শিরোনাম :
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম মৃত্যু বার্ষিকী
|| হিমেল রোজারিও, ডিসি নিউজ ||
আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম মৃত্যু বার্ষিকী। কবিগুরুকে বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ সমভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান করেন। তাঁর কারণেই আজ বাংলা সাহিত্য ভান্ডার অনেকাংশই হয়েছে সমৃদ্ধ।
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ একটি যুগ, একটি শতাব্দী, একটি উপমহাদেশের চিত্র শুধু একটি নাম নয়। বাংলা সাহিত্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, কথা সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক, সঙ্গীত রচয়িতা, সুর-¯্রষ্টা, গায়ক, গল্পকার, চিত্রকর, অভিনেতা ও সমাজসেবী। তবে তিনি বিশ্বময় কবি হিসাবে স¦ীকৃত। বাংলা ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল। রবীন্দ্রনাথের জীবনের ধাপে ধাপে তাঁর জীবন জিজ্ঞাসা ও সাহিত্য দর্শনে পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানমস্ক ও ধর্মানুরাগী কবি। যুগে যুগে পৃথিবীতে সাহিত্য সংস্কারক, সভ্যতা, দর্শন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ সব কিছুকেই আতস্থ করেছেন গভীর অনুশীলনের ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিশ্ব পরিক্রমার মধ্য দিয়ে। তাই তাঁর সাহিত্য জীবনের নানা পর্যায়ে বিষয় ও আঙ্গিকের নিরন্তর পালাবদল লক্ষণীয়। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল তার কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গীতিনাট্য, নৃত্য-নাট্য, ভ্রমণে কাহিনী, চিঠি পত্র এবং দেশ-বিদেশে প্রদত্ত বক্তৃতামালা। রবীন্দ্রনাথের অন্তর্নিহিত জীবনবোধ ছিল স্থির এবং বহুমাত্রিক পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিয়েও পরিবর্তনশীল। কবি রবীন্দ্রনাথ কোন যুগের বা কালের কবি বা সাহিত্যিক নন, তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বা কালজয়ী কবি।
আরো পড়ুন: কুলাউড়ায় নৃ-গোষ্ঠির ১০টি দাবি
প্রশান্ত কুমার পাল সম্পাদিত ‘রবি জীবনী’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্ম তারিখটির বিস্তারিত দেয়া আছে। সেখানে উল্লেখ আছে -১২৬৮ বঙ্গাব্দ(১৭৮৩ শকাব্দ) ২৫ বৈশাখ, সোমবার (ইংরেজি মতে ৭ই মে ১৮৬১, মঙ্গলবার) রাত্রি ২টা ২৮ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে জোড়াসাঁকোর ভদ্রাসন বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়। তখন পিতা দেবেন্দ্রনাথের বয়স ছিল ৪৪ বছর এবং মাতা সারদা সুন্দরী দেবীর বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর ছিল। রবি ঠাকুরের পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হল:
পিতা : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
মাতা: সারদাসুন্দরী দেবী
পিতামহ : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রপিতামহ: দর্পনায়াণ ঠাকুর, স্ত্রী: ভবতারিনী দেবী (শ্বশুর বাড়িতে নাম মৃনালিনাদেবী )।
ভাই-বোন: ১৫ জন। ভাই ৯জন, বোন ৬জন। ভাইদের নাম: ১। দিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ২। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৩। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৪। ধীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৫। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ৬। পুণ্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭। সোমন্দ্রেনাথ ঠাকুর ৮। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৯। বুধেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বোনদের নাম: ১. সৌদামিনি দেবী ২. সুকুমারী দেবী ৩. শরৎকুমারী দেবী ৪. স্বর্ণকুমারী দেবী ৫. বর্ণকুমারী দেবী।
জোড়াসাঁকোর ইতিবৃত্ত: বাংলাদেশে তখন এক যুগসন্ধিক্ষণ অবস্থা। পাথুরিয়া ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠা যদি ঠাকুর বাড়ির অভিজাত্যের সূচনা হয় তাহলে রবীর জন্মকালে তা প্রায় শতবার্ষিকীর মুখে। মূলত দ্বারকানাথের মাধ্যমে জোড়াসাঁকোর এই ঠাকুর বাড়ির প্রতিষ্ঠা বা উদ্ভাবকাল নিয়েও বিভিন্ন জনশ্রুতি বিদ্যমান। সবচেয়ে বহুল জনসমর্থনযোগ্য যে জনশ্রুতি তা হল আধুনিক বাঙ্গালি ব্রাক্ষণদের আদি পুরুষ মহারাজ আদিশূর কর্তৃক কৌনজ থেকে পাঁচজন ব্রাক্ষণ জোড়াসাঁকোতে আনা হয় এবং পরবর্তীতে কালাতিক্রমানুসারে ঐ ব্রাক্ষণদের মাধ্যমে ঠাকুর পরিবারটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে বলে জনসাধারণ ও কিছু ঐতিহাসিকদের বিশ্বাস। আবার কারো মতে শাগিুল্য গোত্রীয় ভট্টানারায়ণ থেকে ঠাকুর গোষ্ঠীর উদ্ভব, তাদের মৌলিক পদবী ছিল বন্দ্যোপাধ্যায়।
নাম ও জন্ম পরিচিতি: রবীন্দ্রনাথের বেশ কয়েকটি ছদ্মনাম ছিল। তিনি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ভানুসিংহ নামে পরিচিত। তাছারা যেসব ছদ¥নাম ছিল সেগুলো দিবাশূন্য ভট্টাচার্য, অপ্রকটিচন্দ্র ভাষ্কর অন্নাকালী পাকড়াশী। চৈনিক নাম চু তেন তান।
রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন দার্শনিক ও কবি। মেজ ভ্রাতা স্বতেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই.সি. এস. অন্য ভ্রাতা জতীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সংগীতজ্ঞ এবং নাট্যকার। বোনদের মধ্যে স্বর্ণ্য কুমারী দেবী ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ঠাকুর বাড়ীর পরিবেশ ছিল সঙ্গীত, সাহিত্য, নাট্যাভিনয়ে মুখর। এ জন্যই মূলত রবীন্দ্রনাথ ও তার ভাই-বোনেরা শিল্পী-সাহিত্য ও অভিনয়ে পারদর্শী এবং দেবেন্দ্রনাথও ছিলেন শিক্ষা ও সাহিত্যের অনুরাগী।
বিবাহ: ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় মৃনালিনী দেবী রায় চৌধুরীর সাথে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের খুলনার বেনী মাধব রায় চৌধুরীর মেয়ে। রবীন্দ্রনাথ ও মৃনালিনীদেবীর দুই পুত্র এবং তিন কন্যা ছিল। ১৯০২ সালে মৃনালিনীদেবী মারা যান এতে কবি মুহ্যমান হয়ে পরেন। কয়েক মাসের মধ্যে কন্যা রেণুকা মারা যান। ১৯০৭ সালে তার পুত্র রথীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে। এরপর তার কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে। এত গুলো মুত্যুর শোক রবীন্দ্রনাথকে বিহব্বল করে যান। কিন্তু সাহস হারাননি কবি, শক্ত হাতে হাল ধরে ছিলেন জীবন সংগ্রাম নামক তরীর। পারিবারিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে কবি অর্থ সংকটে পতিত হন। এই অভাব-অনটনকে জয় করার মহাশক্তি ছিল তার মধ্যে। তাই তার কর্মযজ্ঞে ছেদ পরেনি, থেমে থাকেনি সাহিত্য সাধনা।
