শিরোনাম :
কালীগঞ্জের সবুজ হত্যাকারী সন্দেহভাজন শাহীন গ্রেপ্তার; বিসিএ’র শাস্তি দাবি
ডিসিনিউজ ।। কালীগঞ্জ
কালীগঞ্জের অ্যাপারেলস গার্মেন্টস কর্মী সবুজ বার্নার্ড গোছাল হত্যার তিনদিন পর ধরা পড়েছে সন্দেহভাজন হত্যাকারী শাহীন। সাতক্ষীরা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা যায়।
ডিসিনিউজের কালীগঞ্জ প্রতিবেদক সুবীর ডি’ক্রুজ জানান, ‘শাহীন নামে একজনকে পিবিআই সাতক্ষীরা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। তার সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। তবে, শাহীনের স্ত্রী’র দেওয়া তথ্য অনুসারে মোবাইল নম্বর ট্রাকিং করে পিবিআই শাহীনকে গ্রেপ্তার করেছে। অ্যাপারেল গার্মেন্টস’র কর্মীদের বরাতে জানা যায়, ছয় মাস আগে শাহীনকে গার্মেন্টস থেকে চাকরিচ্যূত করা হয় এবং একই পদে সবুজ চাকরিতে যোগদান করেন। শাহীনকে ধরার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।
অপর দিকে গতকাল বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের (বিসিএ) প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও সবুজ গোছালের বাড়ি ও এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নির্মল রোজারিও সবুজ হত্যার নৃশংসতার নিন্দা জানান। প্রথম দিকে সবুজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে পুলিশ নিতে রাজি হয়নি কেন, এই বিষয়ে নির্মল রোজারিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশের এই অবহেলার নিন্দা জানান। পরিদর্শনকালে তিনি সবুজের হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান এবং হত্যাকারীর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজ পথে আন্দোলন চলবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে সহাবস্থান নিয়ে সকল ধর্মের মানুষ বাস করি। সবুজ হত্যা কখনোই কাম্য নয়। এর বিচার প্রশাসনকে করতেই হবে। প্রশাসনের নিকট থেকে আমরা কোনো অবহেলা চাই না। আশা করি প্রশাসন এই বিষয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।’
সবুজ হত্যার বিচার দাবি করেছেন ঢাকা ক্রেডিটের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য পংকজ গিলবার্ট কস্তা এবং ঢাকা ক্রেডিটের সেক্রেটারি ও বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ইগ্নাসিওস হেমন্ত কোড়াইয়া। তারা সবুজ হত্যায় যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সেই সাথে এমন জঘণ্য হত্যার ঘটনা যেন আর না ঘটে প্রশাসনের নিকট সেই আহ্বানও জানান।
অন্যদিকে কালীগঞ্জে সবুজ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় জনগণ। ৩ অক্টোবর নাগরী, মঠবাড়ীসহ আশেপাশের লোকজন বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। স্থানীয় উপজেলা প্রতিনিধিসহ কালীগঞ্জের বাংলাদেশ খ্রীষ্টান এসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখা সংগঠন, ছাত্র ও যুব সংগঠন এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধনে অংশ নেয়। এর পাশাপাশি অ্যাপারেলস গার্মেন্টস এজিএমসহ সবুজের সহকর্মীরাও এতে অংশ নেয়। বিক্ষোভ সমাবেশে তারা সবুজ হত্যার সাথে জড়িতের বিচারের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দাবি করেন যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন জঘণ্য অপরাধ না করে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১ অক্টোবর) কালীগঞ্জের পানজোরায় অ্যাপারেল লিমিটেড গার্মেন্টস’র পাশে বেলা ১১টার দিকে সবুজ বার্নার্ড গোসালের (৩০) ৭ টুকরা লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। গার্মেন্টস’র পাশের ডোবায় মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। পরে তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থল যায় পুলিশ। এ সময় ওই এলাকার জঙ্গল ও আশপাশের এলাকা খোঁজে মাথা, হাত, হাঁটু, কোমরসহ ওই যুবকের লাশের সাতটি টুকরা উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন রাত পর্যন্ত পুলিশ লাশের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। পরের দিন সবুজের আত্মীয় স্বজন লাশ সনাক্ত করেন।
তারার জানান, চারদিন ধরে সবুজ নিখোঁজ ছিল। পুলিশের খবরে তারা গিয়ে সবুজের লাশ সনাক্ত করেন। সবুজ পানজোড়া এলাকায় অ্যাপারেলস পোশাক কারখানার মাননিয়ন্ত্রণ বিভাগে কাজ করতেন। গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে পোশাক কারখানা থেকে বের হয়ে আর কারখানায় বা তাঁর বাড়ি ফেরেননি। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।