ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২২

উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভা-২০২২

0
165

ডিসিনিউজ ।। ঢাকা

‘ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নের মাধ্যমে খ্রিষ্টান ভাইবোনেরা দেখিয়েছে, একতাবদ্ধ থাকলে কতটা এগিয়ে যাওয়া যায়’ ঢাকা ক্রেডিটের ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।

৪ নভেম্বর, তেজগাঁও বটমলী হোম উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এই কথা বলেন।

সকাল ১০টায় সদস্যদের উপস্থিতি কোরামপূর্তি ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু করেন।

সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভার সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব স্বপন ভট্টাচার্য এমপি ও ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক ড. তরুণ কান্তি শিকদার, বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম-নিবন্ধক রিয়াজুল কবীর, উপ-নিবন্ধক (প্রশাসন) মোছাঃ নূর-ই- জান্নাত, তেজগাঁও চার্চের পাল-পুরোহিত সুব্রত বি. গমেজ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাস, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:-এর ভাইস-চেয়ারম্যান অপূর্ব যাকোব রোজারিও ও জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘ বিগত বছরে ঢাকা ক্রেডিট বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, যা ছিল সময়োপযোগি ও সদস্যবান্ধব উদ্যোগ। সদস্যদের জীবন-মান উন্নয়নে আয়ের উৎস সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রায় ২০০ জন সদস্যকে উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং ৬২ জনকে উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান; ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পেপারলেস অফিস বিনির্মাণে নিজস্ব সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সেবা প্রদান; নির্মিতব্য ডিভাইন মার্সি হাসাপাতাল, লিমিটেড কোম্পানী হিসাবে নিবন্ধন; ঢাকা ক্রেডিট অ্যাপ-এর মাধ্যমে অনলাইন সদস্য সেবা এবং ইনস্ট্যান্ট ঋণ প্রদান; সমিতিরি নিজস্ব জমিতে কৃষি প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাদ্য সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়া, সমিতির নতুন প্রধান কার্যালয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন; ঢাকা ক্রেডিটের কর্মএলাকায় খ্রিষ্টভক্তদের মধ্যে খানা জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিক হলো ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সদস্যদের ১০% লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভা বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির শেষ বার্ষিক সাধারণ সভা। বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের প্রাক্কালে ৩০ জুন, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সমিতির সম্পদ পরিসম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৯১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা এবং নীট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৩০ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। দায়িত্ব গ্রহণের পরেই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড মোকাবেলা করতে হয়েছে। যে সময়টাতে মানুষ ঘরের বাইরে বের হতে সাহস পায়নি, সদস্যদের সহযোগিতায় সেই কঠিন সময়েও ঢাকা ক্রেডিট দুর্বল না হয়ে বরং আরো শক্তিশালী হয়েছে।’

‘কোভিড মহামারির ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও ৩০ জুন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সমিতির সম্পদ-পরিসম্পদের পরিমাণ ৩৪১ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯১ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৩ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা এবং নীট সম্পদের পরিমাণ ২১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৩০ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা থেকে ১৫২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা হয়েছে’ বলেন প্রেসিডেন্ট কস্তা।

এ ছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন, বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনায় নিলে সমিতির মোট সম্পদ পরিসম্পদের পরিমাণ দাঁড়াবে ১১ শত ৪৫ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা যা হিসাবে প্রদর্শিত মোট সম্পদের তুলনায় ১১১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা বেশি এবং শেয়ার প্রতি নীট সম্পদের মূল্য দাঁড়াবে ২৫ টাকা ৬৭ পয়সা। যা বর্তমান বাস্তবতায় এবং সমজাতীয় যে কোন সমিতির তুলনায় ঈর্ষণীয় অর্জন। সমিতির এই অগ্রযাত্রার সাথে থেকে সমিতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিটের যেকোনো নিমন্ত্রণে আমি আসি। যেকোনো সময়, যেকোনো অনুষ্ঠানে আমি ডাকলেই ভালবাসার টানে সাড়া দেই। খ্রিষ্টানদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম রয়েছে। আজকে ঢাকা ক্রেডিটের বার্ষিক সাধারণ সভা যে বটমলী স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেই স্কুলটিও খুব ভাল। বাংলাদেশের খ্রিষ্টানরা ভাল বলেই সকলের কাছে পরিচিত এবং প্রিয়।’

