ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার এই গৌরব সমগ্র বাংলাদেশের

এই গৌরব সমগ্র বাংলাদেশের

0
379

এ অর্জন শুধু মন্ডলীর নয়, এই অর্জন পুরো বাংলাদেশের! বাংলাদেশের গর্বের নতুন ধারায় যুক্ত হয়েছে পূণ্য নাম। নতুনত্ব বাংলাদেশ মন্ডলীর সাথে সবসময় ভাল কিছু বয়ে এনেছে। এবার বাংলাদেশ মন্ডলীতে আরো একটি মাত্রা যোগ হলো। হঠাৎ করেই আনন্দের বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে গেল। বাংলাদেশ মন্ডলীতে প্রথমবারের মতো পেল কার্ডিনাল। ৯ অক্টোবর (২০১৬) পোপ এগারোটি দেশের মোট ১৭জন নতুন কার্ডিনালের নাম ঘোষণা করেন। তার মধ্যে বাংলাদেশও ধন্য হলো এই ঘোষণায়। ঢাকার আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’রোজারিও কার্ডিনাল হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন। নবঘোষিত কার্ডিনালের ডিসিনিউজের নিউজ চীফ রবীন ভাবুকের সাথে আলাপকালে উঠে আসে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ মন্ডলীর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়।

আপনাকে নতুন কার্ডিনাল ঘোষণায় আপনার অনুভূতি কেমন?

কার্ডিনাল প্যাট্রিক : নতুন পাওয়া হিসেবে আমিও আনন্দিত মন্ডলীর সাথে। এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। আমি একজন মন্ডলীর পালক, আমি জনমানুষের সাথে সম্পর্কিত। তাই যে অর্জন হয়েছে, তা পুরো মন্ডলীর জন্য। পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশকে ভালবেসে আমাদের এই উপহার দিয়েছেন। এই উপহার বিশ্বাসের একটা স্বীকৃতি। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ মন্ডলী বাণী প্রচারের সাক্ষ্য বহন করছে, এটা সেই বিশ্বাসের ভালবাসাপূর্ণ আশির্বাদ। আরেকটা বিষয় হলো, এই ক্ষুদ্র মন্ডলী যা করছে তা যেন নিজস্ব মন্ডলীতে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বমন্ডলীতে প্রকাশ পায়। এছাড়াও বাংলাদেশের যাকিছু ভাল রয়েছে তা যেন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এটা একটি উদ্দেশ্য এই মনোনয়নের। বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও এখানে অনেক অর্জন রয়েছে, তা রাষ্ট্র হিসেবে, জাতীয় হিসেবে, ধর্মীয় সাক্ষ্যবাহন হিসেবে এবং এই মনোনয়নের মাধ্যমে তা সারা বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে যাবে। নতুন দায়িত্বের মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে কিছু নিয়ে আসা এবং এখান থেকে সেখা কিছু ছড়িয়ে দেওয়া।

বাংলাদেশের জনগণ মনে করছে এটা একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

কার্ডিনাল প্যাট্রিক : নতুন দিগন্ত বলতে যেমন বাংলাদেশের সকল ভালকিছু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া, তেমনি একটা অধিকারও দেওয়া হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যদি পোপের নির্বাবচন হয় সেখানেও যেন অংশগ্রহণ করতে পারে। আরেকটা বিষয় হলো, রাষ্ট্রের সাথে চার্চের সম্পর্ক আরো গভীর এবং সম্প্রসারিত হবে। এই দায়িত্বগুলোই কার্ডিনালের থাকে।

03

জনসাধারণ মনে করছে, বর্তমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে আপনার মনোনয়ন একটি কার্যকরী ভূমিকা রাখবে, এই বিষয়ে আপনি কি মনে করেন?

কার্ডিনাল প্যাট্রিক : অবশ্যই এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ মন্ডলী শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, সংলাপ, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে যে অবদান রেখেছে তার একটি স্বীকৃতি এই মনোনয়নের মাধ্যমে আসছে। আমাদের এই সকল কার্যক্রম, শিক্ষা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস যেন জনগণের মধ্যে বিস্তার করতে পারি তারও একটি ভূমিকা এই মনোনয়ন। আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির একটি দিকদর্শন এই মনোনয়ের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশে চার্চের সম্পৃক্ততা এবং কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই সম্প্রসারিত ছিলো, এই নতুন দায়িত্ব আসাতে সম্প্রীতির দ্বার আরো বেশি প্রসারিত হবে বলে আমি মনে করি। যখন একটি দেশ বা মন্ডলী সম্মাননা পায়, তখন একদিকে আমাদের ন¤্রতার প্রকাশ পায় যে ‘আমরা অযোগ্য, ঈশ্বরের একটি আশির্বাদ পেয়েছি’। অন্যদিকে একটি আবেদন আসে যে, মন্ডলী যেন আরো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং খ্রিস্টীয় সাক্ষ্য আরো জোড়দার হয়। শুধু কেন্দ্র থেকে পাব তা নয়, বিশ্বের দরবারে আমাদের অনেককিছু দেওয়ার আছে। পরিবেশ পরিবর্তন, নারী নির্যাতন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে অবদান রাখছে।

কেন্দ্র থেকেও আমরা বিভিন্নভাবে সাড়া পাচ্ছি। যেমন পোপ মহোদয়কে যখন আসার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়েছি, আমি তখন তাঁকে ছয়টি কারণ লিখেছি এবং বলেছি এই কারণগুলো দেশ এবং মন্ডলীর জন্য মঙ্গলজনক।

পোপ মহোদয় এবং আপনার কার্ডিনাল হওয়ার কোন যোগসূত্র আপনি দেখেন কিনা? কীভাবে দেখছেন এই সম্পর্ককে?

কার্ডিনাল প্যাট্রিক : পোপ মহোদয় কবে আসবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। তিনি আগামী বছর আসার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই কার্ডিনালের দায়িত্বটা দেওয়া মনে হয় পোপ মহোদয় আসার একটি প্রস্তুতি একটি পদক্ষেপ। এটি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরো জোরদার করে গভীরে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রস্তুতি। পোপ মহোদয় আসার আনন্দ আর কার্ডিনাল মনোনয়ের ঘোষণার আনন্দ তো মন্ডলীর এবং দেশেরই আনন্দ। আমরা কেউই বিচ্ছিন্ন নই, পোপ মহোদয় আমাদের জনগণের সাথে একই সূত্রে গাঁথা। তাই একটির পর আরেকটি ঘোষণা, ঈশ্বরের পরম অনুগ্রহের প্রকাশ।

নবঘোষিত কার্ডিনাল হিসেবে আপনি সকলের জন্য কী বলবেন?

কার্ডিনাল প্যাট্রিক : নতুন কার্ডিনাল হিসেবে সেই ধারণা এখনো স্পস্ট হয়ে আসেনি। তবে একদিনের মধ্যে যে উপলদ্ধি হয়েছে, আমাদের যাকিছু আছে, তা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া এবং মন্ডলী যে দেশের স্বার্থে এবং দেশের সাথে একাত্ম সেই ধারণাটাও পৌঁছে দেবো। এই দুটো দায়িত্ব এখন অনেক বড় করে দেখছি। ঈশ্বরের অনুগ্রহ সবসময় বাংলাদেশ মন্ডলীর ওপর থাকবে এই প্রত্যাশা করি।

১ অক্টোবর, ১৯৪৩ সালে পাদ্রীশিবপুর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৮ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে তিনি যাজকীয় অভিষেক গ্রহণ করেন। ২১ মে, ১৯৯০ রাজশাহীর ধর্মপ্রদেশের বিশপ পদে মনোনয়ন পান এবং ১৩ সেপ্টেম্বর (১৯৯০) অধিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ সালে বিশপ প্যাট্রিক বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশপ হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। ২৫ নভেম্বর, ২০১০ সালে পূণ্যপিতা ষোড়শ বেনেডিক্ট কর্তৃক তিনি ঢাকার আর্চবিশপ হিসেবে ঘোষিত হন এবং ২৫ জানুয়ারি ২০১১ সালে তিনি আর্চবিশপের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৯ অক্টোবর, ২০১৬ পোপ কর্তৃক তিনি কার্ডিনাল হিসেবে ঘোষিত হন এবং আগামী ১৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্ডিনাল পদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

২০১১ সালে কার্ডিনাল প্যাট্রিক পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের কাছ থেকে কাথলিক যাজকদের সর্বোচ্চ সম্মাননা পলিউম সম্মানা লাভ করেন।

আরবি/আরএসআর- ১০ অক্টোবর, ২০১৬