ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ঢাকা ক্রেডিট আজ আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন, যা খুশি তাই করার দিন: ঢাকা...

আজ আমাদের জন্য আলাদা একটি দিন, যা খুশি তাই করার দিন: ঢাকা ক্রেডিটের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন

0
489

ডিসিনিউজ।। ঢাকা

‘ডিজিটাল প্রযু্িক্ত ও উদ্ভাবন, জেন্ডার বৈষম্য করবে নিরসন’ মূলসুর নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৩। ঢাকা ক্রেডিটের নারী কমিটির উদ্যোগে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়। নারী দিবসের এই আয়োজনে সম্মাননা প্রদান করা হয় পাঁচ জন নন্দিত নারীকে।

৮ মার্চ, ফার্মগেটের তেজগাঁও চার্চ কমিউনিটি সেন্টারে নারী বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা ক্রেডিটের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পাপড়ী দেবী আরেং-এর সভাপতিত্বে এ দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট্য নাট্য ব্যক্তিত্ব ও সমাজকর্মী সারা যাকের। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৭১ টিভির উপস্থাপক ও সংবাদকর্মী মিথিলা ফারজানা। এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া, তেজগাঁও চার্চের পাল-পুরোহিত সুব্রত বি. গমেজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, কাককো লি: এর চেয়ারম্যান এবং ঢাকা ক্রেডিটের সাবেক প্রেসিডেন্ট পংকজ গিলবার্ট কস্তা, দি মেট্রোপলিটান খ্রিষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সেক্রেটারি ইমানুয়েল বাপ্পী মন্ডল, রাজাবাজার কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মার্সিয়া মিলি গমেজ, ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ, ট্রেজারার সুকুমার লিনুস ক্রুশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেং, সিইও লিটন টমাস রোজারিওসহ আরো অনেকে।

অনুষ্ঠানে সভাপতি পাপড়ী দেবী আরেং বলেন, ‘কোনো মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আলাদা দিবসের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। একজন নারীর অস্তিত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনের দরকার হয়ে পড়েছে। নারী দিবসের ফলে নারী অধিকার ভোগের দ্বার খুলেছে। নারীরা পেয়েছে বাকস্বাধীনতা, এগিয়ে গেছে বিশ্ব দরবারে। তারপরও নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়, তাই আমাদের নারী-পুরুষের সমন্বিত উদ্যোগে তা প্রতিকার করতে হবে।’

প্রধান অতিথি সারা যাকের বলেন, ‘আজকে আমাদের আনন্দের দিন, আমাদের দিন। আমাদের জন্য আজ আমাদের আলাদা একটি দিন। যা খুশি, তাই করার দিন। সরকার বলেছেন, ডিজিটাল সুবিধায় নারীদেরও সুযোগ দিতে হবে। নারীরা তো এগিয়ে গেছেনই, আরেকটু সুযোগ বাড়ালে নারীরা আরো বেশি এগিয়ে যাবেন। অভিভাবক হিসেবে ছেলে সন্তানের পেছনে যে সময় ও সুযোগ দেই, মেয়েদের পেছনেও সেই সময় ও সুযোগ ব্যয় করতে হবে। তা না হলে জেন্ডার ব্যালেন্স সম্ভব নয় এবং দেশও পিছিয়ে যাবে। ধর্মে বলা হয়েছে, ছেলে পাবে দুই তৃতীয়াংশ আর মেয়েরা পাবে এক তৃতীয়াংশ। যা কখনোই ঠিক নয়। দেশে একটা সুনির্দিষ্ট আইন থাকলে তাহলে নারী-পুরুষ সমান অধিকার পাবেন। শুধু আইন আমাদের সাহায্য করবে না, অভিভাবকদেরও শুরু থেকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।’

গেস্ট অব অনার মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে কোনো ধরনের জেন্ডার বৈষম্য করার কথা বলা নেই। তাহলে কেন বৈষম্য থাকবে! নারীদের ভয়েস রেইস করতে হবে। সেই সাথে তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। তখনই নারী অধিকার নিশ্চিত হবে।’

ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া বলেন, ‘আমি ঢাকা ক্রেডিটের সকল নারী সদস্য এবং বিশ্বের সকল নারীদের এই দিনে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনে এবং ঢাকা ক্রেডিটের উন্নয়নে নারীদের অনেক অবদান রয়েছে। ঢাকা ক্রেডিট নারী ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। নারীরা আজ পুরুষের পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা করি লিঙ্গবৈষম্য লোপ করে একদিন সুন্দর সর্বজনীন পৃথিবী গড়তে পারবো।’

অন্যান্য অতিথিবৃন্দরা বলেন, ‘নারীরা এখনো তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় না। তারা তাদের সমধিকার থেকে এখনো অনেকাংশে পিছিয়ে। আমাদের এই চিত্র বদলাতে হবে। আমরা ঢাকা ক্রেডিটের ৬৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট পেয়েছি। এর অর্থ হলো নারীরাও এখন সামনের সারিতে চলে এসেছে। সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রেও নারীরা এগিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এখনো একটা প্রশ্ন থেকে যায়, আসলেই কি নারীরা সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আসলেই কি নারীরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন! অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই আমাদেরই সমাজকে পরিবর্তন করতে হবে।’

এ দিন পাঁচ জন নন্দিত নারী প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিদের হাত থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত পাঁচজন নারী হলেন:

ড. ক্যাথরিন ডেইজি গোমেজ
ড. ক্যাথরিন ডেইজি গোমেজ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট-এর প্রফেসর হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও তিনি স্থপতি হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি স্থপতি হিসেবে কাজ করার পর ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বুয়েটে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে এসিসটেন্ট প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসর এবং ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নবাবগঞ্জ জেলার বান্দুরায় পিতা যোয়াকিম এন্ড্রু গোমেজ ও মাতা হেলেন গোমেজের কোলজুড়ে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষা জীবনে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ক্যাথরিন গোমেজ দুই মেয়ের জননী।

জুলিয়েট কেয়া মালাকার

জুলিয়েট কেয়া মালাকার একজন উন্নয়ন কর্মী। বর্তমানে তিনি খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি’র) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি খ্রিষ্টান এইড, কমপেশন, ওয়ার্ল্ড রিনিউ, ওয়াইডবিøউসিএ-এর মতো স¦নামধন্য প্রতিষ্ঠানে সেবা দিয়েছেন। তিনি স্যোসাল ডেভলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। উন্নয়ন কর্মী ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে নারী উন্নয়নে ভ‚মিকা রেখে যাচ্ছেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর খুলনার মাটিয়াখালীতে তার জন্ম। পিতা জেমস্ মালাকার ও মাতা সিসিলিয়া জুথিকা মালাকার। বর্তমানে তিনি মিরপুরের পর্বতায় বসবাস করছেন। তিনি ১ মেয়ের জননী।

রুনু বেরোনিকা কস্তা

রুনু বেরোনিকা কস্তা করোনা মোকাবেলায় প্রথম টিকা গ্রহণকারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশ্ব যখন করোনা মহামারি মোকাবেলায় টিকা কার্যক্রম শুরু করে, তখন বাংলাদেশও সেই উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মাঝে করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভীতির সৃষ্টি হয়। ঠিক সেই সময় রুনু বেরোনিকা সাহসী ভ‚মিকায় অবতীর্ন হয়ে প্রথম টিকা গ্রহণ করেন এবং সবাইকে করোনা টিকা গ্রহণে উৎসাহীত করে করোনা মোকাবেলায় প্রত্যক্ষ অবদান রাখেন। তিনি ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা বানার্ড কস্তা ও মাতা বিনীতা কস্তা। নার্সিং পড়াশোনা শেষে এই পেশায়ই বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গাজীপুর জেলার হারবাইদ তার স্থায়ী ঠিকানা হলেও তিনি উত্তরা অফিসার্স কোয়াটারে বসবাস করছেন। তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জননী।

সিস্টার মেরী লিলিয়ান এসএমআরএ

সিস্টার মেরী লিলিয়ান এসএমআরএ নারী ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রতীয় জীবনে প্রবেশ করে নারীদের উন্নয়নেই তিনি কাজ করছেন। জাগরণী সেন্টার যাত্রা শুরু করে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে এবং সিস্টার লিলিয়ান প্রায় শুরু থেকেই ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ হতে এর সাথে যুক্ত। মূলত তার প্রত্যক্ষ অবদানে জাগরণী সেন্টার আজ নারীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয়। পিছিয়ে পড়া নারীদের সংগঠিত করে হস্তশিল্পের মাধ্যমে নারীদের যেমন করে তুলেছে আত্মনির্ভরশীল, তেমনি নারীদের ক্ষমতায়ন করেছেন নিশ্চিত। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালের পাদ্রীশিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন সিস্টার লিলিয়ান। পিতা রামু গোমেজ এবং মাতা এমিলিয়া গোমেজ। এসএসসি পাশ করার পর তিনি এসএমআরএ সিস্টার সম্প্রদায়ে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি জাগরণী সেন্টারে সামাজিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন

আর্নিকা চিরান

আর্নিকা চিরান একজন সফল পার্লার ব্যবসায়ী। ঢাকা ক্রেডিটের সহযোগিতায় তিনি এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঢাকার উত্তরায় পার্লার ব্যবসায় শুরু করেন। পার্লার ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ঢাকা ক্রেডিট থেকে ঋণ গ্রহণ করে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। পার্লার ব্যবসার আয় থেকে তিনি স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন, সেই সাথে নিয়মিত ঋণ ফেরৎ দিচ্ছেন। বর্তমানে তার পার্লারে ৪ জন কর্মী কাজ করছেন। এ ছাড়াও তার পার্লারে আরো অনেক নারী কাজ শিখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পিতা মৃ রেমন্ড নাফাক ও মা মৃ মরিয়ম চিরানের কোল জুড়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি তার জন্ম। আর্নিকা বিএ পাস করে হাতে কলমে কাজ এবং প্রশিক্ষণ নিয়ে পার্লার ব্যবসায় আসেন। তিনি বর্তমানে ঢাকার উত্তরা ঈঁসাখা এভিনিউতে থাকেন। তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জননী।

এদিন বোর্ড অব ডিরেক্টর মনিকা গমেজ ও স্টেলা হাজরার সঞ্চালনায় নারী দিবসের বর্ণিল আয়োজনে ছিল বাইবেল পাঠ ও প্রার্থনা, সভাপতি, প্রধান অতিথি, গেস্ট অব অনার এবং বিশেষ অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, নন্দিত পাঁচ জন নারীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান, বক্তব্য প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত নারীদের উপর এবং ঢাকা ক্রেডিটের নারী কার্যক্রম নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সেক্রেটারি মাইকেল জন গমেজ ধন্যবাদ বক্তব্য প্রদান করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।