শিরোনাম :
অমর একুশে সংগীতের রচয়িতা ও বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি বিসিএ’র শ্রদ্ধা
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
কালজয়ী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে সেই গান গেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রতীক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সকল স্তরের মানুষ।
২৮ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের (বিসিএ) একটি দল বরেণ্য এই ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ছিলেন ভাষা সৈনিক, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এরপরই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। আজ বেলা ১১টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে বহনকারী একটি ফ্লাইট দেশে পৌঁছায়। সেখান থেকে সরাসরি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয় সকল স্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
বেলা সোয়া একটার দিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহের কফিন করে অনুষ্ঠানের মঞ্চে নেওয়া হয়।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দীন। এরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ শ্রদ্ধা জানান। এরপর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপরই বিভিন্ন সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়ার নেতৃত্বে একটি দল এই বরেণ্য ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশনের যুগ্ম-মহাসচিব সুব্রত হাজরা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক থিওফিল রোজারিও, ঢাকা ক্রেডিটের বোর্ড অব ডিরেক্টর পল্লব লিনুস ডি’রোজারিও, এসোসিয়েশনের সদস্য মলয় নাথ, মাইকেল বাড়ৈ, ভিক্টর রে, জেমস লরেন্স ডি’রোজারিও, মার্টিন রোনাল্ড প্রামানিক প্রমুখ।
শ্রদ্ধা নিবেদনকালে এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। সেই সাথে তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন।
সেই সাথে শ্রদ্ধা ও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পংকজ গিলবার্ট কস্তা। তিনি এই বরেণ্য ব্যক্তির আত্মার চিরশান্তি কামনা ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে বিকেল চারটায় মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাবে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী গাফ্ফার চৌধুরী স্ত্রীর পাশেই শেষশয্যায় শায়িত হন।
বরিশালের উলানিয়া গ্রামের চৌধুরীবাড়িতে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি একজন সুপরিচিত বাংলাদেশি গ্রন্থকার ও কলাম লেখক। স্বাধীনতাযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ছিলেন।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন চার মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তাঁর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী ৫০ বছর বয়সে গত ১৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালে থেকেই মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছিলেন তিনি। বিনীতা চৌধুরী বাবার সঙ্গে লন্ডনের এজওয়ারের বাসায় থাকতেন এবং তাঁকে দেখাশোনা করতেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।