ঢাকা ,
বার : বুধবার
তারিখ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ১১ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক-বড়দিন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান এবং কীর্তন ও অঙ্কন...

অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক-বড়দিন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান এবং কীর্তন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা

0
852

রাজধানী ফার্মগেটের বটমলী হোমস্ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক আয়োজিত প্রাক-বড়দিন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান এবং কীর্তন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা। অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।

১৫ ডিসেম্বর, সকাল ১০টায় সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ঘোষণা করেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১২টি কীর্তন প্রতিযোগী দল এবং ১০৮ জন স্কুল পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রী কীর্তন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

প্রতিযোগিতার শুরুতে সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ, ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টার গমেজ, সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা, ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ ও পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয়, সমবায়ী এবং ঢাকা ক্রেডিটের পতাকা উত্তোলন করেন।

এর পর শুরু হয় স্কুল পড়–য়া কিশোর-কিশোরীদের অঙ্কন ও বিভিন্ন অঞ্চলের দল নিয়ে কীর্তন প্রতিযোগিতা। কীর্তন প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন ইউনির্ভাসিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ’র (ইউডা) কীর্তন গবেষক তাপসী ঘোষ, বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. মাহমুদুল হাসান। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন চিত্রশিল্পী নাজিব তারেক এবং চিত্রশিল্পী ফারহানা আফরোজ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সমিতির সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি মানিক লরেন্স রোজারিও প্রারম্ভিক প্রার্থনা করেন। বিকালের অনুষ্ঠানে পবিত্র বাইবেল পাঠ করেন উক্ত কমিটির সদস্য স্টেলা হাজরা।

বিকালে অনুষ্ঠিত হয় দিনের মূল অনুষ্ঠানপর্ব। অনুষ্ঠানে সমিতির প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, গেস্ট অব অনার মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম, দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস (কাককো) লি:’র চেয়ারম্যান নির্মল রোজারিও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহধর্মিনী, সমবায় অধিদপ্তরের উপনিবন্ধক (অডিট ও আইন) মোসা. নুর-ই-জান্নাত, তেজগাঁও থানা সমবায় অফিসার তাসলিমা আক্তারসহ আরো অনেকে।

সভাপতি বাবু মার্কুজ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘আজকে আপনাদের উপস্থিতি আমাদের উদ্বেলিত করছে। আমরা আজ বড়দিন ও বিজয়ের আনন্দ সকলের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। সবাইকে শুভ বড়দিন ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।’

‘আমি যে সেরা সমবায়ী হিসেবে স্বর্ণপদক ও সম্মাননা পেয়েছি, তা মূলত আপনাদের সকলের সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতায় ঢাকা ক্রেডিট এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরো উচ্চতায় পৌঁছে যাবে’ বলেন প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সকল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমার ভাল লাগে। তারা আমার প্রাণের মানুষ। আমাদের কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি, নির্মল রোজারিও, বাবু মার্কুজ সকলেই আমার খুব প্রিয় এবং কাছের। আজকের এই দিনে সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই।’

‘ঢাকা ক্রেডিট যে বিশাল কর্মযজ্ঞ করে যাচ্ছে, তা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাবু মার্কুজ। আমি তাঁর বাবাকে চিনতাম। তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। বাবু মার্কুজও খুব ভাল মানুষ, সেই সাথে একজন যোগ্য নেতা। তিনি দেশের বাইরে গিয়েও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটা আমাদের দেশের গৌরব। ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশের সাথে মিলে যায়। আমি ঢাকা ক্রেডিটের আরো উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। বাবু মার্কুজ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যে স্বর্ণপদক ও সম্মাননা গ্রহণ করেছেন, তার জন্যও তাঁকে ও তার সমিতিকে অভিনন্দন জানাই’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল।

