ঢাকা ,
বার : মঙ্গলবার
তারিখ : ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলা : ১ মাঘ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সেমিনার

অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সেমিনার

0
705

ডিসিনিউজ:
বাংলাদেশের পূণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিসের আগমনের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অর্ধদিবসব্যাপী জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সেমিনারের আয়োজন করে বিশপীয় খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশন।
আজ (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মোহম্মদপুরের আসাদগেট সিবিসিবি সেন্টারে বিভিন্ন ধর্মবলাম্বীদের নিয়ে জাতীয় আন্তঃধর্মীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের মূলভাব ছিল ‘হৃদয়ের উন্মুক্ততা আনে শান্তি ও সম্প্রীতি’।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশপীয় খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং সিলেট ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ওএমআই।
বিশপ বিজয় শুছেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি উন্মুক্ত হৃদয়ে সকলের সাথে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে। পোপ ফ্রান্সিস আমাদের বলেছেন ‘উন্মুক্ত হৃদয় মানুষকে কাছে টানাতে সাহায্যে করে। যাদের হৃদয় উন্মুক্ত তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সবার চেয়ে আলাদা, তারাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ভাইবোন হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, আমরা বিচ্ছেদ চাই না, চাই শান্তি; ধ্বংস নয়, সম্প্রীতি পূর্ণ পৃথিবী গড়তে চাই।
‘পূণ্য পিতা পোপ ফ্রান্সিসের বাংলাদেশে আগমন করেছিলেন সম্প্রীতির বাণী নিয়ে। পোপের সাথে আমাদের আন্তঃধর্মীয় সমাবেশ হয়েছিল রমনা আর্চবিশপ হাউজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মবলাম্বীদের নিয়ে। তিনি সেখানে বলেছিলেন ‘আমরা সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছি।’ আন্তঃধর্মীয় সংলাপে প্রবেশ করতে হলে আমাদের হৃদয়ে থাকতে হবে সততা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা’ বলেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও, সিএসসি।
‘হৃদয়ের উন্মুক্ততা আনে শান্তি ও সম্প্রীতি’ এই মূভাবের উপরে ইসলাম ধর্মের আলোকে আলোচনা করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসুদ, সনাতন ধর্মের আলোকে স্বামী দেবধ্যানন্দ মহাারাজ, বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে সুজিত কুমার বড়–য়া এবং সুধী সমাজের পক্ষে ড. আনিসুজ্জামান আলোচনা করেন। আলোচনার পরে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, এডভোকেট রানাদাস গুপ্ত, পিযূস বন্দোপাধ্যায় এবং এডভোকেট ঝর্ণা গ্লোরিয়া সরকার, এমপি অনুভূতি প্রকাশ করেন। চারটি ধর্মের চারজন ব্যক্তি মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কতটুকু প্রয়োজন সে বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাঙ্কিং এন্ড ইনসুরেন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সুবল কিস্কু ডিসিনিউজকে বলেন, ‘বিশ^বিদ্যালয়ে কখনো কে কোন ধর্মের এই বিষয়ে কোন প্রশ্নের বা বৈষম্যের শিকার হইনি। বিশ^বিদ্যালয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে আমরা মানুষ। জাতি-ধর্ম ভেদে সকলের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সুশিক্ষার এবং নিজ ধর্ম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাবে ধর্মীয় গোড়ামি কাজ করে মানুষের মধ্যে।’
বাংলাদেশের খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, বর্তমান সময়ে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমান পোপ সংলাপের বিষয়ে মন্ডলীতে গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশে কিছু নেতিবাচক ঘটনার পরে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেত্বত্বে আমরা বাংলাদেশ ইন্টার রিলিজিয়াস ফোরামের কাজ শুরু করি। বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের মানুষের কাছে গিয়েছি সংলাপের জন্য। মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখতে হলে সংলাপের বিকল্প নেই। আমাদের মধ্যে অন্যর ধর্মকে গ্রহণ করার মনোভাব থাকতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ-সমাজে সম্প্রীতি বিদ্যমান থাকবে।


পাদ্রিশিপপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম মোল্লা ডিসিনিউজকে বলেন, মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের সাথে সংলাপের একান্ত প্রয়োজন। যার যার ধর্ম তার কাছে কিন্তু মানুষ হিসেবে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে একসাথে কাজ না করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের দেশে ধর্মীয় গোড়ামির কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়। এই ভুল বোঝাবুঝির নিরসন করা সম্ভব সংলাপের মাধ্যমে, আলোচনা করে। রাষ্ট্রপ্রধানরা আমাদের আদর্শ, তারা যদি সংলাপের আদর্শ আমাদের ছোটদের সামনে তুলে ধরতে পারে তাহলে আমাদের দেশে অন্য ধর্মের সাথে সংলাপের পথ আরো বেশি প্রসারিত হবে।
সেমিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চারটি ধর্মের প্রায় ২৫০জন উপস্থিত হয়েছিলেন।