ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ মাতৃদুগ্ধ শিশুর অমিয় সুধা

মাতৃদুগ্ধ শিশুর অমিয় সুধা

0
1020

আজ মাতৃদুগ্ধ দিবস। প্রতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন করা হয়। নবজাতকের সুস্থ-সুন্দর করে বেড়ে ওঠার জন্য মাতৃদুগ্ধ অপরিহার্য।

মায়ের দুধ কেন প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি বাচ্চার জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এক ঘণ্টা সময়টা বলা মানে হলো মানুষকে সচেতন করার জন্য। বাস্তব বিষয় হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারণ প্রথম যে দুধ আসে, একে বলা শালদুধ। এটিই হয় শিশুর প্রথম টিকা। যেহেতু সেটি লিভিং সেল হিসেবে বাচ্চার শরীরে যায়, এ ক্ষেত্রে একে আমরা জীবন্ত টিকাও বলতে পারি। এটি ওই শিশুটিকে অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে; রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

আরো পড়ুন: ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি প্রর্দশিত হয়েছে যেসব খ্রিষ্টধর্মীয় গান

যে শিশু জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৮০ দিন শুধু মায়ের দুধের ওপর বেঁচে থাকবে, ওই শিশুর অনেক রোগ কম হবে। প্রথম হলো ডায়রিয়া। ওই শিশু সাধারণত ডায়রিয়ায় ভোগে না। কারণ, আমরা যদি ডায়রিয়ার কারণগুলো দেখি, তাহলে দেখব সব কিন্তু খাদ্যসংক্রান্ত। তবে ওর জন্য খাবার তো লাগছেই না, এক ফোঁটা পানিও লাগছে না। সুতরাং প্রাকৃতিকভাবে তার একটি সুরক্ষা হয়ে গেল। মায়ের শরীরে দুধটা শিশুর জন্য এমনভাবেই তৈরি হয়, এটা সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন। সব ধরনের খাবার এর মধ্যে রয়েছে।

মাতৃদুগ্ধের উপকার

মাতৃদুগ্ধের অনেক উপকার। প্রথম হলো শিশুর যেই পরিমাণ খাওয়ার দরকার, সে পরিমাণেই নেবে। বেশিও খাওয়াচ্ছি না, আবার খাবার কমও পড়ছে না। যেই মনোযোগে খাবে, সেটি ঠিক থাকছে। দ্বিতীয় হলো, সম্পূর্ণ রোগমুক্ত। সবচেয়ে বড় হলো আমাদের সামাজিক যে অবক্ষয়, এর একটি প্রধান প্রতিরোধক এটি। ওই মা ও শিশুর মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হবে, পারিবারিক বন্ধন তৈরি হবে, সেই বাচ্চা তো খারাপ কাজ করতে পারবে না।

অন্যান্য উপকার

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। এতে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেক কমে যায়। মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে পরিপূর্ণভাবে। মায়েদের স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে জাতি উপকৃত হয়। মাতৃদুগ্ধ পানের মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নবজাতক মৃত্যুর হার ২২ শতাংশ কমানো সম্ভব। শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বছরে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা পাবে। জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৩ শতাংশ নবজাতক জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পায়। অথচ জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৬০ হাজার নবজাতক বছরে মারা যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর জন্মের পর প্রথম ২৮ দিনে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নবজাতক মারা যায়। এই ভয়াবহ চিত্র দেখলেই বোঝা যায়, জন্মের পরপর শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া কতটা জরুরি। মায়ের দুধের খাদ্য উপাদানে বিশেষ ফ্যাটি এসিড আছে, যা শিশুর বুদ্ধিদীপ্ততা ও চোখের তীক্ষতা বা জ্যোতি বাড়ায়। মায়ের দুধে প্রায় ১০০ উপাদান রয়েছে, যার প্রতিটি উপাদানই শিশুর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। গরুর দুধে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকলেও এর সবটুকু শিশুর কাজে আসে না। এ ছাড়া গরুর দুধে মায়ের বুকের দুধের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি খাদ্যপ্রাণ বি-১২ থাকে, যার বেশির ভাগই শিশুর জন্য অকেজো। মায়ের দুধে ৮৬ ক্যালরি শক্তি বেশি অছে। সন্তান জন্মদানের পর হলুদাভ ঘন যে দুধ আসে, একে শালদুধ বলে। পরিমাণ কম হলেও, এটি নবজাতকের জন্য যথেষ্ঠ। শালদুধে অনেক বেশি রোগপ্রতিরোধক উপাদান ও শ্বেতকণিকা থাকে। এ উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে। এ দুধ শিশুর অপরিণত অন্ত্রকে পরিপক্ক করে। শালদুধ শিশুর পেটের প্রথম কালো পায়খানা বা মিকোনিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে। মিকোনিয়াম পেটে বেশি থাকলে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মায়ের দুধ খাওয়ানো অবশ্যই একটি অপরিহার্য জরুরি উদ্যোগ। এতে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও গড়ে তুলতে হবে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পরিবেশ। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, গৃহিনী, প্রত্যেক মা তাঁদের সন্তানকে বুকের দুধ দিতে আগ্রহী ও সচেতন হবেন, এটাই হোক ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস’-এর প্রধান লক্ষ্য।

পরিশেষে বলা যায়, মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য কত গুরুত্ব তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই মায়েদের উচিত নবজাতকে বুকের দুধ দেওয়া।

আরো পড়ুন

বাংলাদেশের মানবতার প্রশংসা মিয়ানমারের কার্ডিনাল চালর্স মং বো’র

ঢাকা ক্রেডিটের নতুন সদস্য হলেন ৩৭ যুবক-যুবতী

সফল রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী আলফ্রেডের গল্প