শিরোনাম :
কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও কে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান ও বড়দিন উৎসব পালন
মহা-আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের বরপুত্র ও প্রথম বাঙালি কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি কে ২২ ডিসেম্বর বিকাল ৩ টায় ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
বড়দিন ২০১৬ উদ্যাপন ও মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও’র নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারি বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ-এর সভাপতিত্বে বিকাল ৩ টায় মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ফাদার কমল কোড়াইয়ার নেতৃত্বে কার্ডিনালের জীবনী নিয়ে নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র “বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনালঃ ঈশ্বরের ভালবাসার উপহার” প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ফাদার প্যাট্রিক শিমন গমেজ সার্বজনীন প্রার্থনা পরিচালনা করেন।
স্বাগত বক্তব্যে দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান আগষ্টিন পিউরীফিকেশন বলেন, কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও-এর কার্ডিনাল পদ প্রাপ্তি বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছে। সোসাইটির পক্ষ থেকে তাঁকে অভিনন্দন জানায়।
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:-এর প্রেসিডেন্ট বাবু মার্কুজ গমেজ বলেন, বাঙালি জাতির মধ্য থেকে একজন বাংলাদেশী কার্ডিনাল হওয়ায় বাংলাদেশ গর্বিত হয়েছে। আন্ত:ধর্মীয় ও ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব ড: প্রনব কুমার বড়–য়া বলেন, বর্তমান এই অস্থির পৃথিবীতে দরকার শান্তির বাণী। কার্ডিনাল সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রেম ও ভালোবাসার প্রতীক কার্ডিনাল প্যাট্রিক। এই বিশাল অর্জনের জন্য তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ মহারাজ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ সকলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও তাঁর দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। তিনি সম্প্রীতিপূর্ণ শান্তি রক্ষা করে চলেছেন। বিশ্বাস করি তাঁর এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউস বলেন, এক সময় বাংলাদেশ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতো। আজ একের পর এক স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। দেশের নেতৃত্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন প্রয়োজন।
ময়মনসিংহ-১ আসনের এমপি জুয়েল আরেং বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন এ দেশে আমরা একজন কার্ডিনাল পেয়েছি। যা বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিওকে অভিনন্দন ও বাংলাদেশ খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মানব ধর্মের চেয়ে বড় ধর্ম পৃথিবীতে আর নেই।
বড়দিন ২০১৬ ও নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও বলেন, কার্ডিনাল প্যাট্রিক সারা বিশ্বে বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছেন। সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। সংখ্যালঘুদের নানা দাবি পূরণের জন্য তিনি সদা আন্তরিক ও সচেষ্ট।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের রোল মডেল। পোপ ফ্রান্সিস আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’রোজারিও কে কার্ডিনাল করে গোটা বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা দেখেছি, মানবতাবোধ দেখেছি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা সকলে ধর্মের নামে সংকীর্ণতাকে বাদ দিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে চলতে চায়। পরে তিনি খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানান।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সকলকে আসন্ন বড়দিন ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মানব সেবায় যার যার অবস্থানে থেকে অবদান রাখার জন্য সকলের নিকট আহ্বান জানান।
কার্ডিনাল প্যাট্রিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ৮ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য আমাকে সময় দিয়েছিলেন। আমি যখন সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য গিয়েছি তখন তিনি হাসিমুখে আমাকে বরণ করে নিয়েছেন। আবার আজ আমাদের ভালোবেসে, আমাদের ডাকে এখানে উপস্থিত হয়েছেন এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের বন্ধু, অভিভাবক। তিনি সংলাপে আমাদের সহযোগিতা করেছেন, এখনও করছেন। সব ধর্মের মধ্যে ঐক্য আছে। ধর্মমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সব ধর্মের সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, কার্ডিনাল মনোনীত হওয়াতে আমি অবাক ও অভিভূত হয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। অন্তরে খুবই ন¤্রতা অনুভব করছি। আমার জীবনে এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা একটা উপহার। বড়দিনের মাধ্যমে ঈশ্বর মর্তে নেমে এসেছিলেন। তাই বড়দিন হচ্ছে আমাদের জন্য আনন্দ সমাচার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনেক অর্জনের মধ্যে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কার্ডিনাল হওয়ার আরেকটি অর্জন যোগ হলো। এর মধ্য দিয়ে চার্চ-সরকারের মধ্যে নতুন সম্পর্ক শুরু হলো। আমরা সকলে একে অপরের সহকর্মী ও সহযোগি। কার্ডিনাল হওয়ার এই অর্জন ও আনন্দের ভাগিদার আমরা সবাই।
‘ধর্মকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করলে আসলে ধর্মকেই প্রকৃতপক্ষে খাটো করা হয়, মানুষের কাছে ছোট করা হয়, হেয় করা হয়; কিন্তু আমাদের দায়িত্ব যার যার ধর্মকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী কার্ডিনাল মনোনীত হওয়া আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’ রোজারিওকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্বে খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’ রোজারিও সিএসসিকে কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেছেন। এই প্রথম আমরা এ পদে একজন বাঙালিকে পেলাম। সারা বিশ্বে মাত্র ১২০ জন কার্ডিনাল পোপ হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন, আবার পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। সেই ভোটদানের অধিকারটা আজকে একজন বাঙালি পেয়েছেন।’ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর পক্ষ থেকে সমগ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান।
এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য প্রদান করেন, কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক অতুল ফ্রান্সিস সরকার ও হলি ক্রস কলেজের অধ্যক্ষ সিস্টার শিখা গমেজ, সিএসসি।
কার্ডিনালের নাগরিক সংবর্ধনা উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ এবং কার্ডিনালের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। এরপর বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী ও কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি’রোজারিও, সিএসসি। সব শেষে সভাপতি বিশপ শরৎ ফ্রান্সিস গমেজ সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তিতাস ভিনসেন্ট রোজারিও ও ফ্লোরেন্স ডি’ক্রুজ।
আরবি/এনএম/আরপি/ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