শিক্ষা জীবন : রবীন্দ্রনাথ সর্ব প্রথম ভর্তি হন কলকাতা ট্রেনিং একাডেমির শিশু শ্রেণেতে একেবারে বছরে শেষে। এখানে কি ধরনের শিক্ষা লাভ করেছিলেন তার তা মনে নেই। তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে। কয়েক বছর তিনি বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত সাধারণ স্কুলে পড়েছেন। সেখানেই তার বাংলা শিক্ষার ভিত্তি তৈরে হয়। সর্বশেষে পড়েন সেন্ট জেভিয়ার্সে, অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে তার স্কুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে গৃহ শিক্ষক দ্বারা চলতে থাকে তাঁর পড়াশুনা। তাঁর পিতার অসাধারণ ব্যক্তিত্বে ছিল আর্দশ ধর্ম জ্ঞান। জাগতিক বিষয়ে নিষ্ঠাবান অথচ নিরাসক্ত প্রখর যুক্তী বাদী, কি হৃদয়বান এগুলো তাকে এক বিশুদ্ধ সত্যের উপলদ্ধিতে তার মধ্যে জেগে উঠে আত্মপ্রত্যয়। হিমালয়ের নির্জন বাস গৃহে তিনি পিতার নিকট সংস্কৃত পড়েন। এ সময় গৃহ শিক্ষাকের নিকট তাকে পড়ানো হয় সংস্কৃত, ইংরেজি সাহিত্য, পদার্থ বিদ্যা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, প্রকৃতি বিজ্ঞান ইত্যাদি। এর পাশাপাশি চলতো ড্রয়িং, সঙ্গীত শিক্ষা, এবং জিমন্যাষ্টিকস। দেশের প্রচলিত শিক্ষাধারার প্রতি রবীন্দ্রনাথের অনাগ্রহ দেখে মেজদা সত্যেন্দ্রনাথ ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। সেখানে কিছু দিন ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলের এবং পরে লন্ডনের ইউনির্ভাসিটি কলেজে তিনি ব্যারিষ্টারি নয় ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশুনা করতে শুরু করে ছিলেন এক স্কটিস প্রভাষকের বাসা থেকে। মাঝে মধ্যে তিনি সেখানকার সংসদ ভবনের সামনে ইংরেজি বির্তক প্রতিযোগিতা দেখার জন্য যেতেন, এবং মনোযোগ সহকারে শুনতেন। পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষ না করেই পিতা-মাতা তাকে ফিরে আসতে বললেন। কারণ তার পিতা-মাতা বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সাথে মিশে যাচ্ছেন। যদি রবীন্দ্রনাথের পিতা-মাতা তাকে যদি ফিরে আসতে না বলতেন হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজ ইংরেজি সাহিত্যে বড় কোন কবি বা ঔপন্যাসিক হয়ে যেতেন। আমরা তাকে আর পেতাম না। সেখানে তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছিলেন কীভাবে প্রতিভার বিকাশ করতে হয়। সে দেশের সঙ্গীত বিষয়ে তার অসীম কৌতুহল নিয়ে নিজের মত করে পড়াশুনা করেছেন। সর্বাঙ্গীন আত্মশিক্ষায় তিনি ছিলেন শিক্ষিত। আধুনিক বিশ্বে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন।
সাহিত্যে অবদান: বাংলা সাহিত্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ কবি হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ তার অমর শ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলী। গীতাঞ্জলী কাব্য-গ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে এশিয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ৮ বছর বয়স হতে তিনি কবিতা লেখা হাতে খড়ি হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭৪ সালে তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়, “অমৃত বাজার” নামে একটি দ্বিভাষিক পত্রিকায়। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ হচ্ছে দুধারী কৃপাণ। