শিরোনাম :
উদ্যোক্তা হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লিজা রোজারিও, পাশে ছিল ঢাকা ক্রেডিট
ডিসিনিউজ ।। ঢাকা
বান্দুরায় সেবাকেন্দ্রটি যখন উদ্বোধন হয় সেই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। আমি তখনই ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যপদ গ্রহণ করি। যদিও কোনো দিন লোন নেইনি কিন্তু করোনা ভাইরাস-এর কারণে আমি মহাবিপদে পড়ি কারণ আমার স্বামী বিদেশ থাকে এই পরিস্থিতির জন্য কোনো টাকা পয়সা পাঠাতে পরে নাই। তাই আমি ঢাকা ক্রেডিটের স্মরণাপন্ন হই এবং ঢাকা ক্রেডিট আমাকে এতো আন্তরিকতার সাথে লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না, আমি ঢাকা ক্রেডিটের কাছে কৃতজ্ঞ।
শুধু তাই নয় করোনা মহামাররির সময় ঢাকা ক্রেডিটের ভর্তুকী পণ্য আমি নিয়েছি এবং অনেক উপকৃত হয়েছি। এই পণ্য নিয়ে আমি অনেক দিন নিশ্চিন্তে চলতে পেরেছি।
২০২০ সালে ঢাকা ক্রেডিট হতে আমি প্রথম লোন নিয়েছি ৭৫ হাজার টাকা। এই ৭৫ হাজার টাকা হতে ৫৫ হাজার টাকার কেনাকাটা করেছি এবং ২০ হাজার টাকার মতো আমার হাতে ছিল। এই ২০ হাজার টাকা আমি দুই তিন মাস হাতে রেখেছি কারণ প্রথম ব্যবসায়, যদি পণ্যগুলো বিক্রি করতে না পারি তা হলে ক্রেডিটের কিস্তি তো দিতে হবে। কিন্তু ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমার ক্রয়কৃত পণ্যগুলো বিক্রয় করার জন্য তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি। কারণ আমি সীমিত লাভে পণ্য বিক্রয় করি। মাত্র ৫০ টাকা লাভে পণ্য বিক্রয় করে থাকি এবং কাপড়ের মান ভালো থাকায় ও কম মূল্যে পণ্য পাওয়ায় মানুষের কাছে আমার পণ্যের চাহিদা এবং বিক্রি ভালোই চলতে লাগলো। এভাবেই ব্যবসার ভালো অবস্থায় তিন মাস চলার পর আমি ঢাকা ক্রেডিট হতে আবার ১৫০ লক্ষ টাকা লোন নেই এবং আরও পণ্য কিনে ব্যবসার আকার বড় করি। এতে বিক্রির পরিধি বৃদ্ধি পেতে লাগলো এবং ব্যবসাও বড় হতে থাকল।
আমার ব্যবসার নাম লিজা গার্মেন্টস। শাড়ি, থ্রিপিস, প্লাজু, মেয়েদের স্কার্ট, গেঞ্জি বলতে গেলে মেয়েদের যাবতীয়সব কিছু আমার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমি বিক্রয় করে থাকি।
ওই সময় ঢাকা ক্রেডিট যদি এই ঋণের টাকাটা না দিতো, হয়তো আমি আমার ব্যবসাটা শুরু করতে পারতাম না বা এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পারতাম না। এখন আমার ব্যবসায় ৭ লক্ষ টাকার পণ্য আছে। শুধু তাই নয়, আমার এ ব্যবসার আয় দিয়ে আমি আমার সংসার পরিচালনা করছি।
আমার স্বামী করোনা ভাইরাসের জন্য তেমন টাকা পাঠাতে পারে না। এই ব্যবসা দিয়ে আমি অনেক দূর যেতে চাই, যাচ্ছি ঈশ্বরের আশীর্বাদে।
আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সীমিত লাভ, সৎ নীতির মাধ্যমে পরিচালিত করছি। আমায় দেখে যেন নতুনরা উদ্যোক্তা হয়ে নিজে কিছু করতে পারার সাহস পায় এবং নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে সেই কামনা করি।
আমার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিন দিন উন্নতির জন্য আমার ছেলে সব রকম সাহায্য করে থাকে। কাপড় আনা নেওয়া, দোকানে যোগাযোগ, কাষ্টমারদের সাথে কথাবলা ও বিক্রয় ইত্যাদি সকল কাজে সাহায্য করে থাকে আমার ছেলে পিটার ববি রোজারিও।
এই ব্যবসা করতে গিয়ে আমাকে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে হয়েছে। প্রথমতো আমি নারী, তারপর আমি এক জন বৌ। পারিবারিক দিক থেকেও বাধার সম্মুখিন হয়েছি। আর আশে-পাশে ও পাড়া প্রতিবেশীর দিক থেকেতো কথাই নাই। ‘দেখুমনে কি করে’ ব্যঙ্গ করে বলতো আশেপাশের মানুষ। কিন্তু আমার মনোবল ও দৃঢ় প্রত্যয়ই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড়াতে ও দিন দিন উন্নতির পথে এগুতে সাহায্য করছে।
দেখা যায় কোনো দিন ১০ হাজার টাকা বিক্রয় হলো আবার কোনো দিন ২ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হলো। এমনও দিন যায় ২০ হাজার টাকার পণ্যও বিক্রয় হয়। গড়ে প্রতিমাসে আমার এ ব্যবসা হতে আয় হয় ১৫-১৬ হাজার টাকা।
এ ব্যবসাটি আমি অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এটাই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এখনতো আমি বাড়িতেই আমার ব্যবসাটা পরিচালনা করছি, ভবিষ্যৎ-এ আমার একটি পাইকারী শো-রুম থাকবে বান্দুরা বাজারে।
যারা বেকার নারী ঘরে বসে আছেন এবং যাদের ইচ্ছা আছে কিছু করার, তারা আমার মতো ঢাকা ক্রেডিট হতে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে সাবলম্বী হতে ও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন। ঢাকা ক্রেডিট বিশেষভাবে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঋণ ও ব্যবসার পরবর্তী পরিচর্যা করে থাকে বিধায় ব্যবসায় সাফল্য আসে ও সচ্ছল জীবনযাপনে সাহায্য করে। আমার এই সাফল্য দেখে নারীরা যেন উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে এবং বেকার বসে না থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করে, সংসার তথা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখুক এ প্রত্যশা আমার।