গেস্ট অব অনার মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী বলেন, ‘খ্রিষ্টান সমাজের ভাই-বোনেরা আমার নিজের মানুষ। তাদের সাথে আমার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কালীগঞ্জের খ্রিষ্টান ভাই-বোনদের সাথে আমার সম্পর্ক আত্মার।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট এখন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রতিষ্ঠান। আমি অনেকবার ঢাকা ক্রেডিটের অনুষ্ঠানে এসেছি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নত সোনার বাংলা গড়তে ঢাকা ক্রেডিট কাজ করে যাচ্ছে। আমার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা আমি ঢাকা ক্রেডিটে দিতে প্রস্তুত।’

সমিতির প্রেসিডেন্ট গমেজ স্বর্ণপদক লাভ করায় তিনি প্রেসিডেন্টসহ সমিতির সকলকে এ সময় অভিনন্দন জানান।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খ্রিষ্টান সম্প্রদায় সম্পর্কে খুব ভালভাবেই জানি। তারা অনেক সুশৃঙ্গল এবং শান্তিপ্রিয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং রেখে যাচ্ছে। ঢাকা ক্রেডিটের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ যে উপকার পাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’

তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত বাংলাদেশ গড়তে যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকা ক্রেডিট যুব সমাজ নিয়ে কাজ করছে, যা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ সেরা সমবায়ী হিসেবে যে সম্মান পেয়েছেন, তা সমিতিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। আগামীতে ঢাকা ক্রেডিট সমাজ, জাতি তথা দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করবে বলে আশা করি।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা বলেন, ‘ঢাকা ক্রেডিট এখন খ্রিষ্টান সমাজের বাইরে এসেও কাজ করছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এখন সমিতির সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে। খুব শিঘ্রই ঢাকা ক্রেডিট ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। রিসোর্ট এন্ড ট্রেনিং সেন্টারের উন্নয়নের বর্ধিত কাজ চলমান রয়েছে, প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্কুল, চাইল্ড কেয়ার, সমবায় বাজারসহ নানা ধরনের সেবাগ্রহণের সুবিধা। সকল মানুষ এখান থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। সমিতির প্রেসিডেন্ট যে সম্মান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছেন, তা ঢাকা ক্রেডিটকে আরো একধাপ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’

এ সময় তারা বড়দিনের শুভেচ্ছা ঘরে ঘরে সবাইকে পৌঁছে দিতে আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস আমাদের জন্য নানা দিক থেকে আনন্দের। এক দিকে খ্রিষ্টের জন্মতিথি, অন্য দিকে বাঙালির বিজয়ের মাস। তাই এই মাসটি সকল ক্ষেত্রেই বিশেষ গুরুত্বের।’

এ দিন বক্তারা সবাইকে বড়দিন ও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানান।

প্রেসিডেন্ট গমেজ জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায়ী পুরস্কার প্রাপ্তিতে এদিন সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদানসহ তাঁর উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও ২০ জন কৃতী ছাত্র-ছাত্রী, ৭ জন বিসিএস ক্যাডার ও ৫ জন খেলোয়ারকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে কীর্তন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। কীর্তন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় হলিক্রশ ছাত্রী হোস্টেল, দ্বিতীয় হয় রাঙ্গামাটিয়ার জয়রামবের উদয়ন যুব সংঘ এবং তৃতীয় হয় বনপাড়া খ্রিষ্টান ছাত্র সংঘ।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিরেক্টর আলবার্র্ট আশিস বিশ্বাস, কীর্তন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতার ফলাফল ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিরেক্টর উইলসন রিবেরু।

এ ছাড়াও বড়দিনের কেক কাটা ও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিলো এদিনে বিশেষ আকর্ষণ। অনুষ্ঠান শেষে ডিরেক্টর রূপন পিউরীফিকেশন ও পাপিয়া রিবেরুর পরিচালনায় লটারি ড্র ছিল সদস্যদের ভাগ্য যাচাইয়ের দারুন সুযোগ।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি পংকজ গিলবার্ট কস্তা। শেষ প্রাথর্না করেন সমিতির প্রাক্তন সেক্রেটারি হেমন্ত আই. কোড়াইয়া।

শেষে সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট শীরেন সিলভেষ্টারের ধন্যবাদ বক্তব্যে মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।

ডিসিনিউজ/আরবি.আরপি. ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