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, গানে কোনো অংশে কমতি ছিলনা। পৃথিবীতে অন্য কোনো বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে কেউ এত পারর্দশী ছিলেন না বলে মনে হয়। তিনি হচ্ছেন বাংলা ছোট গল্পের পথিকৃত। বাংলা ভাষা সাহিত্যর প্রতিটি জায়গায় তার লেখনির স্পর্শে শুধু সমৃদ্ধই হয়নি, বিশ্বে সাহিত্য দরবারে চিরকালে জন্য প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। তার রচিত ছোট গল্পে ধরা পড়েছে সমগ্র গ্রাম বাংলা ও তার সাধারণ মানুষে সুখ-দুঃখের চিত্র। রবীন্দ্রনাথের ছোট্ট গল্পের মধ্যে ফটিক এবং পোষ্ট মাষ্টার গল্পের প্রকাশ পেয়েছে বাংলা মানুষের দুঃখ কষ্টের চিত্র। উপন্যাস ও প্রবন্ধাবলীতে সমসাময়িক জীবন ও সমস্যা প্রতিফলিত হয়েছে। আর তার গানে মধ্যের রয়েছে পরম এক আধ্যাত্মিকতা যা ¯্রষ্টাকে পূজা করতে ও ভালেবাসতে শেখায় পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ-বেদনাকে অতিক্রম করে এক সীমাহীন আনন্দলোকে প্রবেশ করা আকাঙ্খা প্রকাশিত হয়েছে তার সোনার তরী কবিতায়। ইহ জগতের কর্মফল ও পরজগতের কথা ইঙ্গিত করে গেছেন। সেখানে বলেছে ¯্রষ্টার নৌকাতে মানুষে মহৎ কর্মের স্থান পায়, মানুষ নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কবিতা হচ্ছে তার “শেষ লেখা কবিতাটি” তিনি ৩০ জুলাই ১৯৪১ সালে সকাল সাড়ে নয়টায় কবিতাটি মুকে মুখে বলেন এবং ইন্দিরাদেবী তা লিখে নেন (প্রমথ চৌধুরীর ভাতিজি)। আদর্শ ও মানবতা বাদী এই মহা পুরুষ মানব কল্যাণেও সুন্দরের অণে¦ষণ করে আজীবন সাধনা করে গেছেন ।
সাহিত্য র্কম:
কাব্যগ্রন্থ: ৫৬ টি। তাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি হচ্ছে কড়ি ও কোমল (১৮৮৬), মানসী (১৮৯০), সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০), গীতাঞ্জলি (১৯১০), ক্ষনিকা (১৯০০), বলাকা (১৯১৫), পূরবী (১৯২৫), পুনশ্চ (১৯৩২), পত্রপুত (১৯৩৬), প্রান্তিক (১৯৩৮), সেঁজুতি (১৯৩৮), রোগশয্যায় (১৯৪১), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১), শেষ লেখা (১৯৪১)। ১৫ বছর বয়সে প্রথম কাব্য প্রকাশিত হয় বনফুল নামে। শ্রেষ্ঠ কাব্য সংকলন সঞ্চয়িতা। প্রথম প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ ‘কবি কাহিনী’।
উপন্যাস : ১২টি। সর্ববৃহৎ সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস হচ্ছে “গোরা” (১৯০৯)। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস গুলো হচ্ছে ‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’ (১৮৮২) এটি হচ্ছে তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। চোখের বালি (১৯০২), নৌকা ডুবি (১৯০৬), অসমাপ্ত ও প্রথম উপন্যাস করুণা। রাজর্ষি (১৯৮৫), নষ্টনীড় (১৯০১), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯৩০), দুইবোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪), চার অধ্যায় (১৯৩৪) ইত্যাদি উপন্যাস গুলো ছিল কবিতার মতো বৈচিত্র্যময়।
ছোট্ট গল্প: মূলত ১৮৩৯-৯৪ থেকে ১৯১৫-১৬ এ দীর্ঘ ২২ বছরের মধ্যেই তিনি ধারাবহিক ভাবে ছোট গল্প লিখেছেন এবং হিতবাদী, ভারতী, সাধনা ও নবপর্যায় বঙ্গদর্শনের পৃষ্টায় সেগুলো প্রকাশিত হত। তার বিরচিত গল্প–১-২ (১৮৯৪)। গল্প দশক (১৮৯৫), গল্প গুচ্ছ ১-৩ (১৮৯৭), কর্মফল (১৯০৩), আটটি গল্পঃ গল্প চারটি (১৯১২), গল্প সপ্তক (১৯১৫), পয়লা নম্বর (১৯২০)। রবীন্দ্রনাথের অন্যতম গল্প গ্রন্থ গল্প গুচ্ছ ও গল্প স্বল্প। প্রথম প্রকাশিত ছোট্ট গল্প ‘ভিখারিনী’। প্রথম গল্প সংগ্রহের নাম ছোট গল্প। মূলত ‘পয়েলা নম্বর’ গল্পের মাধ্যমেই তার গল্প লেখার সমাপ্তি।
নাটক: ২৯টি। মায়া লেখা (১৮৮৮), বিসর্জন (১৮৯১), গোড়ায় গলদ (১৮৯২), প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯), তাসেরদেশ (১৯৩৩), রাজা (১৯১০), অচলায়তন (১৯১১), ডাক ঘর (১৯১২), রক্তকবরি (১৯২৪), চন্দালিকা (১৯৩৩) ও চিত্রাঙ্গদা। শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়কে উৎস্বর্গকৃত নাটক ‘কালের যাত্রা’এবং কাজীনজরুল ইসলামকে উৎর্স্বগকৃত নাটক ‘বসন্ত’।
প্রবন্ধ সমূহ: আত্মশক্তি (১৯০৫), ভারতবর্ষ (১৯০৬), সাহিত্য (১৯০৭), বিচিত্র প্রবন্ধ (১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭), স্বদেশ (১৯০৮), প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭), লোক সাহিত্য (১৯০৭), সমাজ (১৯০৮), শিক্ষা (১৯০৮), শব্দতত্ত (১৯০৯), সংকলন (১৯২৫), সাহিত্যের কথা (১৯৩৬), কালান্তর (১৯৩৬) ,বাংলা পরিচয় (১৯৩৮) ও সভ্যতার সংকট (১৯৪১)।
সম্পাদিত পত্রিকা: সাধনা (১৮৯৪), ভারতী (১৮৯৮), বঙ্গদর্শন (১৯০১), ভান্ডার (১৯১৯) ও তত্ববোধনী (১৯১১)।
ভ্রমণ কাহিনী : ৯টি। মুরোপ্রবাসীর পত্র (১৮৮৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯১৯), পারস্য (১৯১৯) ও জাপানযাত্রী (১৯৩১)।
আত্ম জীবনী : জীবন স্মৃতি (১৯১২), ছেলে বেলা (১৯৪০) ও গল্প স্বল্প (১৯৪৯) ।
চিঠি পত্রে বই : ১৩টি ।
কাব্য নাট্য : ১৯টি।
জীবনী : চারিত্র পূজা (১৯০৭) বিশ্বভারতী উনত্রিশ খন্ডে রবীন্দ্রর রচনাবলি প্রকাশ করেছে ।
গানে সংখ্যা : ২২৩২টি ।
নিজের হাতে আকাঁ ছবির সংখ্যা ২৫০০টির বেশি ।
নোবেল পুরস্কার: ১৯১০ সালে গীতাঞ্জলী প্রকাশিত হয়। গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ১৫৭টি গান এবং কবিতা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ইংরেজি অনুবাদকৃত গীতাঞ্জলীর জন্য প্রসঙ্গ ভূমিকা লিখেছিলেন আইরিশ কবি ডাব্লিউ. বি ইয়েটস। প্রথম ইতালীয় ভাষায় গীতাঞ্জলী অনুবাদ করেন ফাদার মারিনো রিগন। গীতাঞ্জলী শব্দটি ইংরেজিতে তর্জমা করা হয়েছে ‘ঞযব ঝড়হমং ঙভভবৎরহমং’ হিসেবে অর্থাৎ শাব্দিক অর্থে দাঁড়ায় পূজার গীতি, অঞ্জলি বা নিবেদনের গান। প্রকৃত অর্থেও তাই। গীতাঞ্জলীর প্রতিটি শব্দ প্রতিটি বর্ণ এমন ভাবে সবিন্যস্ত যে, যা পাঠ করলে বা সুর দিলে বিধাতার চরণে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিবেদন করাই হয়, দেহ-মন-সত্তা উজাড় করে করে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়াই হয়।
জমিদারি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন জমিদারি শিখেছিলেন তখন তাদের জমিদারির প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসে ছিল। পিতার আদেশ রবীন্দ্রনাথকে কলকাতায় সেরেস্তায় বসে জমিদারি শিখতে হলো। কেরানি থেকে নায়েবের কাজ পর্যন্ত তিনি শেখেছিলেন। শিক্ষা শেষে তিনি পূর্ববঙ্গে পাড়ি দিলেন। এখানে তিনটি স্থানে রবীন্দ্রনাথ জমিদারি করেন। নদীয়া জেলার বিরহামপুর যার কাছারি শিলাইদহ (বর্তমান কুষ্টিয়া), পাবনা জেলার শাহজাদপুর আর রাজশাহী যার কাছারি পতিসর নওগাঁ জেলার আত্রাই থানায় অবস্থিত। কবি নদী পথেই পতিসরে আসতেন। কবি পতিসরে প্রথম আসেন ১৯১১ সালে পতিসর ও শিলাইদহে তার বেশ কিছু রচনা হল: খেয়া, চৈতালী, চিত্রা, আকাশ-প্রদীপ, বিদায়, অভিমান, গোরা, ক্ষনিকা ইত্যাদি। শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে থাকাকালে কবি লালন সংঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন। তিনি ২৯৮টি লালন গান সংগ্রহ করেছিলেন। তার মধ্যে ২০টি গান “প্রবাসী” পত্রিকা প্রকাশ করেন। এর পর থেকেই শিক্ষিত সমাজে লালনের প্রচার প্রসার ঘটে। কবি পতিরসর থেকে ১৯৩৭ সালে চলে যান। তিনি চলে যাবার সময় প্রজাদের মধ্যে সব সম্পদ দান করে দেন ।
