শিরোনাম :
করোনা রুখতে যেভাবে বাড়াবেন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা
প্রাণঘাতী করোনাভারাসের মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। এ ভাইরাসে গত এক দিনে মারা যাওয়া ১০১ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ১০ হাজার ২৮৩ জনের মৃত্যু হয়। আর নতুন রোগীদের নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাত লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জন হয়েছে। তবে শরীরের শক্তিশালী ইমিউনিটি এই ভাইরাস প্রতিরোধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে।
করোনার প্রদুর্ভাব রোধে যখন প্রায় পুরো পৃথিবীজুড়ে লকডাউন তখন এটাই হতে পারে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধির সঠিক সময়। এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এই সময়।
সম্প্রতি এক টুইট ভিডিও’র মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রস আধানম ঘেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘পার্থক্যটা আসলে গড়ে দেয় সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি আর ইমিউনিটি। তাই লকডাউনের সময় গতবাঁধা জীবনকে শৃঙ্খলায় বাঁধুন, বিশ্রাম নিন, আর পর্যাপ্ত সুষম পুষ্টিকর খাবার ও পানি পান করুন। এতেই সংক্রমণটাকে অনেকাংশে ঠেকিয়ে দিতে পারবেন।’
কীভাবে দ্রুত ইমিউনিটি বৃদ্ধি করা সম্ভব :
এ বিষয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘কাজটা খুব শক্ত নয়। তা ছাড়া ইমিনউনিটি ব্যাপারটাও অনেক সময়েই অস্থায়ী। ঠান্ডা-গরমেও অনেক সময়ে আমাদের ইমিউনিটি কমে যায়। শরীরে একটা স্বাভাবিক ইমিউনিটি রক্ষা করতে গেলে ঠিকঠাক জীবনযাত্রা খুব জরুরি। ভিটামিন সি এবং জিঙ্কযুক্ত মাল্টি-ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে। যদিও ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের চেয়েও জরুরি সুন্দর একটা ডায়েট।’
একই কথা বলেন ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ আলোকগোপাল ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘কখন কে করোনায় আক্রান্ত হবো, সে কথা ভেবে লাভ কি! ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাকের সংক্রমণ যে কারো হতে পারে যখন-তখন। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ইমিউনিটি ভালো থাকলে এর ধাক্কাটা সহজেই সামলে নেয়া সম্ভব।’
এজন্য তিনি পরামর্শ দেন, লকডাউনের সময়ে বাড়ি বসে মন খারাপ না করে বরং প্রচুর বিশ্রামের পাশাপাশি সাধারণ কিছু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পানি আর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
এতো প্রোটিন কোথায় :
এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ দৃপ্তা রায়চৌধুরী বলেন, ‘প্রোটিন মানে তো শুধু মাছ-মাংস-ডিম নয়। যদিও এই সব প্রাণিজ প্রোটিন গুণগত দিক থেকে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু বিকল্প হিসেবে তো দুধ, দই, ছানাও খাওয়া যেতে পারে। ডাল, মটর, ছোলা, কাবলিচানা, সয়াবিনের মতো উদ্ভিজ প্রোটিনও তো আছে। দানাশস্যের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে এগুলো থাকলে তা প্রতিদিনের প্রোটিন চাহিদা মেটায় সুন্দর ভাবে। সব মিলিয়ে এগুলোয় এসেন্সিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলি সম্পূরক ভাবে আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু ভাত বা রুটি নয়, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ছাতু, ডালিয়া, সুজি, সাবু, চিড়া, ওটস ইত্যাদিও খাওয়া দরকার। ডায়েটে এ সময়ে নোনতা, মিষ্টিজাতীয় এবং ভাজা খাবার কমিয়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার বাড়িয়ে দিলে এবং প্রতিদিনের খাবারে শাকসবজি ও ফল রাখলে ইমিউনিটি বাড়তে বাধ্য।’
এজন্য তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমলকি বা পাতিলেবুর মতো টক ফলে তো ভিটামিন সি আছেই। পেয়ারা, পেঁপে, কমলালেবু, মুসম্বি কিংবা আনারসে তা আরো বেশি আছে পরিমাণে। ভিটামিন সি’তে ভরপুর এই ফলগুলো নিয়মিত খাওয়া দরকার। কারণ এগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে দারুণ কাজ দেয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে।’
নিউট্রিশনিস্ট এবং মুম্বই আইআইটি’র সেন্টার ফর টেকনোলজি অল্টারনেটিভস ফর রুরাল এরিয়াজের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো দৃপ্তা বলেন, ‘পুষ্টি শুধু সুষম খাবারেই নয়, সার্বিক জীবনযাত্রাতেও নিহিত। তাই শুয়ে-বসে দিন না কাটানো, বাড়ির ছাদ, বারান্দা কিংবা উঠোনের মতো খোলা জায়গায় একটু হাঁটাহাঁটি বা সিড়ি ভাঙা, একটানা বেশিক্ষণ বসে না থাকা, প্রতি দুই-তিন ঘণ্টা অন্তর অল্প পরিমাণে খাওয়া এবং খাওয়া ও শোয়ার মধ্যে এক-দেড় ঘণ্টার ব্যবধান ভালো ডায়েটিংয়ের জন্য খুব জরুরি। তবেই শক্তপোক্ত হয় ইমিউনিটি।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা আজ আছে, কাল থাকবে না। কিন্তু নিজের ইমিউনিটিকে এখন শক্তিশালী করে নিলে তা থেকে যাবে স্থায়ী আমানতের মতোই।’