শিরোনাম :
অগ্নিনির্বাপন ও ভূমিকম্পের ওপর কর্মশালা
ঢাকা ক্রেডিটের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপন ও ভূমিকম্পের ওপর দুই দিনের কর্মশালা শেষ হয়েছে ২২ মে। ২১ ও ২২ মে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃপক্ষ বি কে গুড কনফারেন্স হলে এ কর্মশালার আয়োজন করে। ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টর মোট ৫০ জন কর্মী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তেজগাঁও অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ফয়সালুর রহমান ও তার সহকর্মী আল-আমিন সহকারী হিসেবে এ কর্মশালা পরিচালনা করেন। কর্মশালায় অগ্নি দুর্ঘটনা ও ভূমিকম্পের সময় কী করণী সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রশিক্ষকগণ। এসব দুর্ঘটনার সময় যে বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা করা হয় সেগুলো হলো নীতি, পরিকল্পনা ও কার্যক্রম।
অগ্নিকান্ড ও ভূমিকম্পের সময় সতর্কতা অবলম্বন, যানমালের নিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা কী হতে পারে তার প্রেক্ষিতে প্রশিক্ষক ফয়সালুর রহমান জানান, যে ঘরে আগুন লাগে, সেই বাড়ির সার্বিক সহযোগিতা না পেলে আগুন নেভানো খালি কঠিনই নয়, অসম্ভবও। তাদের নিজেদের দায়িত্ব সম্বন্ধে বলেন, তাদের দায়িত্ব হলো ফায়ার ফাইটিং করা, অগ্নিকান্ডের ভিকটিমদের রক্ষা করা, দুর্ঘটনা মোকাবিলার প্রাথমিক জ্ঞান প্রদান করা ও উপযুক্ত মানুষকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তিনি জানান, সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীন তাদের এই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ বাংলাদেশে মোট ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশিক্ষক ফয়সালুর রহমান তার সিঙ্গাপুরের অভিজ্ঞতা বর্ননা করে বলেন, সে দেশে ১৮ বছরের সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলকভাবে এই প্রশিক্ষণ নিতে হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেককে বিষয়টি অনুধাবন করার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
কর্মশালায় অগ্নিকান্ড ও অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রের ধরন ও ব্যবহার, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং ভূমিকম্পন ও এর উৎপত্তি এবং করণীয় সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের মূলমন্ত্র হলো গতি, সেবা ও ত্যাগ। প্রশিক্ষণে তিনি অংশগ্রহণকারীদের বিষয়গুলো সম্বন্ধে সচেতন করেন।
কী কী দাহ্য পদার্থে অগ্নি দুর্ঘটনা হয় তার প্রেক্ষিতে আগুনের ধরন এ, বি, সি এবং ডি নির্দেশক পর্যায়ক্রমে কঠিন পদার্থ, তরল পদার্থ, গ্যাস ও ধাতব পদার্থে আগুন লাগতে পারে। সেগুলো নেভানোর জন্য পর্যায়ক্রমে ওয়াটার টাইপ, ফোম টাইপ, ড্রাই পাওডার টাইপ ও সিওটু (কার্বণডাই অক্সাইড) সিলিন্ডার ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে।
প্রশিক্ষকের মতে, কোনো ব্যক্তির পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে (অস্থির না হয়ে) গায়ে কাঁথা বা কম্বল জড়িয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিলে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। অন্যদিকে কঠিন পদার্থে আগুন নিয়ন্ত্রনের জন্য পানি, আগুনে অক্সিজেন প্রবাহের প্রক্রিয়া বন্ধ এবং জলন্ত আগুনের আশপাশের দাহ্যবস্তু সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।
দ্বিতীয় দিনে প্রশিক্ষক উল্লিখিত সিলিন্ডার ব্যবহারের কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ও ওই দিনেই ঢাকার বটমলী হোমস টেকনিক্যাল স্কুল মাঠে হাতে-কলমে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে সিলিন্ডারের ব্যবহার শিক্ষা দেন।
সিলিন্ডারের অপারেটিং সিস্টেম সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে গিয়ে তিনি কলেন, প্রথমেই সিলিন্ডারের মুখের ধাতব পিন হাত দিয়ে খুলতে হবে, দ্বিতীয় পর্যায়ে হোস পাইপটি অগ্রভাগ ধরে আগুনের উৎসের দিকে তাক করতে হবে, তৃতীয় পর্যায়ে লিভারে চাপ দিতে হবে; এতে সাদা পাউডারের গতিকে ডানে-বামে (আগুনের উৎসে) সুইপ করতে হবে। এভাবে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা যায়। আগুন নেভানোর এই মহড়ার আয়োজন করাতে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট অনুশীলনে অংশগ্রহণের ফলে আত্মবিশ্বাস লাভ করেন।
দুদিনের এই প্রশিক্ষণে ভুমিকম্পের আঘাতের বিষয় নিয়েও বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেন। ৫, ৫-৬, ৬-৭, ৭-৭.৮ ও তার উর্ধ্বের রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পকে পর্যায়ক্রমে স্মল, মর্ডারেট, লার্জ, মেজর ও গ্রেট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভূমিকম্পের সময় কীভাবে উদ্ধার কাজ চালাতে হয়, তার ওপর ব্যবহারিক সেশনের মাধ্যমে সবাইকে বুঝিয়ে দেন। এই অনুশীলনে অনেক অংশগ্রহণকারী সক্রিয় অংশ নেন।
অংশগ্রহণমূলক এই প্রশিক্ষণে সবারই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল বলে উল্লেখ করেন অংশগ্রহনকারীদের কয়েকজন। তারা বলেন, এটি একটি মৌলিক বিষয় যা সবার জানা দরকার, এমনকি পরিবারের সকল সদস্যকেই বিষয়গুলো জানাতে হবে।
এসব দুর্যোগের সময় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়েও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তিনি ফোন নম্বরও সরবরাহ করেন ০১৭৩-০০০২২২৬, টিএনটি ০২-৮৮৭০৩১৪ এবং তাদের কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০২-৯৫৫৫৫৫৫ ও ১৯৯।
দুদিনের সেশন শেষে সকল অংশগ্রহণকারীকে সংক্ষিপ্ত লিখিত পরীক্ষাও নেওয়া হয় এবং জেনেরিক পদ্ধতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে উদ্বোধনী ও দ্বিতীয় দিনের শেষের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী অফিসার লিন্টু খৃষ্টফার গমেজসহ অন্যান্য অফিসারবৃন্দ। উপস্থিত সবাই সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণকে একটি স্বার্থক প্রশিক্ষণ বলে উল্লেখ করেন। সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন, সকল প্রতিষ্ঠান ও পরিবারে ফাস্ট এইড বক্স এবং অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। প্রত্যেক বহুতল ভবনে বিকল্প জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি, প্রতি ফ্লোরে সতর্কীকরণ ঘন্টা, দেয়ালে জরুরি বহির্গমনের সাংকেতিক চিহ্ন এবং প্রতিটি ভবনের সুবিধাজনক স্থানে পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কি থাকা জরুরি বলে মনে করেন তারা।
আরবি/আরপি/ ২৪ মে, ২০১৭