শান্তি নিকেতন: ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের বাস তুলে নিয়ে চলে যান শান্তি নিকেতনে। ১৮৯২ সালে দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে একটি মন্দির স্থাপন করেন তখন থেকে প্রবর্তিত হয় ৭ পৌষের মেলা উৎসব। ১৯০১ সালে ডিসেম্বর মাসে (১৩০৮ সনে ৭ পৌষ) মহর্ষির অনুমতি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ শান্তি নিকেতনে একটি স্কুল স্থাপন করে। সে কালে এই স্কুলের নাম ছিল ব্রহ্মর্চযা শ্রম পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের আরও পরে রুপান্তরিত হয় “বিশ্ব ভারতীতে”। রবীন্দ্রনাথের জীবনের এক শ্রেষ্ঠ সম্পদ শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়। মাত্র পাঁচ জন ছাত্র নিয়ে এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। রথীন্দ্রনাথ ছিলেন এই বিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্র। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের পুত্র। মৃণালিনী দেবী এর দেখাশোনা করতেন। শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের জীবন যাত্রা ছিল প্রাচীন ভারতীয় তপোবনের আদর্শে পরিচালিত। গুরু-শিষ্যের নিবির সহচর্যে সরল অনাড়ম্বর জীবন। এই ব্রহ্মচর্যাশ্রম পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথের প্রধান সহায়ক ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় ছিলেন একজন কাথলিক বৈদান্তিক সন্নাসী। “ব্রহ্মবান্ধী” সর্ব প্রথম রবীন্দ্রনাথকে ‘বিশ্ব কবি’ অভিধা দিয়েছিলেন। শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠিত হয় স্বদেশী যুগের সূচনায় এবং বিশ্ব ভারতীতে পরিণত হয় প্রথম মহা যুদ্ধের শেষে বিশ্ব মৈত্রীর সংকল্প নিয়ে।
নাইট উপাধি ত্যাগ : ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড হল। রবীন্দ্রনাথ নাইট উপাধি ত্যাগ করলেন। এই বছরে ১৩ এপ্রিল সংগঠিত হয় ইতিহাসে জঘন্নতম জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যা কান্ড। এদিন অমৃতসরের চার দিকে পাকা প্রাচীরের ভেতরে চলছিল বৃটিশদের বিরুদ্ধে সভা বের হওয়া একটা পথ। হঠাৎ বৃটিশ সামরিক অফিসার জেনারেল ডায়ারের নেতৃতের একদল সৈন্য বেপরোয়া গুলি বর্ষণ করে। ১৬০০ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করা পর গুলি শেষ হয়ে যায়। এই হত্যা কান্ড এমনই জঘন্নতম ছিল যে কতজন মারা গিয়েছিল তার চেয়ে দেখা ছিল কত জন বেঁচেছিল। এই জঘন্নতম হত্যা কান্ডের প্রতিবাদে কবি গুরু ইংরেজদের দেয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করেন ।
রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। তার যত বয়স বাড়ছিল তার হাতের লেখা ততই সুন্দর হয়েছে। যারা রবীন্দ্রনাথকে কাছে থেকে র্দীঘ কাল দেখেছেন তার বলেন গুরুদেব যত বৃদ্ধ হয়েছে তার সৌন্দর্য ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। গুরুদেবকে প্রশ্ন করলে বলতেন আমার হাতের লেখাটা যেন আমার বড়গিন্নি, আটপৌরে। সে সব সময় সকলে কাছে বের হয়। কোন দ্বিধা সংকোচ নেই। ছবি হল আমার ছোট গিন্নি। তাকে এতটু তোয়াজ করলে সে ভোলে। কিন্তু আমার মেজ গিন্নি গান, সে যখন আমার কাছে আসে তখন কাউকে সে সইতে পারে না। বড় অভিমানী কেউ এমকি অমনি সে যে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল কত সাধ্য-সাধনা করে তবে আবার ফিরিয়ে আনতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক আর. সি. মজুমদারের আমন্ত্রনে কবি ঢাকায় এসছিলেন। জগন্নাথ হলের প্রভোষ্ট রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মেয়েকে একটি কবিতা লিখে দিয়ে ছিলেন, তা জানতে পারলে জগন্নাথ হলের ছেলেরা বললেন কবি গুরুকে আমাদের জগন্নাথ হল থেকে “বাসন্তিকা” নামে পএিকা বের করে থাকি, আপনি যদি একটি কবিতা লিখে দেন। কবি ছাত্রদের অনুরোধ ফেলতে পারেননি। সেই কবিতটি ছিল এই “এই কথাটি মনে রেখ, তোমাদের এই হাসি খেলায়, আমি তো গান গেয়ে ছিলাম, র্জীণ পাতা ঝরার বেলায়” পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেশ কয়েক জায়গায় কবি গুরুকে পুষ্পবৃষ্টির মাধ্যমে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক চিন্তাধারা: রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হননি তবে সম-সাময়িক ঘটনা প্রবাহ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্নও রাখেনি নিজেকে। ১৮৯৬ সালে কলকাতার যে কংগ্রেস সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, ‘বন্দে মাতরম’ গান গেয়ে রবীন্দ্রনাথ তার উদ্বোধন করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গঁ ভঙ্গঁ আন্দোলনের সময় রবীন্দ্রনাথ বঙ্গঁ ভঙ্গেঁর তীব্র বিরোধিতা করেন। বঙ্গঁ দর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে কবি তার মনোভাব ব্যক্তকরেন এবং রাখিবন্ধনের দিনটিকে স্মরণ করে রচনা করেন একটি গান:
বাংলার মাটি, বাংলার জল,
বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুণ্য হউক
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান।
সমাজ সেবা: সমাজ সেবার সবচেয়ে বড় প্রমাণ দেন কবি গুরু মহর্ষির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শান্তিনিকেতনে স্কুল খোলেন, পরবর্তীতে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে এবং আরও পরে বিশ্বভারতীতে রূপান্তরিত হয়।
দার্শনিকতা : গীতাঞ্জলী ইংরেজিতে প্রকাশ পাবার পর থেকেই পাশ্চাত্যে রবীন্দ্রনাথের খ্যাতির পথ প্রশস্ত হয়। আমেরিকার আরবানায় কবি বক্তব্য দিয়েছিলেন একজন দার্শনিক ও মনিষী হিসেবে। তা সংকলিত হয় সাঢহানা (১৯১৩) গ্রন্থে। বাঙ্গালী দর্শনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন মানবতাবাদী দার্শনিক কবি হিসেবেও পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারায় দার্শনিকতার প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। তিনি শারীরিক অসুস্থতার চাপে দার্শনিক যুক্তি বিচারের পথ পরিহার করেনি। রবীন্দ্রনাথের মতে প্রকৃত ধর্ম আচারসর্বস্মময় মোহ্মমাধবা কিংবা পরলোকচর্চারএর মূল লক্ষ্য ও উপজীব্যহতে পারে না। তিনি বলেন ধর্ম মানে দেহ, মন ,বুদ্ধি ও ইচ্ছার সামগ্রিক কর্ষণ তথা সমগ্র জীবন চর্চা ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণ সাধন। রবীন্দ্রনাথের দার্শনিক চিন্তা-ধারায় মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্ক আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন অসীম ঈশ্বর ও সসীম মানুষ উভয়ে পারস্পারিক সমন্ধে আবদ্ধ, একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ঈশ্বর অসীম কিন্তু তাই বলে সসীম অবাস্তব ও শক্তি হীন নয়। অসীম ঈশ্বর সসীম জীবনের মাধ্যমেই কাজ করে। কিন্তু তবু এদের ইচ্ছার ও কর্মানুষ্ঠানের স্বাধীনতা রয়েছে। তাদের বাস্তবতা ঈশ্বরে সম্পূর্ণ লীন হয়ে যায় না। জীবনের কল্যাণের প্রেরণা আসে প্রেম থেকে।
যে নদীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে” সেই নদীর নাম নাগর। রবীন্দ্রনাথ ঢাকার বলধা গার্ডেনে বসে রচনা করেছলেন ‘ক্যামেলিয়া’ শিরোনামের কবিতা। প্রথম জীবনের সর্বপেক্ষা উল্লেখ যোগ্য কবিতা “নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গঁ”। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পিদের উৎসাহে ১৯২৬ সালে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসের “পিগাল মার্ট” গ্যালারিতে। তিনি নিজের আঁকা ছবি গুলোকে বলেছেন “শেষ বিকেলের প্রিয়া”। রবীন্দ্রনাথ ‘পূরবী’ কাব্য গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন আর্জেন্টিনার মহিলা কবি ভিক্টেরিয়া ওকামেপাকে।
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না বা অপেক্ষা করেনা। ঠিক সময় ও নদীর ¯্রােত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। হয়তো ভালো-মন্দ, উচু-নিচু, পাহাড়-সমতল, ভাঙ্গা-গড়া নিয়েই মানব জীবন। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য, জমিদারি, পরিবারের দায়িত্ব-কর্তব্য, বিদেশ ভ্রমণ ইত্যাদি নিয়ে ছিল জীবন এক মহা ব্যস্তময় সময়। শিশু থেকে কৈশর, কৈশর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে আসতে আসতে পৌঁচেছেন বার্ধক্যে। আর এই বার্ধক্যে এসে রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ করেছেন ‘সভ্যতার সংকট’। আর এই সভ্যতার সংকট ছিল তার ৮০তম জন্মদিনের ভাষণ। তিনি সেটা প্রস্তুত করে রেখেছিলেন ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কবি কালিস্পঙে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তার জন্ম দিনে ভাষণ দিতে পারেননি, অন্য ব্যক্তি দ্বারা ভাষণ পাঠ করানো হয়েছিল। তখন থেকেই কবি গুরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। ১৯৪১ সালে ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮) জোঁড়াসাকোর বাড়ীতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্ত জীবন, চিরজীবী, মানবান্তা ও প্রকৃতির চিরন্তর সৌন্দর্যের কবি। মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন মহা জীবনের যতি হিসেবে। জীবন-মৃত্যু ও জগৎ সংসার তাঁর নিকট প্রতিভাত হয় এক অখন্ড রুপে। তাই তার গানে জীবন লীলার সুর বাজে এভাবে:
আছে দুঃখ, আছে মৃৃত্যু বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবুও আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।
সহায়ক গ্রন্থ সমূহ:
১। বাংলা পিডিয়া
২। পাল প্রশান্ত কুমার রবি জীবনী-১ম খন্ড, কলকাতা, ২০০৪
৩। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স (মে ২০১৪)
৪। কালের কন্ঠ
৫। জনকন্ঠ
৬। ডেইলি স্টার
আরো পড়ুন:
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ
বান্দরবানে আদিবাসীদের জন্য জাপানী ভাষার উপর চতুর্থ প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন