ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা ফিচার একজন সদস্যের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

একজন সদস্যের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

0
707

আমার নাম জেমস ফ্রান্সিস কোড়াইয়া, বয়স ৫৭। আমিসহ আমার পরিবারে চারজন সদস্য। তবে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন তিনজন আছি। আমরা ঘরে-বাইরে দু-জন আর ছেলে। ছেলে ইন্টার দিবে। কোভিডের কারণে ওর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

আমার আদিবাড়ি পাবনার মথুরাপুর মিশনে। খরবাড়িয়া গ্রামে। সেখানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা। মথুরাপুর মিশন স্কুল সেন্ট রীটাস হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পড়ে বোর্ণী হোস্টেলে থেকে সেন্ট লুইসে মেট্রিক দেই।

তারপর দিনাজপুরে সুইহারী নভারা কারিগরি বিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল বিষয়ে তিন বছরের ডিপ্লমা করি। চলে আসি বাড়িতে। কিছুদিন পর ঢাকায় এসে ইলেকট্রিক্যাল কাজের ওপরই চাকরি ধরি – জার্মানি কম্পানিতে। কম্পানির নাম রেলওয়ে ব্যাকশপ।

চাকরি নিয়ে চলে গেলাম পার্বতীপুরে। সেটাও দিনাজপুরেই। মোট চার বছর চাকরি করি। প্রকল্প শেষে একমাস বাড়িতে কাটাই।
পরে ঢাকায় এসে বেলজিয়াম একটি কম্পানি জিকো ট্রেডিং সাবস্টেশনে চাকরি ধরি। এখানে দুই বছর চাকরি করি। প্রজেক্ট বন্ধ হওয়াতে তিনমাস বেকার থাকি, ওই সময় ঢাকাতে মেসে থাকতাম।

আমেরিকান এক মেডামের সাথে ঢাকার একটি গেস্ট হাউজে পরিচয় হয়। উনি নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের অর্থনীতি পড়াতেন। উনার মাধ্যমেই ওই ভার্সিটিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে আমার চাকরি হয়। পঁচিশ বছর চাকরি করি ওখানে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে অবসর। তখন কিছুটা হতাশায় পড়ি। অন্য জায়গায় চাকরি খুঁজতে থাকি।

উল্লেখ করার বিষয় এই যে, নর্থ-সাউথে চাকরি করার সময় বিয়ে করি। ১৯৯৩-এর মে মাসের ৩ তারিখে। স্ত্রী হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের নার্স। স্থায়ী চাকরি। এখনও চাকরিতে বহাল আছে।

প্রথম আমার মেয়ে হয়। ১৯৯৫-তে। মেয়ের হলিক্রস স্কুলে পড়ার যাতায়াতের সুবিধার জন্য মগবাজারের ভাড়া বাসা ছেড়ে ফার্মগেট আসি, ২০০৮-এ।

যাহোক, ২০১৮-তে নর্থ-সাউথ থেকে অবসর নিই। তারপর অন্যান্য অফিসে চাকরির চেষ্টা করি, কিন্তু বেতন নর্থ-সাউথ থেকে অর্ধেক। তখন চিন্তা করি গাড়ি চালনা শিখে নিজেই গাড়ি চালাব। আয় করব নিজেই। স্বাধীনভাবে কাজ করবো।

অনেক চিন্তা করে স্ত্রীর সাথে বুদ্ধিপরামর্শ করে নিকুঞ্জ-৩-এ ব্র্যাক সেন্টারে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিলাম, ৩৩ দিনের প্রশিক্ষণ। আগেই হুন্ডা চালাতে পারতাম বলে গাড়ি চালানোও সহজে শিখতে পারলাম। প্রশিক্ষণের সময়ই প্রাইম ব্যাংকের সেকেন্ডহ্যান্ড একটি গাড়ি কিনি। প্রাইভেট কার। নয় লক্ষ টাকা।

২০১৮ থেকেই আমি নিজের গাড়ি চালিয়ে নিজের পরিবারের ভরনপোষন করি। নিজে স্বাধীন মতো কাজ করি। আর আমার স্ত্রী তো নার্সিংয়েই আছে।

আমাদের এক মেয়ে এক ছেলে। ছেলে বানিজ্য শাখা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে। মেয়ে নর্থ-সাউথ থেকে ‘ল’ বিষয়ে অনার্স পড়ে ২০২০-এর প্রথম দিকেই বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে বিসিএস-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছেলে আঠারোগ্রামের। বিবিএ শেষ করে ইন্টার্নশীপ শেষ করছে। ইতিমধ্যে কোভিডের কারণে লকডাউন শুরু হয়।

মাঝে মাঝে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশের বাইরে বেড়াতে যাই। যেমন- থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। ভারতের ভিসা আছে, সুযোগ করে সেখানেও যাব। ভ্রমনে বিনোদন হয়, অভিজ্ঞতা হয়। বিনোদনেরও তো প্রয়োজন আছে। এতে পরিবারের সবারই দৃষ্টিশক্তি খোলে। মনের আনন্দেই যাই। সখ মেটাই। এতে পরিবারের সবাই তৃপ্তি পাই। মরে গেলে টাকা দিয়ে কী করব!

চাকরি চলাকালেই নিজের পৈতৃক ভিটাতে সুন্দর সেমিপাকা বাড়ি করেছি। বাড়িতে গেলে নিজের মতো করে থাকতে পারি। পরিশ্রম তো করি সবকিছুতে তৃপ্তি পাওয়ার জন্যই।

আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাই বিয়ের আগে ঢাকা ক্রেডিটের স্টুডেন্ট প্রোগ্রামে কাজ করেছে। এই প্রোগ্রাম ঢাকা ক্রেডিটের সুন্দর উদ্যোগ। ছাত্র-ছাত্রীদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ভাল উদ্যোগ।

আমারা বাড়ির চারজনই ঢাকা ক্রেডিটের সদস্য। ঢাকায় চাকরিকালেই আমি সদস্য হই। ইতিমধ্যে ৭-৮বার ঋণ নিয়েছি। নিজেদের বেতনের সাথে ঋণের টাকা মিলিয়ে-মিশিয়ে সব সুন্দর সুন্দর কাজগুলো করি। ভাওয়াল এলাকায় কিছু জমিও কিনেছি!

আমি যাদেরকে নিয়ে আমার গাড়িতে ট্রিপ দিই, তারা অধিকাংশই খ্রিষ্টান। আমার গাড়ি কোনোদিন দুর্ঘটনায় পড়েনি। নিজে সাবধান থাকি, সাবধানে গাড়ি চালাই। যে একবার আমার গাড়িতে চড়ে, সে দ্বিতীবারও চড়ে। পরে আস্তে আস্তে উনারা আমার গাড়ির স্থায়ী যাত্রী হয়ে যায়।

আমি সবার সাথে কথা ঠিক রাখি, সময়জ্ঞানও তীক্ষèভাবে মেনে চলি। তাতে যাত্রীরা খুশি হন। আমার যাত্রী পেতেও সমস্যা হয় না। তাই মাসের প্রায় ৩০ দিনই আমি ট্রিপ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমি ট্রিপ নিয়ে অন্যান্য জেলাতেও যাই। আমার মনোভাব আর নিরাপদ গাড়ি চালনার কারণে আশা করি আমার যাত্রি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হবে না, আয়েরও কমতি হবে না।

আমার অভিজ্ঞতা একটিই- সাহস আর উদ্যোগই একজন মানুষকে উদ্যোক্তা তৈরি করে। অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত অর্জনের লোভ আমার নেই। সৎভাবে যা কামাই করি, তা আপন হয়। সংসার ভালো চলে, অন্যান্য উন্নতিও করা যায়। মনে শান্তি নিয়ে নির্ভয়ে বাস করা যায়।

অনুলিখন : রাফায়েল পালমা