শিরোনাম :
আগামী নির্বাচনে তাঁদের ভোট দেবেন না: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশে বক্তারা
ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্বশীলতা, সাংবিধানিক বৈষম্য বিলোপকরণ, সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা, স্বার্থবান্ধব আইন বাস্তবায়ন ও প্রণয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য নিরসন, দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মন্ধতা-সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ, অর্পিত সম্পত্তি আইন কার্যকর করাসহ সংবিধিবদ্ধ ৫ ও ৭ দফা দাবি নিয়ে মহাসমাবেশ করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫ ও ৭ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বে যাঁরা তাদের দাবিগুলোর সমর্থন না দেবেন, তাঁদের ভোট না দেওয়ার ঘোষণা দিলেন বক্তারা।
২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৫০ হাজারও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যালঘুদের অংশগ্রহণে এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যালঘু জনগণের অস্তিত্ব রক্ষায় বক্তারা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে এই দায় নিতে বলেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, একটি স্বাধীন দেশে যদি কেউ নির্যাতিত হয়, তবে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
ঊষাতন তালুকদার এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিক।
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের মূলস্রোতধারার সংখ্যগরিষ্ঠদের মতো (মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়) সংখ্যালঘু হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও আদিবাসীদেরও সমান আধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশে সবাই সমান অধিকার পাবার যোগ্য। সংখ্যালঘিষ্ঠরা নানাভাবেই সুবিধাবঞ্চিত ও বিপন্ন। অনাস্থার কারণে এ দেশ ছেড়ে অনেক সংখ্যালঘুই চলে যাচ্ছে। এ অবস্থা যেন বন্ধ করা হয়, এ জন্য সরকারের কাছে জোর অনুরোধ জানান তিনি। স্বাধীনতার মূলনীতি মানলেই সাম্প্রদায়িকতার অনুভূতি আর থাকবে না বলে উল্লেখ করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
‘স্বাধীনতার ৪৭ বছর অতিক্রম হলেও দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়র-নির্যতন বন্ধ হয়নি। বিশেষভাবে সংসদ নির্বাচনের পূর্বে ও পরে এই নির্যতনের তীব্রতা বেশি দেখা যায়,’ বলেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি হলেও তার যথাযত বাস্তবায়ন হয়নি।
দাশগুপ্ত ২০০১-২০০৬ সালের নির্যাতনের চালচিত্র উল্লেখ করেন। সাম্প্রতিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত এক বছরে দেশের নানা স্থানে দুবৃত্তায়নের কারণে সংখ্যালঘুরা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নির্যাতনকারীদের শাস্তি হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে দেশ সংখ্যালঘুহীন হয়ে পড়বে অচিরেই।
দেশে ৩ কোটি সংখ্যালঘুর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে দাশগুপ্ত বলেন, এদের (সংখ্যালঘুদের) রাষ্ট্র দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখছে যা অনৈতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংঘর্ষিক।
‘স্বাাধীনতাযুদ্ধে আমাদের সক্রিয় অবদান থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র গঠন করা হয়নি,’ বলে উল্লেখ করেন দাশগুপ্ত।
সমাবেশে উপস্থিতদের মাধ্যমে অনুপস্থিতদেরও তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনে যেসব প্রার্থী সংখ্যলঘুদের সম-অধিকার বিবেচনায় না নিবেন, তাঁদের যেন ভোট দেওয়া না হয়। যাঁরা তাঁদের ইস্তেহারে সংখ্যালঘুদের যুক্তিপূর্ণ দাবি মেনে নিবেন, তাদের ভোটদানের অনুরোধ জানান। সকল রাজনৈতিক দল ও জোটকে বিষয়টি সূক্ষ্ম বিবেচনায় আনার জোর অনুরোধ জানান। ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর সরকারকেও বিষয়টি বিবেচনায় আনার দায়বদ্ধতার আওতায় আনেন।
বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ৭ দফা উত্থাপন করা হয়েছিল। ‘আজকের ৫ দফা অনেক আগেই তুলে করেছি। ৫ ও ৭ দফা আদায়ের জন্য আন্দোলন করতে হবে। রাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ত থেকেই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে সংগ্রাম করতে হবে।
নির্মল রোজারিও প্রধানমন্ত্রীকে ৭২তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘হেফাজতের দাবি যদি বিবেচিত হয়, তবে আমাদের মতো সংখ্যালঘুদের বিষয়গুলোও বিবেচনায় এনে বাস্তবায়ন করার প্রত্যাশা আমরা করতে পারি।’
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি তথা সাংবাদিক-লেখক শাহরিয়ার কবীর। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু, আদিবাসী নেতা তথা কলামিস্ট সঞ্জীব দ্রং।
অনুষ্ঠানের মূলসুরের সাথে সংহতি প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের পরিষদের অন্যতম সভাপতি হিউবার্ট গমেজ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসাসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল হেমন্ত আই কোড়াইয়া, এসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের প্রতিনিধি, বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ সমবায় সমিতি ঢাকা ক্রেডিট-এর ট্রেজারার বিপুল লরেন্স গমেজ, ক্রেডিট কমিটির সদস্য জেমস নিখিল দাস, প্রত্যেশ রাংসা, সুপারভাইজরি কমিটির সেক্রেটারি মানিক লরেন্স রোজারিও, সদস্য অবিনাশ নকরেক, সমিতির কর্মীবৃন্দ ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশন ও ঢাকা ক্রেডিট সমিতির সাথে সংশ্লিষ্ট নারী নেতৃবৃন্দ।
মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার পূর্বে বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে শাহবাগ থেকে টিএসসির চত্বর ঘুরে স্লোগান ও বেনারসহ মিছিল করে মহাসমাবেশে যোগ দেন এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় ও শাখা সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ আরো অনেকে।
আরপি.আরবি. ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