ঢাকা ,
বার : রবিবার
তারিখ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলা : ৮ পৌষ ১৪৩১
Dcnewsbd Facebook
Dcnewsbd Twitter

শিরোনাম :

প্রথম পাতা সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় করোনায় মানবিকতার বিপর্যয়: বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা

করোনায় মানবিকতার বিপর্যয়: বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা

0
1265

রবীন ভাবুক || ঢাকা
বর্তমান করোনা মহামারির প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা শহরে বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এই শহরের অসংখ্য মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখি হওয়ার কারণে ঢাকায় মানুষের কিছুটা চাপ কমছে। এ ছাড়াও করোনার কারণে বেশির ভাগ মানুষ বেশি প্রয়োজন না হলে রাস্তায় বের হন না।
কর্মব্যস্ততা শেষে সবাই ঘরে থাকতেই এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তাই ব্যস্ত রাস্তা ও অলিগলি নির্দিষ্ট সময়ের পর ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। মানুষের আনাগোনা না থাকায় তখনই সক্রিয় হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের দুষ্ট চক্র।
ছিন্তাইয়ের কাহিনি নিজের মুখেই বলেছেন ছিনতাইয়ের শিকার একজন ভুক্তভোগী : (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
আমি মিরপুর ২ নম্বর থাকি। প্রতিদিনের মতো ৮ জুলাই আমি হাঁটতে বের হই। তখন আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই বললেই চলে। আমি হেঁটে যাচ্ছি এমন সময় একটি ছাই রঙের সিএনজি এসে আমার পাশে থামল।
সিএনজির এক যাত্রী এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে একটা কাগজ বের করে আমার কাছে ঠিকানা জানতে চায়। আমিও তাকে সহযোগিতার জন্য কাগজটি দেখতে যাই, এমন সময় অরেকজন এসে আমার মুখে কি যেন চেপে ধরে। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। দুই দিন পর যখন জ্ঞান ফেরে, তখন আমি বাসার বিছানায় শোয়া। শুয়ে শুয়ে আগের দিনের সন্ধ্যার ঘটনাটা ভাবার চেষ্টা করি। তেমন কিছু মনে করতেও পারছিলাম না।
শুধু মনে পড়ে একটি সিএনজি এসে আমাকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করে। সিএনজিতে চালক বাদে আরো দু’জন যাত্রী ছিল। সকলেই মুখে মাক্স পড়া। তাই চেহারা চেনা সম্ভব নয়। আমি বাসায় কীভাবে এসেছি, তা-ও ঠিক করে মনে করতে পারছি না। শুধু হাল্কাভাবে মনে পড়ে, রাস্তার পাশে পড়ে ছিলাম, কেউ এসে আমার বাসার ঠিকানা জানতে চাইলো, আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম কমিশনারের বাসায় থাকি।
যেহেতু আমি কমিশনারের বাসায় থাকি, তাই হয়তো পথচারী বা কেউ সহজেই আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পেরেছে। ছিনতাইকারীরা আমার পকেটে থাকা চার হাজার টাকা, হাতের আঙ্গুলে বিয়ের আংটি, ওয়ালেট, মোবাইল, আইডিকার্ডসহ সবকিছুই হাতিয়ে নিয়ে যায়। আমার জ্ঞান ফেরার পরও শরীরটা ঝিম মেরে ছিল। চেতন-অচেতনের মাঝে কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করছিলাম।
ভুক্তভোগী আরো জানান, আসলে করোনার কারণে ঢাকায় মানুষের চাপ কমে যাওয়া ও সবাই বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকায় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকায় ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমার এক কলিগের শ্যালকও একইভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হয় এবং বিকাশের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান। কিছুদিন আগে ফার্মগেট আলরাজী হাসপাতালের সামনে থেকেও একই ঘটনা ঘটে। যেহেতু এই মরামারিতে সবার অর্থনৈতিক অবস্থাই খারাপ, কেউ কেউ চাকরিচ্যূত; এইসব কারণেই অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে দুষ্টচরিত্রের যুবকেরা। তা ছাড়া যারা ছিনতাইকারী, তারাও বেশি করে এই অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে।
তাই পুলিশ প্রশাসনের নিকট আবেদন থাকবে তাঁরা যেন তাঁদের টহল বাড়িয়ে দেন। বিশেষ করে যেসব এলাকা ও গলিতে মানুষের আনাগোনা কম। অন্যান্যদের প্রতিও অনুরোধ থাকবে, আপনারা যতটা সম্ভব রাস্তায় কম বের হবেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। আর যদি বেরও হন, তাহলে যথাসম্ভব দুজন বা তিনজন এক সাথে বের হবেন। করোনাকালীন সময়ে এমনিতেও ঘরের বাইরে কম যাওয়াই ভাল। যতটুকু সম্ভব ঘরেই থাকুন।
পরিসংখ্যান বলছে, করোনাকালে ছিনতাই কিছুটা বাড়লেও কমেছে অন্যান্য অপরাধ। রাজধানীর ৫০টি থানায় গত তিন মাসে মামলার সংখ্যা কমেছে ৮৩ শতাংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ১৩১টি ও মার্চে ২ হাজার ৫৫টি মামলা হয় । লকডাউনের পর এপ্রিলে ৩৪৯ আর চলতি মাসে (১৭ তারিখ পর্যন্ত) মামলার সংখ্যা ৪ শর মতো। কিন্তু পুলিশ বলছে, করোনা মহামারীর কারণে রাজধানী ফাঁকা থাকায়, বেড়েছে ছিনতাইয়ের প্রবণতা। ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে বিভিন্ন পন্থা অনুসরণ করে ছিনতাই শুরু করেছে নতুনভাবে। মাস্ক পরার বিষয়টি ছিন্তাইকারীদের জন্য প্লাস পয়েন্ট।
রাস্তায় একা পেয়ে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ঝগড়ার সৃষ্টি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আবার কাউকে একা পেলেই ছিনতাইকারীরা হামলা চালায়। প্রাইভেটকার, সিএনজি, মোটর সাইকেলে এসে শুনশান এলাকায় কাউকে পেলে তাঁকে অজ্ঞান করে বা যেকোনোভাবেই ছিনতাই করে অর্থ-সোনাদানা-মোবাইল ফোন নিয়ে যাচ্ছে। আবার কাউকে কাউকে গাড়িতে বা সিএনজিতে তুলে নিয়ে বন্দি করে মুক্তিপন আদায় করছে।
আরো অভিনব পন্থা হলো, প্রাইভেটকারে এসে কেউ কেউ গাড়িতে বসেই দোকানের কাছে কোল্ড ড্রিংক্স বা সিগারেট চেয়ে ১ হাজার টাকার নোটের কথা বলে ভাংতির নামে বাকি টাকা নিয়ে কোনো কিছু না বলেই গাড়ি স্পীডে চালিয়ে চলে যাচ্ছে। এ রকম আরো অসংখ্য অভিনব পন্থায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পিপিই পরে চিকিৎসক অথবা পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে ডাকাতির অভিযোগও আছে অনেক।
সামনে আসছে কোরবানীর ঈদ। এ সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা আরো বাড়বে বলে অনেকের ধারণা। সাধারণ সময়েও এমনিতেই ঈদকে ঘিরে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ে। এবার আরো বেশি বাড়ার সম্ভাবনা বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। এই বিষয়ে সবাইকেই সাবধানতার সাথে চলাফেরার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
-০-