খাদ্য দ্রব্যের বৃদ্ধি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার পেছনে একটা কারণ রয়েছে। এখানে একটা ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে কিছু মানুষ আমাদের অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে। পাশের দেশগুলোতেও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। সেখান থেকে বেশিরভাগ খাদ্য দ্রব্য সারাবিশ্বে রপ্তানি হয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তা ব্যহত হচ্ছে। তাই আপনারা অন্যদেরও জানাবেন কেন এমন হচ্ছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। কোভিড নিয়ন্ত্রণে তিনি ৫ম স্থান দখল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নারী নেতৃত্ব সারা বিশ্ব অনুসরণ করছে। খাদ্য শস্যে যেহেুতু একটা সমস্যা হচ্ছে, তাই প্রধানমন্ত্রী খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছেন। দক্ষতা ও দেশপ্রেম যাদের মধ্যে আছে, সকলে তাদের ভালবাসে এবং নেতা হিসেবে মানে। ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছেন শুনে আমি অনেক খুশি। তাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

গেস্ট অব অনার সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে যে শৃঙ্খলা, আপনাদের মধ্যে যে সততা, আপনাদের মধ্যে যে একাত্মতা, তার জন্যই আপনারা এগিয়ে যেতে পারেন। বঙ্গবন্ধু প্রথমেই বলেছিলেন, ‘সমবায়ের মাধ্যমেই আমাদের মুক্তি।’ ৭২’র সংবিধানে বঙ্গবন্ধু সমবায়ের দ্বিতীয় খাত হিসেবে স্থান দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ, যে স্বপ্ন তা আপনারা সফল করে সত্যি করেছেন। আপনারা দুর্নীতি, দুর্নাম থেকে দূরে থেকে সমবায়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা যে আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল করতে যাচ্ছেন, তা সত্যিই অভ‚তপূর্ব উদ্যোগ। আমি মনে করি একটি প্রতিষ্ঠানই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে।’

গেস্ট অব অনার ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ বলেন, ‘আজ বোর্ড মেম্বারদের কাছে বলতে চাই, ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যরা অন্যকোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে যায় না। আপনাদের উপর আস্থা রেখেই সদস্যরা আপনাদের কাছে যায়। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, কোনো অসৎ লোক যেন এখানে ঢুকতে না পারে। আজ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই পংকজকে। সে জাতীয় পুরস্কারে ঘোষিত হয়েছে। আমরা তাঁর মঙ্গল কামনা করি।’
এ সময় অন্যান্য অতিথি বক্তাগণ ঢাকা ক্রেডিটের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করেন। এ সময় তারা ঢাকা ক্রেডিটের সকল প্রকার কার্যক্রমে প্রতিবেদন সদস্যরা জানার অধিকার রাখে বলে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ‘সদস্যরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাই জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতার জন্য সাধারণ সদস্যদের সকল প্রকার তথ্য জানতে হবে। এর জন্যই আজকের এই বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত। তাই আমাদের সক্রিয়ভাবে সাধারণ সভায় অংশ নিতে হবে।’

প্রথমেই জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা, সমবায় পতাকা এবং ঢাকা ক্রেডিটের পতাকা উত্তোলন করেন অতিথিবৃন্দরা। এরপর অতিথিদের ফুলের শুভেচ্ছা, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ ও প্রার্থনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়।

এরপর প্রধান অতিথি, গেস্ট অব অনার, বিশেষ অতিথিগণ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য পর্বের পরেই শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভার মূলপর্ব। কর্মসূচী অনুসারে বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন; বার্ষিক কার্যক্রম প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন; বার্ষিক হিসাব বিবরণী পেশ ও অনুমোদন; প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন; ক্রেডিট কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন; সুপারভাইজরি কমিটির প্রতিবেদন পেশ ও অনুমোদন; নতুন প্রস্তাবনা পেশ ও অনুমোদনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় সদস্যরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

সাধারণ সভায় বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম-নিবন্ধক রিয়াজুল কবীর জানান প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা ৫ নভেম্বর জাতীয় সমবায় দিবসে সেরা সমবায়ীর পুরস্কারের জন্য মনোনিত হয়েছেন। এতে উপস্থিত সদস্যরা আনন্দ প্রকাশ করেন এবং প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান। সেই সাথে সাধারণ সভায় উপস্থিত প্রধান অতিথি, গেস্ট অব অনার, বিশেষ অতিথি ও ঢাকা ক্রেডিটের বর্তমান বোর্ড প্রেসিডেন্ট কস্তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন।

এদিন এক সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সদস্যদের নিয়ে লটারি ড্র এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। শেষে ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলবার্ট আশিস বিশ্বাসের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে ৬২তম বার্ষিক সাধারণ সভা সমাপ্ত হয়।