শিরোনাম :
হাউজিং সোসাইটির কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য
|| ডিসি নিউজ, ঢাকা ||
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর কর্মান্ডের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, এমপি। তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে ২ আগস্ট হাউজিং সোসাইটির ৩২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘সমবায় প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আমি যেসব দপ্তরে গিয়েছি, সেসব জায়গায় গিয়ে হতাশ হয়েছি। সমবায় ব্যাংক, মিল্ক ভিটা, আজিজ কো-অপারেটিভ, মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ পরিদর্শন করে হতাশ হয়েছি। যেসব লোক আমার নিকট আসেন, তারা বলেন সমবায়ে টাকা দিয়ে টাকা ফেরত পাচ্ছি না। সমবায় নিয়ে আমার একটা হতাশা ছিল, তবে আজ দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর কর্মকান্ড দেখে আমি আশ্বস্ত হয়েছি।’
হাউজিং সোসাইটির কর্মকান্ডের সন্তুষ্ট প্রকাশ করে বলেন, ‘গুটিকয়েক ধুরন্দর ও লুটেরার জন্য সমবায় বিষয়ে খারাপ ধারণা নেওয়া যাবে না। সমবায়ের মাধ্যমে বিশাল একটি জনকল্যাণ কাজ করা যায়। হাউজিং সোসাইটি লি: এর বার্ষিক প্রতিবেদন দেখে আমার সেটা বিশ্বাস হয়েছে। বর্তমান কার্যকরী পরিষদের চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন এই প্রতিষ্ঠানে অমূল পরিবর্তন এনেছেন।’ তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমবায়কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সমবায়কে গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হবে।
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর ৩২তম সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা ১-এর সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ অ্যাডভোকেট ঝর্ণা গ্লোরিয়া সরকার, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মো. লুৎফর রহমান, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি. ঢাকার (ঢাকা ক্রেডিট) সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা ও দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ লি: (কাককো)-এর চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও।
ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা বক্তব্যে বলেন, ‘একদিকে ভাল লাগছে স্বল্প পরিসরে এসি রুমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছি, আবার ভারাক্রান্ত লাগছে বিশাল আয়োজনের এজিএম আজ একটি স্বল্প পরিসরে হচ্ছে। আমাদের পূর্ববর্তী বক্তাগণ ও সম্মানিত চেয়ারম্যান বলেছেন, প্রতিনিধির যে ২১ বিধি তা পরিবর্তনের। ২০১৩ সনের সংশোধিত যে সমবায় আইন, তার ১৭ এর ৫ ধারায় রয়েছে মোট মেম্বারের ২০% হলে কোরাম হবে। কিন্তু ২১ উপবিধিতে যে প্রতিনিধি, সেখানে কোরামের কোন বিষয় নাই। যেহেতু আজকের এজিএমএ আমাদের দ্জুন সমবায়ের অভিভাবক উপস্থিত রয়েছেন- সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এবং নিবন্ধক জনাব আমিনুল ইসলাম, আপানাদের সবিনয় অনুরোধ করবো, আইনের সাথে যে সাংঘর্ষিক এই বিধি, এটি যেন তাড়াতাড়ি রহিত করা হয়, যেন আমরা ঢাকা ক্রেডিট, হাউজিং সোসাইটি এবং অন্যান্য যাদের মেম্বারশীপ ৩ হাজারের ওপরে। আমরা সকল সমিতির এজিএম এবং নির্বাচন যেন উৎসবমূখর পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণে করতে পারে সেই ব্যবস্থা করার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটি বিশেষ অনুরোধ রাখছি, এদেশের নাগরিক হিসেবে বা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরাও টেক্স দিয়ে গর্বিত নাগরিক হতে চাই। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, সমবায় আইনে আমরা ৩% সিডিএফ (কো-অপারেটিভ ডেভলপমেন্ট ফান্ড) দিচ্ছি নিট প্রফিটের। ২০১২ সনের ১৫% টেক্স ধার্য করা হয়েছে। হতদরিদ্র ও মধ্যম শ্রেণীর মানুষ এই সমবায়ের সদস্য। ঢাকা ক্রেডিটে মাত্র আট আনা করে দিয়ে সদস্য হয়েছে, তারপর মাসে এক টাকা দুই টাকা পাঁচ টাকা, এখন ত্রিশ টাকা করে জমা দিচ্ছে। সেই পুঞ্জিভুত ডিভিডেন্স তার প্রফিট খুবই কম। আজকে এই সমিতির হিসাব নিকাশে দেখবেন, মাত্র ৫.৪% ডিভিডেন্ট দেওয়া হচ্ছে সমস্ত খরচ দেওয়ার পর। সেখান থেকে ৩% সিডিএফ এবং টেক্সও দেওয়া লাগছে, আমি অনুরোধ রাখি এটা স্বল্প মূল্যে আনা যায়, তাহলে সম্মানিত সদস্যগণ কিছুটা হলেও ডেভিডেন্ট বেশি পাবেন।’
তিনি বলেন, আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৭ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় হাউজিং সোসাইটি। যারা এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকে সেই সমিতি ৭ শ ৩৯ বিঘার জমির মালিক এবং আমাদের সম্মানিত সদস্যগণ ৯৫৪টি ফ্লাটে বসবাস করার সুযোগ পায়েছেন। তিনি জানান, ২০১২ সন হতে বর্তমান কার্যকরী পরিষদের নেতৃত্বে হাউজিং সোসাইটির মূলধন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই সকলের পক্ষে তাদের অভিনন্দন জানাই।
হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘২০১২ খ্রিষ্টাব্দে নির্বাচিত হয়ে আমি ও আমার পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন সোসাইটি ছিল নানা জটিল সমস্যায় নিমজ্জিত। একদিকে সোসাইটির তহবিল ছিল শূণ্যের কোঠায়। নানা অনিয়ম, সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট সোসাইটিকে একটি নিমজ্জিত নৌকায় পরিণত করেছিল। আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরেই এই অচল অবস্থা থেকে সোসাইটিকে সুগঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। ফলে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই আমরা সকল প্রতিকূলতা জয় করে সোসাইটিকে সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত করতে সক্ষম হই।’
তিনি বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিনিধিদের পর পর দুবার নির্বাচিত করার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
আগষ্টিন পিউরীফিকেশন সমবায়ের ২১ উপবিধিতে যে প্রতিনিধি, তা রহিত করার জন্য সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য এবং নিবন্ধক জনাব আমিনুল ইসলামকে অনুরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও’র পৃষ্ঠপোষকতায় দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি: এর যাত্রা শুরু হয়।
৩২তম বার্ষিক সাধারণ সভার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে হাউজিং সোসাইটির ক্রেডিট সদস্য সংখ্যা ২০ হাজার ৯৯৮ এবং সঞ্চয়ী সদস্য ২৯ হাজার ৫৫৮ জন।
আরো পড়ুন:
লক্ষীপুরে ওয়াইসিএস এনিমেটর ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত
বান্দরবানে খ্রিষ্টানদের জমি দখলের অভিযোগে বৌদ্ধ ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে মানববন্ধন