শিরোনাম :
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের করণীয়
|| নির্মল রোজারিও || ঢাকা
কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্বকে আক্রান্ত করেছে। দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক বিপর্যয় বা মহামারীরূপে। প্লেগ, স্প্যানিশ ফ্লু, কলেরা মহামারীর পর আধুনিক বিশ্ব অভিজ্ঞতা লাভ করছে বিপর্যকর এই পরিস্থিতির। কীভাবে কার দ্বারা বা কাদের দ্বারা এই বিপর্যয়ের সূচনা তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা, সমালোচনা। তার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি বা আদৌ কোনদিন জানা যাবে কিনা তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা তো হয়েই গেছে বা হবেই। বিশ্বের ২১০টি দেশ ও এলাকার ২০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। এই রোগে ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করছে ১ লাখ ৩৮ হাজারের অধিক লোক। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১,৫৭২ জন, মৃত্যুবরণ করেছে ৬০জন।
এর ভয়াবহতা তো আমরা বুঝতে পারছি যখন সারা পৃথিবী ব্যাপী চলছে লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থা। স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা সব কিছু আজ স্থবির। বলতে গেলে অনেকটা ‘ভার্চুয়াল’ জগতে বাস করছি আমরা। এই স্থবিরতা বিশ্বকে আজ অচল করে দিয়েছে, আর এই অচল অবস্থাকে সচল করা এত সহজ হবে না। যদি আগামী তিন মাসের মধ্যেও পরিস্থিতির স্বভাবিকতা ফিরে আসে তবুও যে ক্ষতি বিশ্ব ব্যাপী হয়ে যাবে তার প্রভাব কমপক্ষে আগামী পাঁচ বছর ব্যাপী চলবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে যদি সময় আরও বেশি লাগে, তবে পরিস্থিতি তো আরো বেশি ভয়ানক হবে। আর ক্ষতি কেবল অর্থনীতিতেই হবে না; সারা বৈশ্বিক ব্যবস্থায়ই এর প্রভাব পড়বে। মানুষের চিন্তার জগত ও আচরণেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। সেটা হয়েছিল অতীতের মহামারীর পরেও। সে পরিবর্তন হবে ইতিবাচক ও নেচিবাচক দুটোই। বিশ্ব সভ্যতার সামনে এক নতুন প্রশ্ন দেখা দিবে বড় করে। বিশ্ব নেতৃত্বকে নতুনভাবে ভাবতে হবে- প্রতিযোগিতা বড় হবে- না মানব কল্যাণ, মানব সভ্যতা।
এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয়:
– সরকার ঘোষিত লকডাউন পুরোপুরি মেনে চলা; সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। নিজে নিরাপদ থাকা এবং পরিবারকে নিরাপদে রাখা।
– যারা অবস্থাশীল ব্যক্তি রয়েছেন তাঁদের উচিত হবে অস্বচ্ছল প্রতিবেশী এবং নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকে সাধ্যমত সাহায্য করা; তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে।
– সামাজিক সংগঠন, সংস্থাগুলোকে নিরাপত্তা বজায় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে হলেও অস্বচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে প্রচারণার চেয়ে প্রকৃত কাজটাই এখন মুখ্য।
– সমবায় সমিতি ও ক্রেডিট ইউনিয়নগুলোকে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি শুনেছি কিছু কিছু ক্রিডিট ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই তাদের অস্বচ্ছল সদস্য-সদস্যাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেছে। অনেক ক্রেডিট ইউনিয়র পরিকল্পনা করেছে এবং সাহায্য প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চার্চ ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য সামাজিক সংগঠন অসচ্ছল মানুষদের জন্য কাজ করছে। ঢাকা ক্রেডিট ইউনিয়ন, হাউজিং সোসাইটি, বহুমুখী সমবায় সমিতি, কাককো লি: এই দুর্যোগে কাজ করছে এবং আগামী দিনে বড় পরিসরে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও আমাদের সমবায় সমিতিগুলোকে স্বল্প, মাধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
– সদস্য-সদস্যাদের জন্য তাৎক্ষনিক সহায়তা কর্মসূচী।
– সদস্য-সদস্যাদের আরও মিতব্যয়া হতে পরামর্শ দেয়া। তারা যেন তাদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন সেজন্য উদ্ধুদ্ধ করা। অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করেন।
– গ্রাম অঞ্চলের সমিতিগুলোর সদস্য-সদস্যাদের তাদের পতিত জমিতে ধান, শাক-সব্জি, ফলফলাদির গাছ রোপণে উৎসাহিত করা। প্রয়োজনে তাদের বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করা। বীজ ও সার দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। কিচেন গার্ডেনিং এ উদ্ধুদ্ধ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দেয়া।
– জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেয়া; পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা।
– ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্যোগ বা মহামারী মোকাবেলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
– সর্বোপরি সরকারের পক্ষ থেকে যে সকল কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে যে দিকে লক্ষ্য রাখা এবং আমাদের সমাজের মানুষ যাতে তা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করা। এ বিষয়ে আমি বিশেষভাবে বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের দেশের ভিতরে এবং বাইরে সকল শাখা ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, কাককো লি: এবং সকল সদস্য সমিতির নেতৃবৃন্দ, সমবায় সমিতিসমূহের সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষ অনুরোধ এবং আহ্বান জানাচ্ছি।
পরিশেষে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের এই মহামারী থেকে রক্ষা করনে এবং আমাদের মার্জনা করেন। সকলে নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনা করিছি।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন