শিরোনাম :
আলীকদমে নির্মাণাধীন গির্জা ভেঙ্গে দিলো লামা বন বিভাগ
ডিসিনিউজ ॥ ঢাকা
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পাড়াবাসীর অর্থায়নে নির্মানাধীন একটি গির্জা ভেঙ্গে দিলো লামা বন বিভাগ। ২৫ ফেব্রুয়ারি লামা বনবিভাগ থেকে পাঠানো বন টিমের স্পেশাল টহল বাহিনীর প্রধান (ওসি) মোঃ আতিকুল ইসলাম ও মাতামূহুরী সংরক্ষিত বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোঃ মিনার চৌধুরীর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার কারবারী ও পাড়া বাসী। সাথী রাম ত্রিপুরা পাড়ার মাইকেল ত্রিপুরা বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টার সময় লামা বন বিভাগের মাতামূহুরী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জহির উদ্দিন মোঃ মিনার চৌধুরী ও লামা বনবিভাগ থেকে আগত বনটিমের বিশেষ টহল বাহিনীর প্রধান ওসি মোঃ আতিকুল ইসলামসহ আরো ৮ থেকে ১০ জন লোক এসে আমাদের কিছু না জানিয়ে পাড়াবাসির একমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নতুন করে নির্মিত গির্জাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় পাড়ার লোকজন পাহাড়ে জুম ক্ষেতে কাজ করছিল। পাড়ায় যখন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকজন ছিলো না তখন বন বিভাগের লোকজন এসে আমাদের গির্জাটি ভেঙ্গে দিয়েছে। আমরা ঘটনাটির বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সায়েদ ইকবাল , উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা ও জেলা পরিষদ সদস্য ধুংরিমং মার্মাকে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দিয়েছি।
পাড়া কারবারী সাথীরাম ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যামনি ত্রিপুরা পাড়া ও সাথী রাম ত্রিপুরা পাড়ার লোকজনের একমাত্র গির্জা হলো এটি। দুই পাড়ার লোকজন গির্জায় এসে প্রার্থনা করে। আগের বাঁশের বেড়ার ছিলো গির্জাটি। সে কারণে আমরা দুইপাড়ার লোকজন দীর্ঘ ১৫বছর অর্থ সঞ্চয় করে পাড়া থেকে দশহাত দূরে এ গির্জাটি তৈরী করছিলাম। শুক্রবার এ ঘটনায় সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মংব্রাচিং মার্মা, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য ধুংরি মার্মা, উপজেরা আওয়ামীলী সহসভাপতি সমর বড়ুয়া, আলীকদম ত্রিপুরা কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ ত্রিপুরা ও দূর্জয় ত্রিপুরা।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য ধুংরি মং মার্মা জানান, আলীকদমের কুকপাতা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার নির্মানাধিন একটি গীর্জা গতকাল লামা বনবিভাগের লোকজন এসে ভেঙ্গে দিয়েছে। তাদের সাথে ছিলেন, মাতামূহারী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা। বিষয়টি খুবই দুঃখ্যজনক। পাড়াটি অনেক পুরনো। তারা নির্মাধীন গির্জা ভেঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আলীকদম ত্রিপুরা কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিলিপ ত্রিপুরা জানান, গির্জা ভেঙ্গে বনবিভাগ আমাদের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আমরা এ গর্হিত ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবী করছি। বিষয়টি নিয়ে কুকপাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বনবিভাগের নেতৃত্বে গির্জা ভাঙ্গা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি। তারা অন্যায় করেছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে লামা বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার জানান, আমরা কোন গির্জা ভাঙ্গিনি। আমরা সংরক্ষিত বনে অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গেছি মাত্র। মাতামূহুরী রিজার্ভে কোন স্থাপনা তৈরী করতে বন বিভাগের অনুমতি লাগে। তারা কোন আমার কাছ থেকে কোন অনুমতি নেয়নি। তিনি এ সময় আরো জানান, তিন চারটি ত্রিপুরা ঘর নিয়ে গির্জা তৈরী করার কোন প্রয়োজন নেই। ঐখানে কোন গির্জা নেই আছে শুধু সন্ত্রাসী।
তিনি আরো বলেন, কয়েকজন লোকের গির্জা করার প্রয়োজন নাই এটা খুবই আপত্তিকর কথা যা কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারছি না। দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্য না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে এ গির্জা ভাঙ্গার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও। তিনি ডিসিনিউজকে বলেন, ‘আলী কদমের ওই সাথীরাম ত্রিপুরা পাড়ার গির্জা যারা ভেঙ্গেছেন তাদেও নিন্দা জানাই ও এই ঘটনা তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এমন ঘটনা কোনো পক্ষই যেন না ঘটায়। ছোট বড় যে গির্জাই হোকÑ গির্জা ভাঙ্গার অধিকার কারো নাই।”