ঢাকা ,
বার : সোমবার
তারিখ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা দেশ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত খ্রিষ্টান ব্যক্তিকে যেভাবে কবরস্থ করা হবে

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত খ্রিষ্টান ব্যক্তিকে যেভাবে কবরস্থ করা হবে

0
7233

সুমন কোড়াইয়া || ঢাকা
দিন দিন দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ৪ মে পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮২ জন। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দশ হাজার। এখনো পর্যন্ত কোনো খ্রিষ্টভক্ত মারা যাননি। তবে বেশ কয়েকজন খ্রিষ্টভক্ত আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সুস্থও হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে করোনায় খ্রিষ্টভক্তরা মারা গেলে তাদের মৃতদেহ কীভাবে কবরস্থ করা হবে এই বিষয়ে সরকার নির্দেশনা তৈরি করেছে। খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নির্মল রোজারিও ডিসিনিউজকে বলেন, ‘সরকার করোনায় কোনো খ্রিষ্টভক্ত আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাঁর মরদেহ কীভাবে কবরস্থ করা হবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা তা খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ফেসবুক পেইজ ও ওয়েব সাইটে আপলোড দিয়েছি। এ ছাড়া বিভিন্ন চার্চের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছি।’
শুধু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি নন, আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তাই এই রোগে মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার করা বা ধোয়া যাবে না, নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া ছোঁয়াও যাবে না কোনো ভাবে। সরকারী নিদের্শনায় এই সব বিষয়গুলো উল্লেখ করা আছে।
নির্দেশনায় আরো রয়েছে, ফাদার বা পালকসহ পাঁচ সদস্যের একটি দল সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক পরে মৃতদেহ সৎকারের জন্য প্রস্তুত করবে। মৃত্যুর স্থানেই মৃতদেহ প্লাস্টিকের কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হবে। একজন দলনেতা থাকবেন। তিনি মৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের নির্দিষ্ট কোনো অনুরোধ থাকলে তা জেনে নেবেন। কোথায় কবর দেওয়া হবে, সেটিও ঠিক করে রাখতে হবে।
নির্দেশনায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে মরদেহ গোসল করানো যাবে না। আর পরিবারের পক্ষ থেকে কাফনের কাপড়ের জন্য অনুরোধ থাকলে সেলাইবিহীন সাদা সুতির কাপড় কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কাফনের কাপড় প্লাস্টিকের ব্যাগে রেখে তার ওপর মরদেহ রাখতে হবে এবং দ্রুত ব্যাগের জিপার বন্ধ করতে হবে। ব্যাগে কাফনের কাপড় দেওয়ার সময় যারা মরদেহ উঁচু করে ধরবেন, তাঁদের অবশ্যই সুরক্ষা পোশাক পরে থাকতে হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, মৃতদেহ সৎকারের জন্য মৃতদেহের সব ছিদ্রপথ (নাক, কান, পায়ুপথ ইত্যাদি) তুলা দিয়ে ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে, যাতে কোনো তরল গড়িয়ে না পড়ে। এরপর সংক্ষিপ্ত রুটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মৃতদেহ সমাধিস্থলে নিয়ে যেতে হবে।
মৃতদেহকে নূনতম স্পর্শের মাধ্যমে সকল প্রকার দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত কেউ মারা গেলে তাঁর মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা যাবে না।
মৃতদেহ দাফনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি দল থাকবে। মৃতদেহ বহন করার জন্য চার জন থাকবেন। তারা সকলে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পোশাক আগে থেকেই পরে থাকবেন।
করোনা রোগীর মরদেহ স্পর্শ না করে পবিত্র পানি মৃতদেহের ওপর ছিটিদে দেয়া, মৃতদেহের সম্মুখে যিশুর পবিত্র বাণী পাঠ ও মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগে যিশুর পবিত্র বাণী সংবলিত কাগজ রাখা ইত্যাদি আচার পালন করা যেতে পারে। পুরো পক্রিয়াটি সাধারণ নিয়মের একটি রূপক স্বরূপ।
মৃতদেহ সৎকার কাজে একজন ফাদার বা পালক সাথে থাকবেন। তিনি ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করবেন। তবে কোনোভাবেই তিনি মরদেহ স্পর্শ করবেন না।
এর আগে মৃতদেহকে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে ব্যাগে ঢুকানোর পর কফিনের ভিতর রেখে কফিন বন্ধ করে দিতে হবে। পরিবারের শুধুমাত্র স্বল্প সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে ফাদার/পালক মৃতদেহের সামনে যিশুর পবিত্র বাণী পাঠ, আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনা পরিচালনা করবেন এবং পবিত্র পানি ছিটিয়ে দিতে পারেন কিন্তু কোনোভাবেই মৃতদেহটি সরাসরি স্পর্শ করা যাবে না।
পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সম্পর্কে বলা হয়েছে, যাত্রাকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মৃতদেহটি দাফন পরিচালনাকারী দলের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়িতে দুটি অংশ থাকতে হবে, যাতে চালক ও পরিবহন কামরার মধ্যে প্রতিরক্ষামূলক কাচ বা প্লাস্টিকের আবরণ থাকে। পরিবহনের পর ব্যবহৃত বাহনটি জীবাণুুমুক্ত করে নিতে হবে। এ সময় জীবাণুুমুক্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরতে হবে। দাফনের সময় মৃতদেহ বহনকারী ব্যাগটি কখনোই খোলা যাবে না।
দাফনের পর কবর বা সমাধিস্থানটি ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার গভীর মাটির স্তর দিয়ে ঢাকার পাশাপাশি দাফন করা স্থানের আশপাশ উপযুক্ত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারও করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তি যে স্থানে মারা গেছেন, সেই স্থানটিও যত দ্রুত সম্ভব জীবাণুমুক্ত করা এবং মৃতদেহ দাফনের পর সেই স্থান ভালোভাবে ঘিরে রাখতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, করোনায় সন্দেহভাজন কারও মৃত্যু হলেও সমান সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এসে মৃত ব্যক্তির মুখের লালার নমুনা নিয়ে নিশ্চিত করবেন যে মৃত ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না।
সম্প্রতি করোনা রোগী মারা গেলে কীভাবে কবরস্থ করা হবে সাভার সেনানিবাসে এই সংক্রান্ত এক কর্মশালায় অংশ নেন সাভারের ধরেন্ডা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত আলবার্ট রোজারিও। তিনি ডিসিনিউজকে বলেন, সরকার দেওয়া নির্দেশনা মেনেই তবে করোনা আক্রান্তদের যার যার ধর্মীয় অনুসাওে নিকটতম কবরস্থানে মৃতদেহ সৎকারের কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ মারা গেলে তিন ফিট গভীরে কবর খোড়া হয় কিন্তু করোনা রোগীর ক্ষেত্রে গর্ত খোড়তে হবে ছয় ফিট।
ফাদার আলবার্ট আরো বলেন, ‘আমাদের কর্মশালায় বলা হয়েছে, দেশের যেকোনো স্থানে খ্রিষ্টভক্তরা করোনায় আক্রান্ত হলে তা স্থানীয় থানা নির্বাহীকে জানাতে হবে। তারা সৎকারের বিশেষ সুরক্ষা পোশাক সরবরাহ করবেন। তবে একজন ধর্মযাজক সেখানে থাকতে হবে। যারা সৎকার কাজে থাকবেন, ফাদার বা পালকসহ সকলকে সুরক্ষা পোশাক অবশ্যই পরিধান করতে হবে।’
তিনি উল্লেখ করেন রোম থেকে, করোনায় মারা গেলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য একটি প্রার্থনা তৈরি করে পাঠিয়েছে। তা বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং সকল ফাদারদের তা দেওয়া হয়েছে, মরদেহ সমাধিস্থ করার সময় সেই প্রার্থনা করতে হবে।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, করোনায় কেউ মারা গেলে থানা, উপজেল এমনকি সেনাবাহিনী- যে কারো কাছে সাহায্য চাইলে তারা সাহায্য করবে বলে আমাদের কর্মশালায় বলা হয়েছে।
খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নির্মল রোজারিও জানান, খ্রিষ্টভক্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে হলে জরুরী প্রয়োজনে এই নম্বরে যোগাযোগ করতে: জনাব মোঃ সাইলফুল্লাহিম আজম, যুগ্মসচিব, হেলথ সার্ভিস বিভাগ। মোবাইল +৮৮০১৭১২০৮০৯৮৩, নির্মল রোজারিও, সেক্রেটারি, খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মোবাইল: +৮৮০১৭১৫০৩০৯৮৯।
প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো খ্রিষ্টভক্ত মারা গেলে এবং লাশ দাফনে আর্থিক সংকট থাকলে, সেই ক্ষেত্রে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা প্রদান করা হবে। তবে খরচের বিল-ভাউচার ট্রাস্ট বরাবর দাখিল করতে হবে।