ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৯ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ আজ ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস

আজ ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস

0
811
সাওঁতাল বিদ্রোহের তৈলচিত্র।

রবীন ভাবুক ।। ঢাকা

আজ ৩০ জুন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। এই দিনে সাওতালরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে সিধু মুরমু ও কানু মুরমু শহীদ হন।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম।

বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও ও সেক্রেটারি জেনারেল হেমন্ত আই. কোড়াইয়া আদিবাসীদের সাওতালদের এই ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে সকল জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

তাঁরা বলেন, সিধু ও কানুর আত্মদান একটি মহৎ ত্যাগ স্বীকার। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল আদিবাসী ভাইবোনেরা এই দিনটি থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারে। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের কাছেও আহ্বান জানান, যেন দেশের সাওতাল আদিবাসীদের জন্য সুরক্ষা নীতি গ্রহণ করে তাদের নির্যাতন, জমি দখলসহ সকল প্রকার জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করেন।

সাঁওতাল বিদ্রোহীদের সেদিনের দেশপ্রেমিক সংগ্রাম, আদর্শ ও অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ পরবর্তীকালে ভারতবর্ষের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। জুগিয়েছিল সাহস ও উদ্দীপনা। মুক্তিকামী মানুষের কাছে আজও তা অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই সিধু মুরমু ও কানু মুরমু স্মরণে ও শ্রদ্ধায় সাঁওতালদের অনেকেই দিনটিকে সিধু-কানু দিবস বলে থাকেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের এদেশীয় দালাল সামন্ত জমিদার, সুদখোর, তাদের লাঠিয়াল বাহিনী, দারোগা-পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে রুখে দাঁড়ান সাঁওতালরা। সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই বোন ফুলোমনি মুরমু ও ঝালোমনি মুরমু। আজো সাওতাল আদিবাসীরা এই দিনটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে।

ভারতের ভাগলপুর, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলার প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইল এলাকা দামিন-ই-কোহ্ বা ‘পাহাড়ের ওড়না’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। ভাগলপুরের ভগনা ডিহি গ্রামের সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব—এই চার ভাইয়ের নেতৃত্বে দামিন-ই-কোহ্ অঞ্চলে সংঘটিত হয় সাঁওতাল বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ভগনা ডিহি গ্রামে ৪০০ গ্রামের প্রতিনিধি ১০ হাজার সাঁওতাল কৃষকের বিরাট জমায়েত হয়। এই জমায়েতে সিধু-কানু ভাষণ দেন। এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অত্যাচারী শোষকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। এখন থেকে কেউ জমির কোনো খাজনা দেবেন না এবং প্রত্যেকেরই যত খুশি জমি চাষ করার স্বাধীনতা থাকবে। আর সাঁওতালদের সব ঋণ এখন বাতিল হবে। তাঁরা মুলুক দখল করে নিজেদের সরকার কায়েম করবেন।১০ হাজার সাঁওতাল কৃষক সেদিন শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন। ভগনা ডিহি গ্রামের ওই সভার শপথ ছিল বিদ্রোহের শপথ। বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল ‘জমি চাই, মুক্তি চাই’। জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও জুলুম থেকে মুক্ত হয়ে শান্তির সঙ্গে উৎপাদনের কাজ ও জীবন ধারণ করার সংকল্প নিয়ে সাঁওতাল কৃষকেরা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ান। তাঁদের এ বিদ্রোহের সঙ্গে যোগ দেন এলাকার শোষিত, বঞ্চিত বাঙালি ও বিহারি হিন্দু-মুসলমান গরিব কৃষক এবং কারিগরেরা। সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়ে উঠেছিল সব সম্প্রদায়ের গরিব জনসাধারণের মুক্তিযুদ্ধ।

প্রতিবছর এই দিনে সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি, শোভাযাত্রা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ও বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চলের সাঁওতালসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ ও দেশের বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়ক সিধু-কানুসহ সব আত্মদানকারীকে। উদযাপন করে থাকে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। এবারও বিদ্রোহের ১৬৫তম বার্ষিকীতে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী সাংস্কৃতিক পরিষদ, আদিবাসী নারী পরিষদ, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, আদিবাসী মুক্তি মোর্চা, নাচোল আদিবাসী একাডেমি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), নওগাঁ জেলা শাখা বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থানে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালন করছে।।