শিরোনাম :
করোনার মহামারিতে গৃহে কেন অন্তরীন থাকবো!
|| রাফায়েল পালমা ||
করোনা থেকে রক্ষার একমাত্র কৌশল
বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপে ২ লক্ষের অধিক মানুষের মৃত্যু বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। মাথা ব্যথার কারণ হয়েছে বিশ্বনেতাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার অংশ হিসেবে বিশ্ববাসী আজ গৃহে অন্তরী বা হোম কোয়ারিন্টাইনে রয়েছে। সচেতন মানুষ অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে কোনোভাবেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে সকল সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে, তা ছাড়াও নিজেদের তীক্ষ্ন জ্ঞান ব্যবহার করে আমরা প্রত্যেকে নিজেদের সুরক্ষা করতে পারি। করোনাভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সে সম্বন্ধে আশা করি আমরা সবাই ইতিমধ্যে জেনেছি। সেই জানা থেকেই আমাদের প্রত্যেককে সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে আমরা বেঁচে যেতে পারি।’
করোনা বিস্তারের পরপরই যে সকল দেশ অতি গুরুত্বের সাথে এর প্রতিরোধের সর্বাত্মক সকর্তকতা অবলম্বন করেছে, তারা শতভাগ নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছে। ভিয়েতনামে একজন মানুষও করোনায় মৃত্যুবরণ করেনি। এমন আরো দেশ রয়েছে যেগুলো অতিরিক্ত সচেতনতার ফলে নিজেদেরকে শতভাগ রক্ষা করতে পেরেছে। তবে আমরা কী জানতে চেষ্টা করেছি কীভাবে তারা এমন বিশ্ব দুর্যোগে সফল হয়েছে?
বর্তমান মহামারিতে আমার জীবন রক্ষা বা বিনাশ আমার হাতেই রয়েছে। গৃহে অন্তরীন থাকার পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় অনুসরণ করেই আমি এককভাবে ও পারিবারিকভাবে সবাইকে রক্ষা করতে পারি। তারই কিছু কুটিনাকি নিয়েই এই লেখার অবতারণা।
সরকারি নির্দেশনা ও সতর্কতার সাথে নিজের ব্যক্তিগত সচেতনতা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। আমি গৃহে অন্তরীন থেকেও সপ্তাহে হয়তোবা একবার বাইরে যেতে পারি বাজার করার জন্য। ছোট খাটে প্রয়োজনে না গেলেই ভাল। গেলে নিজেকে শতভাগ প্রটেকশনে রেখেই যেতে হবে। মাস্ক, গ্লোভস ব্যবহার তো অবশ্যই করতেই হবে।
যতদূর সম্ভব ভাংতি টাকা নিয়ে গেলেই বেশি নিরাপদ। যা ক্রয় করবো তার দাম পুরোটাই আমরা পকেট থেকে দোকানদারকে দিয়ে দিতে পারলে দোকানদারের কাছ থেকে আর কোনো পয়সা আমার পকেটে আসতে পারবে না। এতে আমি, বলা যায়, শতভাগ নিরাপদ থাকবো। কেননা, টাকা-পয়সা এমন পদার্থ যা শতশত মানুষের হাতবদল হয়ে আসে। তাতে কারো না কোরো মাধ্যমে ভাইরাসটি আমার কাছে আসতে পারে; আমি সংক্রমিত হতে পারি। সুতরাং এমন সম্ভাবনার পথ আমাকেই রুদ্ধ করতে হবে।
অনেক লোকের মারফৎ নানা পণ্য গ্রাম থেকে শহরে আসে। কৃষক থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে শ্রমিকেরা ট্রাকে করে এসব পণ্য বহন করে আনে শহরে গৃহে অন্তরীন থাকা মানুষের জন্য। এখন শহরের বাজারে গিয়ে আমার অজান্তেই বাজারের ব্যগ, পলিথিন ইত্যাদি থেকে আমি বহন করতে পারি এই ভাইরাস। তাই আমাকে গ্লাবস ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। পুনরায় যদি গ্লাবস ব্যবহারযোগ্য হয়, তবে তা ধোয়ার পাশাপাশি নিয়মমতো হাত ধুতে হবে সাবান দিয়ে। বাজার থেকে ফিরে সব পোশাকসহ নিজেকে সম্পূর্ণ জীবানুমুক্ত করতে হবে। কাপড় ধোয়া ও স্নান করার মাধ্যমেই তা করতে হবে।
বাজার থেকে ঘরে ফিরে কলিংবেলের বোতাম টিপে ঘরে ঢুকি। পর্যায়ক্রমে দরজায় বাইরের ও ভিতরের হাতল স্পর্শ করি। এসব প্রতিটি অংশ যেমন কলিংবেলের বোতাম, দরজার হাতল সেনিজাইজার দ্বারা জীবানুমুক্ত করতে হবে।
আমরা যারা গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে গুহে অন্তরীন রয়েছি, তাদের মধ্যে অনেকে বড় বড় এপার্টমেন্টে থাকি। এপার্টমেন্টে ১০-৫০টি পরিবার একটি সমাজবদ্ধ হয়ে থাকি। আমার পাশের ফ্লাটে যে পরিবারটি থাকে তাদের মনে করি তারা আমার মতোই নিরাপদে আছে ও পরিক্ষিতভাবে ভাইরাসমুক্ত। তবে তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ ও বাসার যাতাযাত, আলাপ-আলোচনা ও আড্ডা দিতে অসুবিধা কোথায়! কিন্তু না; যেকোনো যোগাযোগ, একসাথে ওঠাবসা ও আড্ডা দেওয়া চলবে না। ওই ফ্ল্যাটের কেউ কেউ হয়তো আমার মতো দু-একবার বাজারে গিয়ে ভাইরাসটি বহন করেছেন, আমি তা জানি না।
দীর্ঘ সময় বাসায় অন্তরীন থেকে আমরা হয়তো হাফিয়ে ওঠেছি। তাই মনে হতে পারে বাসার কাছে ওই গলিতে চায়ের দোকানে এককাপ চা খেয়ে আসি। চায়ের কাপ তো গরম পানি দিয়েই পরিষ্কার করছে- আমার তো আর ভয় নেই। কিন্তু যে নেকরা দিয়ে কাপটি মুছে দিল তার মধ্যে হয়তো ভাইরাস থাকতে পারে। তাতেই আমি সংক্রমিত হতে পারি। আমি সংক্রমিত হয়ে গেলে এক সপ্তাহের মধ্যে তো আমি লক্ষণ বুঝতে পারবনা না; এরই মধ্যে আমার পরিবারের সবাই সংক্রমণের শিকার হয়ে য়েতে পারে।
আমি হয়তো অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ব্যাংকে গেলাম। কোনো কারণে স্বাক্ষর করার সময় মনে হলো ও্হ আমি তো কলম আনিনি। পাশের কারো কাছ থেকে কলম নিয়ে চেকে সই দিয়ে টাকা ওঠালাম। এতেও আমি সংক্রমণের শিকার হতে পারি।
সুতরাং গৃহে অন্তরীন থাকার সাথে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে ও পর্যায়ে অতি সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে হবে। ভাইরাস চোখে দখা যায় না। এই সর্বনাশা আততায়ীসম ভাইরাস নানাভাবেই আমাদের আক্রমণ করতে পারে। এর থাবা থেকে মুক্তির যত সম্ভাব্য উপায় আছে, আমাদের তাই করতে হবে এবং অন্যদের সচেতন করাতে হবে। এসব আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব!