শিরোনাম :
কমলাপুর থেকে ফিরে সুমন কোড়াইয়া
দিনটি ছিলো ২০ নভেম্বর। এদিনে সাধু আন্তনীর পর্বদিন পালন করে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের খ্রিষ্টভক্তরা। পর্বীয় খ্রিষ্টযাগ শেষে সেদিন ছিলো বিশেষ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে কমলাপুর গ্রামে মায়েদর সমন্বয়ে গঠিত মা-দলের মায়ের ভূমিকা-বিষয়ক ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। এ ফ্যাশন শো’র অভিনয় হাজারো দর্শকের হৃদয় ছোঁয়ে যায়।
ফ্যাশন শো’র বিষয় ছিলো একজন মা গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠান, পড়ালেখা করান। মা প্রতিবন্ধী, মাদকাসক্ত সন্তানকেও দূরে ঠেলে দেন না। অথচ মাকে এক সময় সন্তানেরা অবহেলা করেন, এমনকি পাঠিয়ে দেন বৃদ্ধাশ্রমে। জীবন সায়াহ্নে মায়ের দুর্দশা তুলে ধরা হয় সাড়ে আট মিনিটের দৈর্ঘ্যরে এই মঞ্চ অভিনয়ে।
গাজীপুরের রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর মৃত প্রভাত গমেজ ও লিলি রেগোর সন্তান কমলাপুরের বৌ (রানা পালমার স্ত্রী) মা দলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালিকা প্রিয়াংকা গমেজ ডিসিনিউজকে মা দল গঠনের বিষয়ে বলেন, ‘আমি লক্ষ করলাম, আমাদের মায়েরা অনেক উৎসাহী। তারা নাচতে-গাইতে ও অভিনয় করতে চান। এই জন্য চিন্তা করলাম মায়েদর নিয়ে একটা দল করা যায় কিনা, যার মধ্য দিয়ে তাঁরা নিজেদের প্রতিভা বিকাশ করবেন।’
প্রিয়াংকা গমেজ ২০১৪ সনে প্রতিষ্ঠা করেন মা দলটি। এরপর থেকেই ধরেন্ডা ধর্মপল্লীতে যেকোনো সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা বা অনুষ্ঠান, স্থানীয় তরুণ সংঘের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় মা দল অংশ নিতে থাকে। তাঁদের অভিনয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা সাভারে। সাভার উপজেলার যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও মা দল অভিনয় করার জন্য ডাক পায়। ২০১৪ সন থেকে প্রতি বছরই ধরেন্ডা তরুণ সংঘ কর্তৃক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মা দল পুরস্কৃত হচ্ছে।
দলটিতে রয়েছে মূলত কমলাপুরের বৌ-শ্বাশুড়িরা। অভিনয়ের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে দু-একজন ছেলেও অভিনয় করে বলে জানিয়েছেন প্রিয়াংকা গমেজ। তিনি বলেন, ‘আমরা নাটকে বেশির ভাগ মায়ের ভূমিকা তুলে ধরি। মা কীভাবে পরিবারে অবহেলিত হয়, মা অসুস্থ হলে সন্তানেরা চিকিৎসা করে না, যত্ন নেয় না, মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া হয়, মা কীভাবে না খেয়ে মারা যায়, ছোট নাতিন ঠাকুমাকে চুরি করে খাবার দেয় যেন মা না দেখে ফেলে- এই সব অভিনয়ের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরি।’
‘মা দলের অভিনয় শেষে বেশির ভাগ সময়ই দর্শকরা জোরে হাততালি দেন। ভালো প্রতিক্রিয়া জানান দর্শকেরা। ধরেন্ডা ধর্মপল্লীতে যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাদের মা দলকে নাটক বা ফ্যাশন শো করার জন্য অনুরোধ করে। আমরা আমাদের সেরাটা পরিবেশন করি,’ বলেন শিক্ষিকা প্রিয়াংকা।
তিনি জানান, তাঁরা জানতে পেরেছেন, মা দলের অভিনয় দেখে অনেক সন্তান তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। মাকে আর অবহেলা করেন না, কষ্ট দেন না। মাকে অবহেলার পরিবর্তে সন্তানরা মাকে কাছে টেনে নেন। অভিনয়ে এটাই তাদের কাছে বড়ো পুরস্কার।
ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত আলবাট রোজারিও মা দলের প্রশংসা করেন। তিনি ডিসিনিউজকে বলেন, ‘মা দল এত সুন্দরভাবে শিক্ষণীয় বিষয় তুলে ধরেন যা সবার হৃদয় স্পর্শ করে। তারা খুব ভালোকাজ করে যাচ্ছেন। তাদের আরো সাফল্য কামনা করি।’
ফাদার আলবাট জানান যে, তাঁদের ধর্মপল্লীতে নারীদের তিনটি সংঘ রয়েছে। তার মধ্য রয়েছে (১) জপমালা সংঘ, এই দলে রয়েছেন বয়স্ক নারী। (২) মনিকা সংঘ, এই দলে রয়েছেন মধ্য বয়স্ক নারী এবং (৩) পুষ্প সংঘ, এই দলে রয়েছেন যুবতী নারী। এই তিন সংঘের সদস্যরাই ধর্মপল্লীর যেকোনো কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন।
২০ নভেম্বর মা দলের প্রদর্শিত ফ্যাশন শো’র অভিনয়ের ভিডিও যা হাজারো দর্শকের হৃদয় ছোঁয়ে যায়: