শিরোনাম :
ঈশ্বরের স্তুতিগানে জেগে ওঠে আবিমা
আনন্দ উৎসবে আবিমা কাননে বেজে উঠেছে খুশির দোল, প্রকাশিত হয়েছে ঈশ্বরের মহিমা ও স্তুতি। ছবি: সংগৃহীত
প্রকৃতি, বন সব সময়ই মানুষকে কাছে টানে। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিক কর্মব্যস্ত জীবনে একটু প্রশান্তির জন্য প্রকৃতির সানিধ্য অবসাদ দূর করে। টাঙ্গাইলের মধুপুর মানেই অন্যরকম এক অনুভূতি, ভাললাগা। ছায়াকানন, সবুজ বনানী, অপরূপ চারপাশ! প্রকৃতি কত সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে এখানকার জনপদ। পরম মমতা ও যত্নে প্রকৃতি ও বনকে আগলে রেখেছে স্থানীয় আদিবাসীরা।
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা হয়ে মধুপুর বনের ভেতর দিয়ে যেতে হয় পীরগাছায়। যেতে যেতে অন্যরকম ভাললাগা কাজ করবে। আদিবাসী দোকান, মানুষ, স্কুল, কলেজ ও অফিসগামী মানুষজন এবং খেতে খাওয়া সাধারণ মানুষের আনাগোনা ও পদচারণায় সব সময় সরব হয়ে ওঠে এখানকার জনপদ। প্রকৃতি ও বনের কোলে উৎসব হচ্ছে, ঘরে ঘরে খুশির বন্যা বইছে। সবার উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু পীরগাছা সাধু পৌলের ধর্মপল্লীর সবুজ গালিচা। পীরগাছা ধর্মপল্লীর দু’জন কৃতি সন্তান দীর্ঘ সাধনার পর যাজকপদে উন্নীত হয়েছেন।
৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, সকালে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের হলিক্রস সংঘের বিশপ পনেন পল কুবি তাদের যাজকপদে উন্নীত করেছেন। একজন পীরগাছা গ্রামের রসিল নকরেক ও প্রমিলা সিমসাং এর প্রথম সন্তান সবুজ শামূয়েল সিমসাং এবং অন্যজন বেদুরিয়া গ্রামের সতেন্দ্র চিরান ও প্রমনী নকরেক এর অষ্টম সন্তান নিটারসন নিকোলাস নকরেক। বাংলাদেশে ‘আবিমা’ খ্যাত মধুপুর জুড়ে তাই খুশির অন্ত ছিলনা।
সবুজ শামূয়েল সিমসাং ওএমআই (অবলেট সংঘ) এবং নিটারসন নিকোলাস নকরেক সিএসসি (হলিক্রস সংঘ) যাজক হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের খ্রিষ্টমন্ডলীতে আরো দুই নতুন পালক যুক্ত হলো। রচিত হলো ইতিহাস, সৃষ্টি হলো আরেকটি নতুন মাইলফলক।
কারণ একই দিন, একই ধর্মপল্লীর দু’জন যাজকপদে উন্নীত হওয়ার ঘটনা ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ তো বটেই দেশের খ্রিষ্টমন্ডলীর ইতিহাসেও বিরল। একই দিন পীরগাছা সাধু পৌলের ধর্মপল্লীর ২৫ বছর রজত জয়ন্তী উৎসবও উদযাপন করা হয়েছে। উৎসবে যোগ দিতে আগের দিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা পীরগাছা মিশনসহ এর আশপাশের গ্রামে অবস্থান করতে থাকেন। অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনের এমপি জুয়েল আরেংসহ অর্ধশতাধিক ফাদার, সিস্টার, ব্রাদার ও সাধারণ জনগন উপস্থিত ছিলেন। হাজারো প্রাণের উচ্ছাসে মুখরিত হয়ে ওঠে মধুপুর বন, ঈশ্বরের স্তুতিগানে জেগে ওঠে আবিমা। পীরগাছা ও এর আশপাশের মানুষদেরকে নিকট অতীতে আর এতবড় আনন্দ উৎসব করতে দেখা যায়নি।
বিগত কয়েক বছর ময়মনসিংহ র্ধমপ্রদশেরে জন্য খুবই খুশি ও গর্বের বছর হয়ে উঠেছে। এই সময় ধারাবাহিক ভাবে বেশ ক’জন ভ্রাতা যাজকপদে উন্নীত হয়েছেন। এবছরও বেশ ক’জন সন্যাসব্রত গ্রহণ করার জন্যে ডিকন পদে উন্নীত হতে চলেছেন। বাংলাদেশের খ্রিষ্টমন্ডলীর জন্যে এ এক বিরাট প্রাপ্তি আর আনন্দের সংবাদ।
আরবি/এসএস/আরপি/ ৬ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১৭