শিরোনাম :
কবরস্থানে বিশৃঙ্খলায় ফাদারের তীব্র নিন্দা ও তিরষ্কার
২৪ জুন, শনিবার বিকালে তেজগাঁও গির্জার ভিতরে অধ্যাপক গাব্রিয়েল মানিক গোমেজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের পর চার্চ চত্বরে তাঁর সমাধিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হুড়োহুড়ি করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘ (বিবিসিএস)-এর সহ-সভাপতি উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি। স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে বিষয়টির তীব্র তিরস্কার জানান নটর ডেম কলেজের ছাত্র পরিচালক ফাদার আন্তুনী সুশান্ত গমেজ সিএসসি।
কবরস্থানের পবিত্রতা ও গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করার দায়ে সুনির্দিষ্টভাবে সমাদ্দারকে ডেকে ফাদার গমেজ হেন অনভিপ্রেত ধাক্কাধাক্কির জন্য ভর্ৎসনা করেন।
ঢাকার তেজগাঁও চার্চে কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি কর্তৃক খ্রিষ্টযাগের পর অধ্যাপক গোমেজের কবরে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিসহ হাজারো মানুষ উপস্থিত থেকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে। দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট), বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন, দি মেট্রোপলিটন খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি:, পাদ্রিশিবপুর খ্রীষ্টান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, মাটিভঙ্গা খ্রীষ্টান যুব সংঘ, মাটিভাঙ্গা খ্রীষ্টান ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, নারকেলবাড়ী খ্রীষ্টিয়ান ক্রেডিট ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএ, নটর ডেম কলেজ, বর্ণালী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, সংঘ-সমিতি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি পর্যায় থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এ সময় কয়েকজনের অশালীন আচরণে কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন খ্রিষ্টভক্ত জানান, এই আচরণ শুধু অ-কাথলিক নয়, এটা অ-খ্রিষ্টান আচরণ। সত্যিকারের আধ্যাত্মিক মনোভাব নিয়ে কবরস্থানে আসলে কেউ কোনোদিন এমন ব্যবহার করতে পারে না। গন্ডগোলের অভিপ্রায়েই তারা এসেছিল। তাদের অতীত ইতিহাস তারই নিদর্শন।
পাদ্রিশিবপুর খ্রীষ্টান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি যোসেফ ডি রোজারিও তেজগাঁও চার্চের ভিতরে (খ্রিষ্টযাগের পর) স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বহু লোকসমাগমের মাঝে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণের এক পর্যায়ে হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। ফাদার আন্তুনী সুশান্ত গমেজ সুনির্দিষ্টভাবে যে কয়েকজনকে অপ্রত্যাশিত ও অশালীন আচরণের জন্য চিহ্নিত করেন, তাদের মধ্যে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে বাপ্পি সমদ্দারসহ ছিলেন আরো কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা-বিবাদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বাপ্পি সমদ্দার ও তার কিছু সমর্থক এমন আচরণের অবতারণা করেন। কিন্তু ফাদারের হস্তক্ষেপের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
যোসেফ ডি রোজারিও গির্জার বাইরের অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য ঢাকা ক্রেডিটের প্রাক্তন সেক্রেটারি ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়াকে দায়িত্ব দিলে তিনি সুশৃংখলভাবে তা পরিচালনা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করেন হেমন্ত কোড়াইয়া। তিনি বলেন, ‘এটা কতিপয় বিতর্কিত লোকের ইচ্ছাকৃত আচরণ। কোন্দল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই তারা এই আচরণ করেন।’ ফাদারের তিরস্কারের কথা উল্লেখ করে কোড়াইয়া বলেন, এটা ফাদার ঠিকই করেছেন।
বাপ্পি সমদ্দারের দলের একজন আব্রাহাম গোমেজ। আব্রাহাম গোমেজ-এর ফেসবুক আইডি থেকে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন-এর সভাপতি নির্মল রোজারিওকে সংশ্লিষ্ট বিশৃঙ্খলার হোতা হিসেবে উপস্থাপন করে এসোসিয়েশনের ইমেজ নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া। তিনি সত্য ঘটনা প্রকাশের নিমিত্তে কবরস্থানের উত্তেজনার সূত্রপাতের ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, খ্রিষ্টান সমাজে চক্রান্তকারীদের সবার চেনার প্রয়োজন আছে।
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন সন্ধ্যা ৭টায় মনিপুরীপাড়া নিজ বাসভবনে অধ্যাপক মানিক গোমেজ প্রাণত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পাকস্থলীর প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
সেক্রেটারিয়েট ডেক্স/২৮ জুন, ২০১৭