শিরোনাম :
আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
আজ ৯ আগস্ট, বিশ্ব আদিবাসী দিবস। দেশের বিভিন্ন স্থানে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশে ও সারাবিশ্বে বসবাসরত সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সদস্য পংকজ গিলবার্ট কস্তা এবং ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া। তারা এক বিবৃতির মাধ্যমে সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আদিবাসী ভাই-বোনেরা দেশের মূলস্রোতের সাথে মিশে উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। প্রাচীণকাল থেকেই আদিবাসীগণ ভূ-প্রকৃতির যত্ন নিয়ে পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখায় অবদান রাখছেন। যুগযুগ ধরে বাংলাদেশের আদি জনগোষ্ঠি হিসেবে তারা প্রতিষ্ঠিত। আজকের এই বিশেষ দিনে সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা জানাই।’
তারা বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আদিবাসীরা যেভাবে অবদান রাখছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। আমরা তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
এ ছাড়াও এই দিনে বিশেষ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও। তিনি দেশের সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এখনো বন-জঙ্গল, পাহার, নদী, পর্বত সুরক্ষা দিয়ে ও যত্ন করে পৃথিবীকে বাসাযোগ্য করে রেখেছে আদিবাসী ভাই-বোনেরা। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন তারা। এই দিনে সকল আদিবাসী ভাই-বোনদের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অপর দিকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাণী প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আমরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান সংরক্ষণ ও তা পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করছি। আদিবাসী নারীরা ঐতিহ্যবাহী খাদ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসা জ্ঞানের ধারক। তারা আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।তারা পরিবেশ ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের রক্ষক।
সমতা আর টেকসই ভবিষ্যৎ- যেখানে কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না- এমন ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের অবশ্যই আদিবাসী নারীদের কণ্ঠস্বরকে জোরালো করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
আদিবাসী জনগোষ্ঠী কীভাবে তাদের চিরহরিৎ বন ও এসব বনের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করছে, তা আমি আমার সাম্প্রতিক সুরিনাম সফরে প্রত্যক্ষভাবে জেনেছি।
এই আন্তর্জাতিক দিবসে, আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণা বাস্তবায়ন এবং সবার মঙ্গলের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার ঘটানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি পালন করে আসছে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি আদিবাসী। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উন্নয়ন ও সংরক্ষণ উপকমিশনের কর্মকর্তারা তাদের প্রথম সভায় আদিবাসী দিবস পালনের জন্য ৯ আগস্টকে বেছে নেয়।
আদিবাসী জনগণের মানবাধিকার, পরিবেশ উন্নয়ন, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করাই বিশ্ব আদিবাসী দশক, বর্ষ ও দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বের ৭০টি দেশে ৩০ কোটি আদিবাসী বাস করে, যাদের অধিকাংশই অধিকারবঞ্চিত। অনেক দেশে আদিবাসীরা স্বীকৃতিই পায়নি। কোনো দেশে উপজাতি, কোনো দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বলে অভিহিত করা হয় তাদের।
১৯৯৩ সালকে জাতিসংঘ প্রথমবার আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করে। পরের বছর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবছর ৯ আগস্টকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘ ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ এবং ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালকে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় আদিবাসী দশক ঘোষণা করে।
১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা শুরু হলেও ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠনের পর থেকে বাংলাদেশে বেসরকারিভাবে বৃহৎ পরিসরে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, বগুড়া ইত্যাদি জেলাগুলিতে সাঁওতাল, শিং (গঞ্জু), ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, কর্মকার, তেলী,তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাক জনগোষ্ঠি বসবাস করছে। বিশ্বের তাবৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বাংলাদেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসীরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিচয়, ভূমির অধিকার ও নাগরিক মর্যাদার স্বীকৃতি দাবীতে দিবসটি উদ্যাপন করে থাকেন।