শিরোনাম :
কারিতাস বাংলাদেশের ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের সমাপনী অনুষ্ঠান উদযাপন
ডিসিনিউজ ডেক্স ।। ঢাকা
কারিতাস বাংলাদেশ উদযাপন করলো জাতীয় পর্যায়ে ৫০ বছরের সুর্বণজয়ন্তী উৎসব।
১২ নভেম্বর, ‘কারিতাস বাংলাদেশ: ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথ চলা’ মূলসুর নিয়ে রাজধানী ঢাকার নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে এই উৎসবের আয়োজন করে।
জুবিলি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকার আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই। বিশেষ অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আশরাফ আলী খান খসরু এমপি ও কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও সিএসসি।
সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে জুবিলি অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর জাতীয় পতাকা ও কারিতাস পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উন্মুক্তকরণ, স্টল উদ্বোধন, জুবিলি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, অতিথিদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান, কারিতাস পদক প্রদান, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী ও বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে কারিতাসের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও বলেন, ‘শুরুতেই আমি কৃতজ্ঞতাপূর্ণ হৃদয়ে স্মরণ করছি সেই সকল মহৎপ্রাণ ব্যক্তিদের যাদের হাত ধরে ৫০ বছর আগে কারিতাস বাংলাদেশের ভালবাসা ও সেবার যাত্রা শুরু হয়েছিল, যাদের সুযোগ্য নেতৃত্বে কারিতাসের সেবা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে এবং সমাজের মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়েছে এবং বছরব্যাপী উদযাপনেও যারা সর্বদা নির্দেশনা দান করেছেন।’
এছাড়াও অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব জুয়েল আরেং এমপি, জনাব আরমা দত্ত, জনাব গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, ভাতিকান দূতাবাসের চার্চ দি এফেয়ার্স মন্সিনিয়র মারিনকো এন্তলোভিক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক নিতাই চন্দ্র দে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক তপন কুমার বিশ্বাস, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি রিচার্ড স্লোমান, ক্যাফড, মিজ জ্যাকুলিন ডি’ বরগোয়িং, মার্ক ডি’ সিলভা, জনাব রাশেদা কে. চৌধুরী, কারিতাসের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ব্রাদার লরেন্স ডায়েস সিএসসি, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও, কারিতাস এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. বেনেডিক্ট আলো ডি’রোজারিওসহ আরো।
প্রধান অতিথি ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, “কারিতাস মানে ভালোবাসা। এ ভালবাসা মানবতার জন্য যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য। একাত্তরের যুদ্ধের পর দেশ গঠনে কারিতাসের ভূমিকা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ দারিদ্র বিমোচনে অসাধারণ অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ আর এখন পরনির্ভরশীল নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকে কারিতাসের সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠান আমার খবুই ভালো লাগছে। কারিতাস শুধু আর্থ-সামাজিকভাবে কাজ করে নাই কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নেও কাজ করেছে। কারিতাস একটি সফল এনজিও। আমি কারিতাসকে অভিনন্দন জানাই। কারিতাস বাংলাদেশের সকল দাতাবন্ধুদের ধন্যবাদ জানাই।’
সম্মানিত অতিথি আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ ওএমআই বলেন, ‘কারিতাস বাংলাদেশ তার নিজস্ব দর্শন অজর্নের লক্ষে বাস্তবে কাজ করে যাচ্ছে। গোটা মানুষের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা, ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে কারিতাস তার কাজ ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।’
প্রায় দুই হাজার মানুষের অংশগ্রহণে কারিতাস বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর জাতীয় পর্যায়ের সমাপনী অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে এক মিলনমেলা। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের সকল কাথলিক বিশপগণ, কারিতাস বাংলাদেশের সাধারণ ও নির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্থানীয় ও আর্ন্তজাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি, রাষ্ট্রদূত, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, জনসংগঠন নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সমাজের নেতৃবৃন্দসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ৩টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কারিতাসের কার্যক্রমের উপর বাস্তবায়িত ৩টি গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। তৃতীয় পর্বে কারিতাস কর্মীদের পরিবেশনায় দেশের উন্নয়নে কারিতাসের অবদান তুলে ধরা হয় সাংস্কৃৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
কারিতাস বাংলাদেশ বাংলাদেশ কাথলিক বিশপ সম্মিলনীর একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা অফিস হিসেবে কারিতাসের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ নভেম্বর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় এলাকার জনসাধারণের সাহায্যার্থে চট্টগ্রাম ধর্মপ্রদেশে Chittagong Organization for Relief and Development (CORD) নামে সংস্থাটি গঠিত হয় এবং আরও কিছুদিন পরে সংস্থাটি Christian Organization for Relief and Rehabilitation (CORR) নামে কার্যক্রম শুরু করে। জানুয়ারি ১৩, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে এটি একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় এবং ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই সদ্য স্বাধীন দেশের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন লাভ করে এবং একটি জাতীয় সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকার শান্তিবাগে রয়েছে কারিতাসের প্রধান কার্যালয়। এছাড়া অঞ্চলভিত্তিক কার্যালয়গুলো হচ্ছে- বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী এবং সিলেট। এসব অফিসের মাধ্যমে দেশের ৫৩ জেলার ১৮৭টি উপজেলায় কারিতাস কাজ করছে। কারিতাসের বর্তমান প্রকল্প সংখ্যা ১১২টি, ট্রাস্ট রয়েছে তিনটি এবং সুফলভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ।