানা শারীরিক অসুস্থতার শিকার হন। তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হয়।
২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ কাফরুলে নিজ বাসভবনে দুপুর আড়াই টায় পিটার গমেজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তেজগাঁও চার্চে তাঁকে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়।

পরিবারের সদস্য, ঢাকা ক্রেডিট, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড, তাঁর কর্মময় জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিসহ শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে শেষ বিদায় জানায়।

পিটার এ. গমেজ ১৯৩৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার তুইতাল মিশনের নতুন তুইতাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়ার কারণে নিজ ধর্মপল্লী তুইতাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়াশোনার পর তাঁকে যেতে হয়েছে কলকাতা। কলকাতায় বাবা ভিনসেন্ট সাধু গমেজের চাকরি থাকার কারণে তিনি কলকাতার জেজুইট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।

কলকাতায় জেজুইট স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার পর আবার দেশে ফিরে এসে বান্দুরা ক্ষুদ্রপুষ্প সেমিনারীতে শুরু হয় নতুন জীবন। সেমিনারীতে থেকে বান্দুরা হলি ক্রস স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতে শুরু করেন। সেখানই এসএসসি পাসের পর তিনি ঢাকার রমনা ইন্টারমিডিয়েট সেমিনারীতে যোগ দেন। প্রয়াত আর্চবিশপ পলিনুস কস্তা ছিলেন তাঁর সহপাঠী। ইন্টারমিডিয়েট পাসের পর উচ্চশিক্ষার জন্য ইতালীর রোম নগরে যান তিনি। সেখানে পন্টিফিক্যাল আরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব নিয়ে ছয় বছর পড়াশোনা করে সফলতার সাথে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পারিবারিক কারণে তিনি রোম থেকে দেশে ফিরে এসে সংসার-কর্ম জীবনে প্রবেশ করেন।

উচ্চশিক্ষা, নানা শাখায় বিদ্যা-অর্জণ ও তীক্ষè বুদ্ধিমত্তার কারণে তিনি বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে যেমন কোহিনুর কেমিক্যাল কম্পানি, খ্রিষ্টান রিলিফ সার্ভিস, আইসিডিডিআরবির কলেরা রিসার্স লেবরেটোরি, আরডিআরএস, ও এনাম অমনি কম্পানিতে বিভিন্ন উচ্চপদে কাজ করার সুযোগ পান।

পিটার গমেজ দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট), ঢাকা ওয়াইএমসিএ, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটি লিমিটেড, কাফরুল খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিেিটড, কাফরুল খ্রীষ্টান সমিতিতে বিভিন্ন মেয়াদে ডিরেক্টর, প্রেসিডেন্ট পদসহ অন্যান্য বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হন।

১৯৭৭-৭৮ মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঢাকা ক্রেডিটের সেবা দিয়েছেন। এ ছাড়াও পিটার এ গমেজ মোট পাঁচ মেয়াদে, যেমন ১৯৭২-৭৩, ৭৩-৭৪, ৭৪-৭৫, ৭৬-৭৭ এবং ৭৮-৭৯ পর্যন্ত ডিরেক্টর পদে ঢাকা ক্রেডিটে অবদান রাখেন।

এ ছাড়াও তিনি কাফরুল সেন্ট ভিনসেন্ট ডি পল প্রাইমারি স্কুল, কাফরুল সেন্ট লরেন্স চার্চ পালকীয় পরিষদ, আঠারোগ্রাম খ্রীষ্টান কল্যাণ সমিতি, ত্রিবেনী ছাত্র কল্যাণ সংঘ, ও তাঁর নিজ ধর্মপল্লী তুইতাল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে নিঃস্বার্থ শ্রম দিয়ে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

মন্ডলীর কাজে তিনি নানাভাবে অবদান রেখেছেন। কারিতাস বাংলাদেশের জেনারেল বডির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য কমিটির সদস্য হিসেবেও ভূমিকা পালন করেন। তিনি আর্চবিশপ থিওটনিয়াস অমল গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রেজারার এবং মাদকাসক্তি পুনর্বাসন নিবাস আপনের নির্বাহী কমিটির বোর্ড সদস্য ও চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৯৮৬ সালে পোপ জন পলের বাংলাদেশে আগমনের সময় এই অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। পোপের সংবর্ধনাসহ যাবতীয় কার্যক্রমে তিনি চার্চের পক্ষে সহযোগিতা করেন।

স্মরণ ও শোক সভার শুরুতে প্রার্থনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি মানিক লরেন্স রোজারিও ও শেষ প্রার্থনা করেন সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য পাষ্টর অবিনাশ নকরেক।

অনুষ্ঠানের শেষে সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

ডিসিনিউজ/আরবি.এইচআর. ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