শিরোনাম :
অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের আলোর দিশা বলাশপুর আবাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়
বস্তি ও ঘিঞ্জি এলাকার মানুষ সর্বদা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকে ও অবহেলিত হয়।
বস্তি ও ঘিঞ্জি পরিবেশে জন্ম নেওয়া গরীব ও সুবিধা বঞ্চিত ছিন্নমূল ছেলে-মেয়েরা যে বয়সে কলম ধরবে, সেই বয়সে তাদের বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িয়ে পরতে হয়। তারা নিজেরা তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুই জানে না। তারা এও জানেনা তাদের মানবাধিকারগুলো কী কী। তাদের অনেকে এই অবস্থা থেকে উঠে আসতে চায়। মানুষের মতো মানুষ হয়ে বড় হতে চায়।
এইসব অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল গরীব ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতকে সুন্দর ও সুগম করে গড়ার লক্ষে তেইজে ব্রাদার্সদের মাধ্যমে স্থাপন করা হয় বলাশপুর আবাসন প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি শম্ভুগঞ্জ ব্রীজের দক্ষিণ পাশে বলাশপুর বস্তি ও ঘিঞ্জি পরিবেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিদ্যালয়ে ৩৮০ জন অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়টির পথ চলা। এখানে কেজি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। পাঠদানে শিক্ষক হিসাবে সহায়তা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের সংখ্যা মোট ১৮জন। বিদ্যালয়ে সকাল ও বিকাল দুই শীফ্টে সুশৃঙ্খলভাবে পাঠদান করা হয়।
এর পূর্বে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের বস্তি বা ঘিঞ্জি পরিবেশে কোথায়ও এই ধরনের স্কুল গড়ে ওঠেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের পরিবেশ অত্যন্ত ভাল। ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে। পিএসসি পরীক্ষায় পাশের হার শত ভাগ।
বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্রেইন স্টরমিং, অ্যাকশন সং ও আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়। এছাড়াও পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের প্রতিভা বিকাশের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ২৬ মার্চ কুচকাওয়াজ ডিসপ্লেটে অংশগ্রহণ করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করছে ধারাবাহিকভাবে।
অভিভাবক ফরিদা ইয়াসমীন বলেন “এই স্কুলে ছেলেমেয়েরা পড়া-লেখার অনেক সুবিধা পায়। এখানে কলম-খাতা এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও শিক্ষকগণ নিয়মিত হোম ভিজিট করে এবং অভিভাবকদের সাথে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করেন।” তিনি স্কুলটি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন।
বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আইমীর সিরাজ বলেন, ‘আমি এখানে ছয় বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। অনেক অবহেলিত, বঞ্চিত ও ছিন্নমূল শিশুদের শিক্ষার আলো দিতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।” তিনি বিদ্যালয়টি আরো উন্নয়নকল্পে যেন সরকারের সুদৃষ্টির আওতায় আসে সেজন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আরবি/আরপি/১৫ জুন, ২০১৭