শিরোনাম :
সমবায়ের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ৩০০-শয্যাবিশিষ্ট হাসাপাতালের যাত্রা শুরু
গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মঠবাড়ীতে ঢাকা ক্রেডিটের মেগাপ্রকল্প ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো।
আজ (২৭ এপ্রিল) দুপুরে এক আলোচনা সভার পর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করেন গাজীপুর-৫ আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকী।
অনুষ্ঠানে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন গেস্ট অব অনার ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী এবং ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি।
প্রধান অতিথি মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, ‘খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ চিকিৎসা সেবায় দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখছে, তা আমার বাবার কাছ থেকে শুনেছি এবং আজ আমি নিজ চোখে প্রত্যক্ষ করছি।’
‘গাজীপুর অঞ্চলের মানুষ যখন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সুখে থাকবে, তখন আমি সুখে থাকব,’ মন্তব্য করেন এমপি চুমকী।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা ক্রেডিটের চারটি কর্ম অঞ্চলে মধ্যে আমরা গাজীপুরের মানুষ বেশি ভাগ্যবান। কারণ, ঢাকা ক্রেডিটের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল গাজীপুরেই প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই এলাকায় বড় ধরনের কোনো হাসপাতাল নেই। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলে সেবা গ্রহণ করতে পারবে গাজীপুরের মানুষসহ দেশবাসী।
এমপি চুমকী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই হাসপাতালের মাধ্যমে ধনী-গরিব সবাই ভাল স্বাস্থ্যসেবা পাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, এই দেশে সমবায়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হিসেবে এই হাসপাতাল শুরু হয়েছে। হাসপাতাল প্রকল্প শুরু করার পূর্বে আড়াই হাজার মানুষের কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৯০ভাগ মানুষের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ২০১৪ সালে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও পোপ মহোদয় কর্তৃক ঘোষিত ‘দয়ার বর্ষে’ হাসপাতালের নাম দিয়েছেন ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল।
প্রেসিডেন্ট গমেজ সকল ক্রেডিট ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদকে স্বাস্থ্যপ্রকল্প গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহবান জানান। তিনি এই হাসপাতাল প্রকল্প-এর কাজ সম্পন্ন করার জন্য সবার সহযোগিতাসহ প্রার্থনার অনুরোধ জানান।
গেস্ট অব অনার ভাতিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী মঠবাড়ীতে ক্রেডিট ইউনিয়ন কর্তৃক হাসপাতাল নির্মাণকে ইতিহাসের একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
‘হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু করতে গিয়ে বাবু মার্কুজ গমেজকে অনেক সমালোচনা সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবুও তিনি পিছু-পা হননি,’ বলেন গেস্ট অব অনার কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও।
তিনি বলেন, এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষ ঈশ^রের করুণা পাবে। সেবার নিদর্শন ছড়িয়ে পড়বে রোগিদের মাঝে।
ভারতের ম্যাঙ্গালোরের ফাদার মূলার মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের এডমিনিস্ট্রেটর ফাদার রুডলফ রবি দেসা বলেন, ‘হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিট গরিব মানুষের জন্য ভাল কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই।’
ফাদার রুডলফ এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করারও আশ্বাস প্রদান করেন।
ম্যাঙ্গালোরের মূলার চ্যারিটেবল ইনস্টিটিউশনের এডমিনিস্ট্রেটর ফাদার রিচার্ড এলয়সিয়াস বলেন, মানুষের রোগ নিরাময় করার জন্য সকল পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকা ক্রেডিট ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল তৈরি করতে যাচ্ছে। ‘এই সুন্দর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা ঢাকা ক্রেডিট সমিতির একটি ভাল কাজের প্রতিচ্ছবি। সরকারি সকল নিয়ম অনুসরণ করেই এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি ক্রেডিট ইউনিয়নের উচিত ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নমূলক কাজকে অনুসরণ করা।
এ ছাড়া ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতালের সিইও মেজর জেনারেল (অব:) জন গমেজ, এমেরিটাস বিশপ থিওটনিয়াস গমেজ, আর্কিটেক্ট রশিদ আহমেদ, ব্যাপটিস্ট চার্চের প্রধান জয়ন্ত অধিকারী, কালীগঞ্জ থানার ওসি আবু বক্কর মিয়া, নাগরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের, এসিল্যান্ড জুবায়ের আলম, দি মেট্রোপলিটান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন, সেন্ট এ্যাথেনা হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আর এস সেটিয়ান, তেজগাঁও ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত কমল কোড়াইয়াসহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা এবং অনুষ্ঠান শেষে ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাইবেল পাঠ করা হয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন মঠবাড়ী ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত উজ্জ্বল রোজারিও সিএসসি। কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও বিশেষ আর্শীবাদ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের আসন গ্রহণের পর তাঁদের ফুলের তোরা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এ দিন সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি, গেস্ট অব অনার ও অন্যান্য অথিতিদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন সমবায়ের প্রতিনিধি, ঢাকা ক্রেডিট সমিতির উপদেষ্টা, সমিতির বিভিন্ন উপকমিটির সদস্য, বিভিন্ন মন্ডলীর প্রতিনিধি, সমবায় অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, গাজীপুর জেলার সরকারি প্রশাসনের নির্বাহী-প্রতিনিধি ও দেশের স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রফেশনালসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।